
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিমান সংস্থা কোয়ান্টাস এয়ারলাইন হ্যাকারদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার (৩০ জুন) এক ভয়াবহ সাইবার হামলার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির একটি কাস্টমার সার্ভিস প্ল্যাটফর্মে অনুপ্রবেশ করে হ্যাকাররা। এতে ৬০ লাখ যাত্রীর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) এক বিবৃতিতে কোয়ান্টাস জানায়, হ্যাকাররা যে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করেছে সেটি একটি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। ওই প্ল্যাটফর্মে গ্রাহকদের নাম, ইমেইল ঠিকানা, ফোন নম্বর, জন্ম তারিখ এবং ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ার নম্বরের মতো তথ্য সংরক্ষিত ছিল।
তবে সংস্থাটি নিশ্চিত করেছে, সেখানে গ্রাহকের ক্রেডিট কার্ড তথ্য, পাসপোর্ট নম্বর বা আর্থিক বিবরণ ছিল না।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, অস্বাভাবিক কার্যকলাপ শনাক্ত করার পর দ্রুত সিস্টেমটি সুরক্ষিত করা হয়েছে এবং বর্তমানে সমস্ত কার্যক্রম নিরাপদ রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ঠিক কতটা তথ্য ফাঁস হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ফাঁস হওয়া তথ্যের পরিমাণ “উল্লেখযোগ্য”।
এ বিষয়ে কোয়ান্টাসের সিইও ভানেসা হাডসন বলেন, “আমরা আমাদের গ্রাহকদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। তাদের ব্যক্তিগত তথ্য আমাদের কাছে নিরাপদ থাকবে—এমনটাই প্রত্যাশা করে তারা। গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করাই এখন আমাদের অগ্রাধিকার।”
ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়ান সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার, ফেডারেল পুলিশ এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যৌথভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে।
ঘটনার পরপরই কোয়ান্টাসের শেয়ারের দাম ৩.৫ শতাংশ কমে যায়, যেখানে বাজারের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ০.৪ শতাংশ—বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ছে সাইবার হামলা: অতীতেও বড় হামলার নজির
এই ঘটনা নতুন নয়। গত কয়েক বছরে অস্ট্রেলিয়া একের পর এক বড় সাইবার হামলার শিকার হয়েছে।
২০১৯ সালে জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দলগুলোর ওপর চালানো হয় সাইবার হামলা।
২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম শীর্ষ মিডিয়া প্রতিষ্ঠান নাইন নিউজ হ্যাকড হয়, যা দেশটির মিডিয়া ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাইবার হামলা হিসেবে বিবেচিত হয়।
এরপর ২০২২ সালে রাশিয়ান সাইবার অপরাধীরা চালায় আরেকটি ভয়ঙ্কর র্যানসমওয়্যার হামলা, যার শিকার হয় স্বাস্থ্য বীমা প্রতিষ্ঠান মেডিব্যাঙ্ক। সেই হামলায় ৯৭ লাখ গ্রাহকের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত স্পর্শকাতর তথ্য চুরি হয়, যার অনেকাংশ পরে ছড়িয়ে পড়ে ডার্ক ওয়েবে।
এই ঘটনায় রাশিয়ার এক নাগরিকের নাম প্রকাশ করে অস্ট্রেলিয়া সরকার, এবং তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়। ওই ব্যক্তি রেভিল নামক berüchtigt (কুখ্যাত) র্যানসমওয়্যার গ্যাংয়ের সদস্য বলে ধারণা করা হয়।
অতীতে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানেও হামলা চালিয়েছে এই গ্যাং।
মিমিয়া