ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১

খালিস্তান আন্দোলনে কীভাবে খুন হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪৬, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

খালিস্তান আন্দোলনে কীভাবে খুন হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী?

১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর ভারতের তৃতীয় এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করা হয়। তিনি প্রাণ হারান তার দুই দেহরক্ষী বিয়ন্ত সিং এবং সতবন্ত সিংয়ের হাতে।

 

দেশভাগের সময় ১৯৪৭ সালে পাঞ্জাব প্রদেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। সেখানকার শিখ ধর্মাবলম্বীদের দাবি ছিল নিজেদের স্বাধীন ভূখণ্ড। পাঞ্জাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও ভারতে সামগ্রিকভাবে শিখরা মাত্র দুই শতাংশ। তারা চেয়েছিলেন ভারতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া পাঞ্জাবের অংশটিতে স্বাধীন ও সার্বভৌম খালিস্তান রাষ্ট্র। এই দাবিতে গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে পাঞ্জাবে সহিংস আন্দোলন হয়।

স্বর্ণমন্দিরে অবস্থান নিয়ে থাকা খালিস্তান আন্দোলনের নেতা জারনাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালে ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ১৯৮৪ সালে সেনা অভিযান চালায় ভারত সরকার। ৩১ মে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশন কমান্ডার মেজর জেনারেল কুলদীপ এই অপারেশনে নেতৃত্ব দেন। সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা চার শতাধিক বলা হলেও খালিস্তানপন্থীদের দাবি, নিহতের সংখ্যা কয়েক হাজার হবে।

অপারেশন ব্লু স্টারের বদলা নিতে ও শিখদের অপমান এবং অপারেশন চলাকালীন স্বর্ণ মন্দিরের অপবিত্রতার অভিযোগে ওই বছরের ৩১ অক্টোবর একেবারে সামনে থেকে ইন্দিরা গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করে তার দুই শিখ দেহরক্ষী। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতে শিখবিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়। সরকারের হিসাব অনুযায়ী দাঙ্গায় দিল্লিতে প্রায় ২,৮০০ শিখ এবং দেশব্যাপী ৩,৩৫০ জন শিখকে হত্যা করা হয়।

সেদিন সকাল ৯টা ১০ নাগাদ ইন্দিরা গান্ধী নয়াদিল্লির সফদরজং রোডে তার সরকারি বাসভবন থেকে বেরিয়ে আসেন এবং আকবর রোডের পাশের বাংলোতে তার ব্যক্তিগত অফিসের দিকে রওনা হন। সঙ্গে ছিল কনস্টেবল নারায়ণ সিং এবং রামেশ্বর দয়াল। আরও ‍ছিলেন ব্যক্তিগত সচিব আর কে ধাওয়ান এবং গৃহকর্মী নাথুরাম-সহ একটি ছোট দল।

তিনি বাগানের পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর দীর্ঘদিনের সদস্য সাব-ইন্সপেক্টর বিয়ন্ত সিং এগিয়ে আসেন। কয়েক পা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন কনস্টেবল সতবন্ত সিং। ইন্দিরা গান্ধী দেখতে পান বিয়ন্ত সিং অভিবাদন করার জন্য যে হাত তুলেছেন, সেই হাতে একটি রিভলভার আছে।

বিয়ন্ত তাকে তিন ফুট দূর থেকে পেটে গুলি করে। এরপর সতবন্ত সিং ইন্দিরাকে ৩০ রাউন্ড স্টেন গানের ক্লিপ খালি করার আগে পয়েন্ট-ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে আরও চারটি গুলি চালায়। এই সময় ইন্দিরা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ইন্দিরা গান্ধীর কনস্টেবল দয়াল বন্দুকধারীদের লক্ষ্য করে গুলি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু, তার নিজের উরুতেই গুলি লাগে।

গুলি করার পর বিয়ন্ত সিং এবং সতবন্ত সিং উভয়েই তাদের অস্ত্র মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর দ্রুত নারায়ণ সিং এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত আইটিবিপি কমান্ডোরা ধরে ফেলে। ইন্দিরার মাটিতে লুটিয়ে পরা শরীরকে একটি সাদা অ্যাম্বাসেডর গাড়িতে চাপিয়ে এইমস হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। তার মাথা ছিল পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধীর কোলে। চার ঘন্টা দীর্ঘ অস্ত্রোপচারের পরে, চিকিৎসকরা ব্যর্থ হন। দুপুর ২টো ২৩ মিনিটে ইন্দিরা গান্ধীকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। হত্যার পরপরই হেফাজতে থাকা অবস্থায় বিয়ন্ত সিংকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এছাড়া কেহর সিং ও  সতবন্ত সিংকে পাঁচ বছর পর ফাঁসি দেওয়া হয়।

গত ১৯ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় একটি গুরুদুয়ারার বাইরে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে আততায়ীরা হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকারকে দায়ী করে হাউস অব কমন্সে বক্তব্য রাখেন জাস্টিন ট্রুডো। খালিস্তান আন্দোলনের নেতা নিজ্জার ও ভারতের 'মোস্ট ওয়ান্টেড' অপরাধীর তালিকায় ছিলেন। কয়েক বছর আগে পাঞ্জাবের জলন্ধরে থাকা তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ভারত।

এ বছরের এপ্রিলে শিখ নেতা অমৃত পাল সিংকে 'বিচ্ছিন্নতাবাদী' আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তার করে ভার‍ত। এর ফলে পাঞ্জাবে নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা তৈরি হয়। অমৃত খালিস্তানের দাবিকে পুনর্জীবন দিয়েছেন। জ্বালাময়ী বক্তৃতার মাধ্যমে তরুণদের দেখাচ্ছেন স্বাধীন খালিস্তানের স্বপ্ন।

এমএম

×