
ছবি: সংগৃহীত
চীনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখা দেশগুলোর ওপর ৫০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের পথে হাঁটছেন তিনি। এতে সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে পড়তে পারে ভারত ও চীন।
সম্প্রতি মার্কিন সিনেটে একটি বিল অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে—যেসব দেশ রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখবে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের ওপর ৫০০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বিল অনুমোদনের সায় দিয়েছেন এবং সিনেটে ইতিমধ্যেই ৮৪ জন সদস্য বিলটি সমর্থন করেছেন। বিলটি আগামী আগস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এমন কঠোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে ভারতের অর্থনীতিতে। ভারতের শেয়ারবাজারেও এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ সর্বকালের সর্বোচ্চ ৬৮.৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। মহামারির পূর্বে এ পরিমাণ ছিল মাত্র ১০.১ বিলিয়ন ডলার। মূলত রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল, সার ও কয়লা আমদানির মাধ্যমে এই বাণিজ্য বেড়েছে, যার বিপরীতে ভারত রপ্তানি করেছে ওষুধ, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য ইত্যাদি।
দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত করতে ভারত ও রাশিয়া ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত সেই লক্ষ্য অর্জনে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আপনি যদি রাশিয়া থেকে পণ্য কিনেন এবং ইউক্রেনকে সহায়তা না করেন, তাহলে আপনার পণ্যের ওপর ৫০০% শুল্ক বসানো হবে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, ভারত ও চীন রাশিয়ার ৭০% তেল কিনে পুতিনের যুদ্ধযন্ত্রকে সচল রাখছে।
২০২৪ সালে ভারত যুক্তরাষ্ট্রে ৭৭.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে—টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, রত্ন ও গহনা, টেলিকম যন্ত্রপাতি এবং পেট্রোলিয়াম পণ্য। শুধু ২০২৫ সালের এপ্রিল-মে মাসেই ভারতের ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের রপ্তানি ১০.৪% বৃদ্ধি পেয়ে ৩.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক কার্যকর হলে এসব পণ্য রপ্তানিতে বড় ধাক্কা লাগতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে ভারতের জন্য ‘যুক্তরাষ্ট্র না রাশিয়া’—এমন একটি পক্ষ বেছে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
রাশিয়ার উপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ভারত রুবল-রুপিতে গোপনে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি এস-৪০০ প্রতিরক্ষা চুক্তির মতো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ট্রাম্পের এই প্রস্তাবিত শুল্কনীতি যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তা শুধু ভারতের জন্য নয়, বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থার জন্যই একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। একদিকে রাশিয়ার সঙ্গে গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের বড় বাজার—এই দুই মেরুর টানাপোড়েনে ভারতের সামনে কূটনৈতিকভাবে ভারসাম্য রক্ষা করাই হবে সবচেয়ে কঠিন কাজ।
ছামিয়া