ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের ঝুঁকি: মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো হারাতে পারে আয়ের অর্ধেকেরও বেশি

প্রকাশিত: ২০:২৩, ১৩ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২০:৩১, ১৩ মার্চ ২০২৫

নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের ঝুঁকি: মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো হারাতে পারে আয়ের অর্ধেকেরও বেশি

ছবি : জনকণ্ঠ

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের কারণে মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো আয়ের অর্ধেকেরও বেশি হারাতে পারে বলে সতর্ক করেছেন একজন বিশেষজ্ঞ। বিশেষ করে আধুনিক চিপ, সেমিকন্ডাক্টর এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল কোম্পানিগুলোর জন্য এই ঝুঁকি বেশি।

আইন বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আকরণ বিজান্দ্রান-এর সিনিয়র বিদেশি উপদেষ্টা হারাল্ড সিপেল বলেন, কোনো কোম্পানি যদি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে তা গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী, প্রযুক্তি এবং আর্থিক পরিষেবাগুলোর প্রবেশাধিকার হারানোর ঝুঁকি তৈরি করবে।

সিপেল জানান, তালিকাভুক্ত হলে আন্তর্জাতিক অংশীদার যেমন ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান এবং লজিস্টিক পরিষেবাদানকারীরা ওই কোম্পানির সঙ্গে লেনদেন করা বন্ধ করবে, যাতে তারা গৌণ নিষেধাজ্ঞার (secondary sanctions) আওতায় না পড়ে।

“এর ফলে শুধু বিদ্যমান ব্যবসা হারানোর ঝুঁকি নয়, ভবিষ্যতে নতুন ব্যবসায়িক সুযোগও হাতছাড়া হবে।”

তিনি বলেন, “প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স রপ্তানিকারকদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো প্রধান বিদেশি বাজারে প্রবেশের সুযোগ হারানো বিপর্যয়কর হতে পারে। কারণ বিকল্প বাজারে হয়তো চাহিদা কম থাকতে পারে বা লাভজনকতার হার কম থাকতে পারে।,” 

সিপেল এই মন্তব্য করেছেন সিঙ্গাপুরে এনভিডিয়া চিপ কেলেঙ্কারি নিয়ে, যা মালয়েশিয়ান কোম্পানিগুলোর জন্য একটি সতর্ক সংকেত বলে মনে করছেন তিনি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডেল এবং সুপারমাইক্রো থেকে সরবরাহকৃত সার্ভারে এনভিডিয়া চিপ স্থাপন করা হয়েছিল, যা পরে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্র এখন তদন্ত করছে যে, চীনা এআই প্রতিষ্ঠান ডিপসিক কি সত্যিই সিঙ্গাপুরে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে উন্নতমানের এনভিডিয়া সেমিকন্ডাক্টর কিনেছে কি না, যা ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের শামিল হবে।

তবে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী তেংকু জাফরুল আজিজ বলেছেন, সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়ায় এনভিডিয়া চিপ স্থানান্তরের বিষয়ে এখনও কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সিপেল বলেন, নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা শুধুমাত্র সমস্যার এক অংশ। অন্য অংশটি হলো, কীভাবে সেই তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া যায়, যাতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়।

“এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। এটি কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় নিতে পারে এবং সফলতার কোনো নিশ্চয়তা নেই।”


অনেক ক্ষেত্রে, মার্কিন নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে কোম্পানিগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ থাকে।

সিপেল আরও বলেন, মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো যদি কঠোর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ মেনে না চলে, তাহলে তারা রপ্তানি অনুমোদন হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে, যা ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

“রপ্তানি অনুমোদন হারানো মানে কোম্পানিটি তার পণ্য রপ্তানি করতে পারবে না এবং গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি উপাদান গ্রহণের সুযোগ হারাবে। এর ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া থমকে যেতে পারে।”

সিপেল বলেন, আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনের ওপর নির্ভরশীল কোম্পানিগুলোর জন্য কাঁচামাল, সফটওয়্যার এবং যন্ত্রাংশের অভাবে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, “এটি অর্থায়নের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ ব্যাংকগুলো এই ধরনের কোম্পানিকে উচ্চ ঝুঁকির প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করে ঋণ বা বাণিজ্য অর্থায়ন সীমিত করতে পারে।”

সিপেল মনে করেন, প্রযুক্তি বা উচ্চ-প্রযুক্তি উপাদান নিয়মিত রপ্তানি করা ব্যবসার জন্য মালয়েশিয়ান এবং মার্কিন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো বোঝা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

“সক্রিয়ভাবে নিয়ম মেনে চলা শুধু কোম্পানিগুলোকে জরিমানা থেকে রক্ষা করবে না, বরং এটি তাদের বিশ্ব বাজারে শক্তিশালী অবস্থান বজায় রাখতেও সহায়ক হবে।”

 

 

সূত্র: https://www.freemalaysiatoday.com/category/nation/2025/03/12/malaysian-firms-risk-losing-over-half-their-revenue-if-they-violate-us-restrictions/

মো. মহিউদ্দিন

×