ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরা নিয়ে শঙ্কা ॥ ফিলিপ্পো

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরা নিয়ে শঙ্কা ॥ ফিলিপ্পো

অনলাইন ডেস্ক ॥ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেছেন, বাংলাদেশ অবস্থানরত প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে তাদের নিজ দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়া হবে কি-না সেটাই এখন 'বড় প্রশ্ন'। বাংলাদেশ থেকে জেনেভায় ফিরে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীনতার বিষয়টি নিয়ে তিনি আগামী সপ্তাহে জেনেভায় মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার আশা করেছিলেন, তবে তিনি বুঝতে পেরেছেন যে এটি 'খুবই জটিল বিষয়'। তিনি বলেন, 'এটা অত্যন্ত পরিষ্কার যে এই সংকট তৈরি হয়েছে মিয়ানমারে, আর এর সমাধানও রয়েছে মিয়ানমারেই।' সংবাদ সম্মলেনে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে এই পরিস্থিতির সমাধান নিয়ে আলোচনা করা যায়। তিনি বলেন, 'যেহেতু এটা নিশ্চিত যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাটা বেশ সময় সাপেক্ষ বিষয়, আর সেটা যদি ঘটেই, যদি সহিংসতা বন্ধ হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে অবস্থানরত মানুষগুলোর জন্য মধ্যমেয়াদি গ্রহণযোগ্য সমাধান খোঁজাও গুরুত্বপূর্ণ হবে।' জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, 'রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব না থাকার বিষয়টি চিহ্নিত করে এর সমাধান করা প্রয়োজন।' তিনি বলেন, 'কাগজপত্র রয়েছে— কেবল এমন মানুষগুলোকেই যদি মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়, তবে সেই সংখ্যাটা নিশ্চিতভাবেই অনেক কম হবে। তাই আমি মনে করি, তাদের [মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ] এ অবস্থান থেকে সরে আসা উচিত এবং একান্তই যদি প্রয়োজন হয় তবে মিয়ানমারের প্রকৃত বাসিন্দাদের চিহ্নিত করে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত।' রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সম্পর্কে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, 'আমি যখন উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনে গিয়েছিলাম তখন রোহিঙ্গাদের প্রতি ব্যাপক বৈশম্য ও তাদের দারিদ্র্য দেখে সেখানে সন্ত্রাসবাদের উত্থানকে আমার কাছে অবশ্যম্ভাবী বলে মনে হয়েছিল।' তিনি বলেন, 'এই পরিস্থিতির নিরসন না হলে এই পুরো অঞ্চলে সন্ত্রাসাবাদ ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা খুবই বেশি, বিশেষ করে এই ভঙ্গুর অঞ্চলে।' প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে পুলিশের বেশ কিছু চৌকিতে হামলার জন্য রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের দায়ী করে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করলে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই সহিংসতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে দলে দলে বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরুর পর প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছে, বিদ্রোহীদের দমনের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণ করছে এবং তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বালা হয়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের 'জাতিগতভাবে নির্মূল' করছে মিয়ানমার। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দাবি করে আসছে, পুলিশের চৌকিতে হামলার জন্য দায়ী রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের দমনেই রাখাইনে সেনা অভিযান চালানো হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরাই মুসলিমদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে বলেও দাবি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের। সূত্র: রয়টার্স
×