
তিব্বতি বৌদ্ধদের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা তাঁর উত্তরসূরি থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন, যা তাঁর ৯০তম জন্মদিনের আগেই এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই ঘোষণাটি তিব্বতের ভবিষ্যৎ নিয়ে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনকে নতুন করে তীব্র করে তুলেছে।
বুধবার ভারতের ধারমশালায় অনুষ্ঠিত ১৫তম তিব্বতি ধর্মীয় সম্মেলনে এক ভিডিও বার্তায় দালাই লামা বলেন,
“আমি নিশ্চিত করছি যে, দালাই লামার প্রতিষ্ঠানে উত্তরসূরি থাকবে।”
তিনি আরও জানান, ভবিষ্যৎ দালাই লামার পুনর্জন্ম শনাক্ত করার পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকবে গাদেন ফোদরাং ট্রাস্ট-এর হাতে। অন্য কেউ এই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে না বলে তিনি স্পষ্ট করে দেন। যদিও কীভাবে উত্তরসূরি নির্ধারণ করা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
চীনের প্রতিক্রিয়া ও দ্বৈত দালাই লামার আশঙ্কা
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দালাই লামার এই ঘোষণার পর পুনর্ব্যক্ত করেছে তাদের দীর্ঘদিনের অবস্থান—দালাই লামার পুনর্জন্ম প্রক্রিয়া চীনা আইন অনুযায়ী চীনের ভূখণ্ডেই সম্পন্ন হতে হবে এবং তা অনুমোদন দেবে কেবলমাত্র বেইজিং।
এই অবস্থান ইতোমধ্যে আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে যে, ভবিষ্যতে দুইজন দালাই লামা দেখা যেতে পারে—একজন তিব্বতিদের বিশ্বাস অনুযায়ী নির্বাচিত, আর অন্যজন চীনের সরকার দ্বারা নিযুক্ত।
দালাই লামা নিজেও তাঁর সদ্য প্রকাশিত আত্মজীবনী Voice for the Voiceless-এ লিখেছেন,
“আমার উত্তরসূরি হবে ‘মুক্ত বিশ্বে’—চীনের বাইরে। যারা চীনের মনোনীত দালাই লামাকে গ্রহণ করবে না, তাদের পক্ষেই সত্যিকার উত্তরসূরি কাজ করবেন।”
ধর্মীয় ঐতিহ্য বনাম রাষ্ট্রক্ষমতার লড়াই
তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস করা হয়, একজন মহান আধ্যাত্মিক গুরু মৃত্যুর পর তাঁর প্রজ্ঞা ও প্রার্থনার শক্তিতে পুনর্জন্ম নিতে পারেন। কিন্তু এ ধর্মীয় ঐতিহ্য আজ পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারে—বিশেষ করে ১৯৯৫ সালে বিতর্কিত পদ্ধতিতে পাঞ্চেন লামা নির্বাচন নিয়ে বিতর্কের পর থেকে।
চীন ১৯৯৫ সালে নিজেরা একজন পাঞ্চেন লামা নিযুক্ত করেছিল, যেখানে দালাই লামার নির্বাচিত ছয় বছর বয়সী পাঞ্চেন লামা আজও নিখোঁজ।
এ অবস্থায় দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচনকে ঘিরে সারা বিশ্বের তিব্বতি বৌদ্ধ সম্প্রদায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
তিব্বতিরা কী বলছে?
ধারমশালার সম্মেলনে অংশ নেওয়া ধর্মীয় নেতারা একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন,
“পুনর্জন্ম ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে চীন—এ আমরা দৃঢ়ভাবে নিন্দা করি এবং এ ধরনের হস্তক্ষেপ কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।”
তাঁরা আরও বলেন, ভবিষ্যৎ দালাই লামা নির্বাচন হবে শুধু ধর্মীয় ঐতিহ্য অনুসারে এবং তা নিয়ে কোনও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না।
প্রেক্ষাপট:
১৯৫৯ সালে তিব্বতে চীনা শাসনের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহের পর দালাই লামা ভারতে আশ্রয় নেন এবং ধারমশালায় নির্বাসিত সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই তিনি বিশ্বমঞ্চে তিব্বতের আত্মপরিচয় ও ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে এক অগ্রণী কণ্ঠস্বর।
তিনি স্বাধীনতা নয়, বরং "অর্থবহ স্বায়ত্তশাসন" চেয়ে আসছেন, যার মাধ্যমে তিব্বতিরা তাঁদের ধর্ম ও সংস্কৃতি রক্ষা করতে পারবে।
Jahan