ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

ঢাকা-রোম নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি

বৈধপথে আরও কর্মী নিতে আগ্রহী ইতালি

কূটনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৫, ৬ মে ২০২৫

বৈধপথে আরও কর্মী নিতে আগ্রহী ইতালি

লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও মাতেও পিয়ান্তেদোসি

বাংলাদেশ থেকে বৈধ পথে আরও বেশি হারে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী নিতে আগ্রহী ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার এবং নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছে বাংলাদেশ ইতালি।
উপদেষ্টা সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ইতালি ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা জানান। বৈঠকে ইতালির পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশে সফররত ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাতেও পিয়ান্তেদোসি।
উপদেষ্টা বলেন, ইতালির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে-বাংলাদেশের শ্রমিকরা খুব পরিশ্রমী ও দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্ব¡পূর্ণ অবদান রাখছে। দেশটি নতুন করে বৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহী। তবে অন্য দেশের ভিসা নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে যাওয়ার প্রবণতাকে তারা সম্পূর্ণরূপে নিরুৎসাহিত করেছে ইতালি। তিনি বলেন, ইতালি অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছে ও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি তারা নিরাপত্তা খাতেও সহায়তা বৃদ্ধি করার কথা জানিয়েছে। 
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে ইতোমধ্যে যে সব বাংলাদেশী অবৈধভাবে ইতালিতে গমন করেছেন, তাদের যেন উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় বৈধতা দেয়া হয়- সে বিষয়েও ইতালিকে অনুরোধ করা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব) বলেন, ইতালির পুলিশ মাফিয়া চক্রসহ সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ অপরাধ দমনে পারদর্শী। সেজন্য তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের প্রশিক্ষণ ও সামর্থ্য বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতে চায়। তিনি বলেন, বৈঠকে আমরা পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও কোস্টগার্ডের দক্ষতা ও সামর্থ্য বৃদ্ধিতে ইতালির সহায়তা কামনা করেছি।
বৈঠকে অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ; অভিবাসন সংত্রান্ত অপরাধ নেটওয়ার্ক দমনে বাংলাদেশ কর্তৃক গৃহীত নীতি ও কর্মপন্থা; অপরাধ দমন ও বিচার প্রক্রিয়ায় দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার এবং নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি প্রমুখ এবং ইতালির পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত এন্তোনিও এলেসান্দ্রু, ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিপ্লোম্যাটিক অ্যাডভাইজার মেক্রো ভিলানী ও ডেপুটি হেড অভ কেবিনেট সাবিনা ম্যাডারো, ইমিগ্রেশন ও বর্ডার পুলিশের সেন্ট্রোল ডিরেক্টর ক্লোডিও গেলজারেনো প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 
এর আগে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সচিবালয়ে পৌঁছলে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুদিনের সফরে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার বিকেলে ঢাকায় পৌঁছেন।
সরকারের দায়িত্বশীল আরেক কর্মকর্তা বলেন, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইতালিতে যাওয়ার প্রবণতা বাংলাদেশীদের মধ্যে প্রবল। ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে অনেক বাংলাদেশী মারাও যাচ্ছেন। সে কারণে বাংলাদেশ থেকে বৈধপথে ইতালি যাওয়ার জন্য দেশটির পক্ষ থেকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। ইতালির মন্ত্রী বৈধ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আমরা আশা করছি।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ইতালির নতুন অভিবাসন নীতির আওতায় প্রথমবারের মতো আলবেনিয়া হয়ে এক অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে দেশটি। অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ইতালির ক্ষমতায় আসেন জর্জা মেলোনির সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের আলবেনিয়ায় পাঠানোর নিয়ম চালু করেন তিনি। অবৈধ অভিবাসন নিয়ে ইতালির কঠোর অবস্থানের কথা সরকারের সংশ্লিষ্টদের তুলে ধরবেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। 
এ সমস্যার সমাধান অগ্রগতি এবং ইতালির মন্ত্রীর সফরে বিষয়টি তোলা হবে কিনা, জানতে চাইলে দায়িত্বশীল এক কূটনীতিক বলেন, ইতালিতে ৬০ হাজার কর্মী ভিসার জন্য আবেদন করেছে। যার বড় একটি অংশ জাল কাগজ নিয়ে আবেদন করা। যার জন্য এই জটিলতা তৈরি হয়েছে। ইতালির দিক থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে, তারা দূতাবাসে লোকবল বাড়িয়েছে। 
ইতালি যেতে আগ্রহী বাংলাদেশী কর্মীদের উদ্দেশে তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, আমার সহানুভূতি আছে যারা সাফার করছে। আমি নিশ্চিত তাদের মধ্যে অনেক সঠিক মানুষ আছে। কিন্তু যেটা হয়, সঠিকের সঙ্গে বেঠিক ঢুকে যায় তখন সবগুলো চেকআপ করতে হয়। আর এতে করে সঠিক যারা তাদের সাফার করতে হয়, সেটাই ঘটছে এখানে। এখন তারা যদি আন্দোলন করে তাহলে এর মাধ্যমে সমাধান হবে না। এই সমস্যার সমাধান ইতালিয়ানদের হাতে এবং আমরা তাদের অবিরাম চাপ দিয়ে যাচ্ছি।
এ ধরনের হামলা আর ছাড় দেওয়া হবে না ॥ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ভবিষ্যতে যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সোমবার (৫ মে) বিকেলে সচিবালয়ে বাংলাদেশ সফররত ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তে দোসির সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। 
সম্প্রতি গাজীপুরে হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ ধরনের ঘটনা যেন না হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গতকাল রাতে এ ঘটনায় ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার বা আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটানোর চেষ্টা করছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
জুলাই আন্দোলনে যারা সামনের সারিতে ছিল তাদের ওপর কিছুদিন পর পর হামলা হচ্ছে, এতে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটার সংখ্যা কমে আসছে। আস্তে আস্তে এটা কমে যাবে। যারা এ রকম দুই একটা ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভবিষ্যতে যদি কেউ করার চেষ্টা করে আমরা ঘটনা ঘটার আগেই যাতে ধরতে পারি- সেই ব্যবস্থা করবো।
উল্লেখ্য দুদিনের সফরে গতকাল সোমবার বিকেলে বাংলাদেশে সফরে আসেন ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সফরের প্রথধম দিন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সফরের দ্বিতীয় দিন আজ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

আরো পড়ুন  

×