
ছবিঃ সংগৃহীত
ইরানের জনগণের উদ্দেশে বিদ্রোহের আহ্বান জানালেন ইসরাইলের কট্টর প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া একটি পোস্টে তিনি ইরানের ইসলামি শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনতার ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
নেতানিয়াহু বলেন, “গেল কয়েক দশক ধরে যে অশুভ ও নিপীড়ক শাসকগোষ্ঠী আমাদের ঘাড়ে চেপে বসে আছে, তাদের নামানোর এখনই সময়। আপনারা আপনাদের পতাকা ও ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারের ছায়াতলে আসুন। নিপীড়নবাদী শাসন থেকে মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হন। যে সুযোগ আপনাদের সামনে এসেছে, তাকে গ্রহণ করুন।”
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইসরাইলের উদ্বেগ পুরনো হলেও নেতানিয়াহুর প্রকৃত লক্ষ্য ইরানের ইসলামি শাসনের পতন। ধারণা করা হচ্ছে, ইরান-ইসরাইল উত্তেজনার মধ্যে এই সাম্প্রতিক হামলাগুলো মূলত ইরানি শাসন কাঠামোকে দুর্বল করার জন্যই চালানো হচ্ছে।
নেতানিয়াহু বলেন, “আমাদের অভিযান ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে নয়। বরং আমরা আঘাত হেনেছি সেই কট্টর ইসলামি শাসনের ওপর, যারা অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে, নারীদের অধিকার হরণ করেছে এবং সংখ্যালঘুদের দমন করে আসছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, ইসরাইলের সামরিক অভিযানে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC)-এর প্রধান, শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাসহ অন্তত ২০ জনকে নিশানা করে হত্যা করা হয়েছে। এই অপারেশন ইরানের ভেতর বড় ধরনের অস্থিরতা ও বিভ্রান্তি তৈরি করেছে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
তবে ইরানে যদি শাসনব্যবস্থার পতন ঘটে, তাহলে এর পরিণতি কী হবে বা কে নেতৃত্ব নেবে—এ প্রশ্ন এখনো অনিশ্চিত।
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির বিশ্লেষক মাইকেল সিং মনে করেন, “ইসরাইল এই সামরিক পদক্ষেপের পেছনে একটি কৌশলগত লক্ষ্য দেখছে—ইরানে শাসন পরিবর্তন। তারা চায়, ইরানের জনগণ জেগে উঠুক এবং শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াক।”
তবে বাস্তবতা হলো, ইরানের জনগণ আদৌ এক ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ হবে কিনা, সেটা স্পষ্ট নয়। ২০২২ সালে ‘উইমেন, লাইফ, ফ্রিডম’ আন্দোলনের সময় ব্যাপক বিক্ষোভ হলেও তা কঠোরভাবে দমন করে সরকার। তখন নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে বহু নারী ও শিশুর প্রাণহানি ঘটে। যদিও আন্দোলনে বাইডেন প্রশাসনের নৈতিক সমর্থন ছিল, কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নেতানিয়াহুর এই ‘বিদ্রোহের ডাক’ মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, ইরানের জনগণ কীভাবে এই আহ্বানে সাড়া দেয়।
ইমরান