ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

গাজায় সহায়তা কেন্দ্রে ৫ সপ্তাহে মৃত্যু ৬০০: ক্ষুধাই যেন নীরব ঘাতক

প্রকাশিত: ২২:১০, ২ জুলাই ২০২৫

গাজায় সহায়তা কেন্দ্রে ৫ সপ্তাহে মৃত্যু ৬০০: ক্ষুধাই যেন নীরব ঘাতক

সংগৃহীত

গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তার শেষ আশ্রয়স্থলগুলো এখন পরিণত হয়েছে নীরব গণকবরে। গত পাঁচ সপ্তাহে ৬০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন খাদ্য সংকট ও অপুষ্টিজনিত কারণে, যা ঘটেছে গ্লোবাল হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF) পরিচালিত সহায়তা কেন্দ্রগুলোতেই।

একদিকে যুদ্ধ, অন্যদিকে অবরোধ  আর এই দুইয়ের মাঝে আটকে থাকা লাখো মানুষ প্রতিদিন লড়ছে একটি রুটির জন্য, এক ফোঁটা পানির জন্য। কিন্তু সহায়তা লাইনের শেষ প্রান্তে আজকাল কেবল মৃত্যু।

"আমরা খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, আর দেখছিলাম আমাদের সন্তানরা কীভাবে মারা যাচ্ছে"গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৯ বছর বয়সী ওয়াফা আল-তাল কোলে তাঁর ২ বছরের মৃত শিশুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন।

“ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম এক ব্যাগ আটার আশায়,” কাঁপা কণ্ঠে বললেন তিনি। “কিন্তু আমরা দেখেছি, কীভাবে মানুষ একে একে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কেউ আর উঠেনি।”

তাঁর কন্যা মালাকও মারা গেছে অপেক্ষারত অবস্থায়। সেই লাইনে, যেখানে খাদ্যের আশায় জড়ো হয়েছিল শত শত ক্ষুধার্ত মানুষ।

GHF এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাত্র ৩৫ দিনের মধ্যে গাজার বিভিন্ন সহায়তা কেন্দ্রে ৬০০ জনের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ  যারা ইতিমধ্যে দীর্ঘদিনের অবরোধে দুর্বল হয়ে পড়েছিল।

GHF এর এক কর্মী বলেন, “মানুষ আমাদের সহায়তা কেন্দ্রে আসে বাঁচার আশায়। কিন্তু এখন সেই জায়গাগুলোতেই আমরা প্রতিদিন মৃত্যু দেখছি।”

তাঁরা আরও জানান, খাদ্য মজুদ প্রায় শূন্য, সীমান্ত দিয়ে সহায়তা প্রবেশ বন্ধ, এবং ভিড় এতটাই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে যে মাঝে মাঝে পদদলিত হয়েও মানুষ মারা যাচ্ছে।

ইসরায়েলি অবরোধ, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং অনবরত হামলার কারণে খাদ্য সরবরাহ প্রায় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই গাজায় “সম্পূর্ণ দুর্ভিক্ষ” এর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।অল্প কিছু সাহায্য আসে, তাও ধ্বংস হয়ে যায় পথেই অথবা আটকে থাকে চেকপোস্টে।

নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল ইয়ান এগেলান্ড বলেন:“এটি কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফল নয়। এটি মানবসৃষ্ট দুর্যোগ  রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, নিষ্ক্রিয়তা ও নিষ্ঠুরতার ফল।”

গাজার ২৩ লাখ মানুষ প্রতিদিন একবেলা খাবার ও নিরাপদ পানির জন্য লড়ছে। বোমার শব্দের চেয়েও এখন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে ক্ষুধা আর নীরব মৃত্যু। রাফাহর এক বাসিন্দা বলছিলেন:“আগে আমরা মরতাম বোমায়, এখন মরছি রুটি খুঁজতে গিয়ে।”

গাজার ধ্বংসস্তূপে শুধু ভবন নয়, ভেঙে পড়েছে মানবতার বোধ। এক মুঠো খাবারের জন্য যখন শিশুরা মারা যায়, তখন তা আর শুধু রাজনৈতিক সংকট থাকে না তা হয়ে ওঠে মানবতার চরম লজ্জা। এই মৃত্যু শুধু ক্ষুধার নয়, এই মৃত্যু আমাদের নীরবতার, উদাসীনতার, আর রাজনৈতিক স্বার্থের।

হ্যাপী

×