গত দুই সপ্তাহ ধরে লেবাননে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। ভয়াবহ হামলার ১৩ দিনের মাথায় লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করেছে দেশটি। যদিও লেবাননে স্থল হামলা প্রতিরোধের শক্ত জবাব দিয়েছে হিজবুল্লাহ। তারপরেও অতীতের ব্যর্থতা তাদের জন্য বড় শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সবশেষ ২০০৬ সালে লেবাননে প্রবেশ করেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। তবে সেবার মাসব্যাপী যুদ্ধে ইসরায়েলি সেনাদের কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হয়েছিল। ওই যুদ্ধে হিজবুল্লাহ ২০টি ইসরায়েলি ট্যাংক ধ্বংস করেছিল এবং ১২১ জন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছিল। পরে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল ইসরায়েলি সেনাদের।
উইনোগ্রাড কমিশন (লেবাননে সামরিক নিযুক্তির ঘটনাগুলোর তদন্তের কমিশন) সেই যুদ্ধে ইসরায়েলের ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ করে জানায়, ‘ইসরায়েল দীর্ঘ একটি যুদ্ধ শুরু করেছিল, যা পরিষ্কার সামরিক বিজয় ছাড়া শেষ হয়েছিল।’
প্রায় দুই দশক পর আবারও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে দক্ষিণ লেবাননে "সীমিত আকারে স্থল অভিযান শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। কিন্তু এই স্থল অভিযানের জন্য ইসরায়েলের সৈন্য ও ট্যাংকের পরিমাণ, প্রস্তুতি এবং মাত্রার উপর ভিত্তি করে বোঝা যায় যে দেশটি লেবাননে আরও দীর্ঘ আক্রমনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে।
যদিও হিজবুল্লাহ ইতিমধ্যেই ইসরায়েলে রকেট হামলা শুরু করেছে এবং উত্তর ইসরায়েলের প্রায় ৬০ হাজার বাসিন্দাকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বর্তমান শক্তি এবং যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ইসরায়েলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লক্ষ্য হিজবুল্লাহকে এমনভাবে পরাস্ত করা, যাতে তারা আর হুমকি হয়ে দাঁড়াতে না পারে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
এছাড়া ইসরায়েলি হামলায় লেবাননের লাখও মানুষের বাস্তুচ্যুতি এবং হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহসহ সিনিয়র কমান্ডারদের মৃত্যু পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।
এদিকে ইসরায়েলি কমান্ডো ও প্যারাট্রুপ ইউনিটগুলোর সাথে দেশটির নিয়মিত পদাতিক ও সাঁজোয়া ইউনিটগুলো দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযানে যোগ দিয়েছে বলেও জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। তবে নতুন করে সেনা পাঠালেও তাদের এই সামরিক অভিযান হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সীমিত ও স্থানীয় পর্যায়ে থাকবে বলে দাবি করেছে তেল আবিব।
এর মানে হলো ইসরায়েল মুখে সীমিত স্থল অভিযানের কথা বললেও তাদের এই অভিযান সীমিত কমান্ডো অভিযানের বাইরে চলে গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসরায়েলি সামরিক প্রধান হেরজি হালেভি হিজবুল্লাহর বিপক্ষে লড়াইয়ে আরও পেশাদার ও অভিজ্ঞ বাহিনী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি, ইসরায়েলি বাহিনী আরও উন্নত ড্রোন এবং যুদ্ধের অভিজ্ঞ সৈন্য নিয়ে হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াইয়ে নামছে। অর্থাৎ লেবাননে অভিজাত ইউনিট পাঠানোর মাধ্যমে ইসরায়েল বার্তা পৌঁছে দিতে চাচ্ছে যে, হিজবুল্লাহকে ধ্বংসের লক্ষ্যে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে হিজবুল্লাহও এখন আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী। তাদের অনেক বেশি যোদ্ধা এবং উন্নত মিসাইল রয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে সিরিয়ায় যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাদের সামরিক দক্ষতা বাড়িয়েছে।
শেষ পর্যন্ত, ইসরায়েলের লক্ষ্য হিজবুল্লাহকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা। তবে ইতিহাস অনুযায়ী, এই যুদ্ধ সহজ হবে না।
গত দুই সপ্তাহ ধরে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র দল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বিমান হামলায় লেবাননে প্রায় দুই হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
তাসমিম