ভ্লাদিমির পুতিন
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আরও ব্যাপকতর হতে পারে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেখানে আরও বিপুলসংখ্যক সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এজন্য রিজার্ভ বাহিনীর তিন লাখ সদস্যকে ডেকে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ইউক্রেনে আরও শক্তি বাড়াচ্ছে রাশিয়া।
বুধবার এক টিভি ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট তার দেশের অস্ত্রভা-ার আরও সমৃদ্ধ ও নতুন যুদ্ধাস্ত্র তৈরিতে অর্থ বরাদ্দ দেয়ার কথা বলেছেন। পুতিনের এই ঘোষণায় প্রমাদ গুনছে পশ্চিমারা। আশঙ্কা করা হচ্ছে পুতিন হয়তো সৈন্য বাড়িয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ আরও জোরদার করতে পারেন। এমনকি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধও ঘোষণা করতে পারেন। পুতিনের বক্তৃতার পরপরই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশ মন্ত্রী গিলিয়ান কিগান বলেন, পুুতিনের মন্তব্য হাল্কাভাবে নেয়া উচিত নয়। স্পষ্টতই এটি এমন হুমকি যা আমাদের খুব গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত।
পুতিন বলেন, মাতৃভূমি রক্ষার জন্য সৈন্য সমাবেশের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশনার ফলে যারা কোন এক সময় রুশ সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন বা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ভবিষ্যতে যে কোন প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর কাজে লাগবার জন্য, সেই সব রিজার্ভিস্টদের এখন যুদ্ধ করার জন্য ডেকে পাঠানো হবে। খবর এএফপি, বিবিসি ও স্কাইনিউজ অনলাইনের।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, মাতৃভূমি, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা আর জনগণের নিরাপত্তা রক্ষা করার তিনি সৈন্য সমাবেশের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুতিন এমন এক সময়ে এই ঘোষণা দিলেন যখন ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ছে রুশ বাহিনী। একইসঙ্গে পশ্চিমা অস্ত্র দিয়ে চালানো পাল্টা এসব হামলার মাধ্যমে রাশিয়ার কিছু দখলকৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধার করেছে ইউক্রেন। ভাষণে পুতিন দাবি করেন, পশ্চিমারা রাশিয়াকে ধ্বংস করতে চায় এবং ইউক্রেনে শান্তি চায় না। পুতিন পুনর্ব্যক্ত করেন, তার লক্ষ্য পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলকে ‘মুক্ত করা’। কারণ এই অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ ইউক্রেনের ‘দাস’ হিসেবে আর ফিরে যেতে চায় না। পুতিন আরও বলেন, পশ্চিমারা পারমাণবিক ব্ল্যাকমেলে জড়িত এবং রাশিয়ার কাছে সেসব কর্মকাণ্ডের ‘প্রত্যুত্তর দেয়ার মতো প্রচুর অস্ত্র’ রয়েছে।
এমনকি তিনি ভয় দেখানোর জন্য এসব বলছেন না বলেও জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, যারা সামরিক বাহিনীতে এর আগে কাজ করেছেন, সেই সংরক্ষিত বাহিনীর সৈনিকদের সেনাবাহিনীকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। অনেক যুদ্ধাস্ত্র প্রস্তুত করা হয়েছে এবং আরও অস্ত্র তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমনকি দনবাসে যারা লড়াই করছেন, তাদের আইনী স্বীকৃতি দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন। রাশিয়া ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক এবং দ্যোনেতস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে। ২০১৪ সালে মস্কো আংশিকভাবে এই অঞ্চলের কিছু অংশ দখল করে নেয়। তবে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো রুশদের হাতে থাকা ইউক্রেনের সকল অংশকেই অবৈধভাবে দখল করা বলে মনে করে।
এদিকে ইউক্রেনের রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে মস্কোর গণভোট আয়োজনের পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। খেরসন, দ্যোনেতস্ক, লুহানস্ক ও জাপোরিঝঝিয়ায় রুশ-সমর্থিত কর্মকর্তারা গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গণভোট আয়োজনের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ফ্রান্স। পশ্চিমা এই দেশগুলো বলেছে, তারা এ ধরনের ভুয়া গণভোটের ফলকে কখনই স্বীকৃতি দেবে না। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো বলেছে, গণভোটের এ পরিকল্পনা যুদ্ধের তীব্রতা বাড়াবে। ইউক্রেনের রুশ-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল চারটিতে শুক্রবার থেকে পাঁচ দিনের জন্য গণভোটের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। যে চার অঞ্চলে গণভোটের আয়োজন করা হয়েছে, তা ইউক্রেনের ভূখণ্ডের প্রায় ১৫ শতাংশ। এই চার এলাকার মোট আয়তন হাঙ্গেরির সমান।