
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, ইসরাইল যদি যুদ্ধবিরোতিতে না আসে, তবে তারা দখলদারদের মোকাবেলা করবে যুদ্ধের ময়দানেই। সেই হুঁশিয়ারির বাস্তব রূপ দেখা যাচ্ছে গাজার মাটিতে। প্রতিদিনই প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে বিপর্যস্ত হচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। সোমবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি—দুই ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছেন গাজায়, আহত হয়েছেন আরও অন্তত চারজন।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোমবার দক্ষিণ গাজার রাফা এলাকায় লড়াই চলাকালীন আইডিএফ-এর একজন রিজার্ভ সেনা নিহত হয়েছেন। নিহত সেনার নাম সার্জেন্ট মেজর ভ্লাদিমির লোজা (৩৬), তিনি ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আসকেলনের বাসিন্দা এবং পঞ্চম ব্রিগেডের ৭০২তম ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন।
আইডিএফ-এর প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, রাফায় একটি অভিযানের সময় হঠাৎ একটি ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে, ফলে ভবনটি ধসে পড়ে এবং লোজা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে নিহত হন। বিস্ফোরণটি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পেতে রাখা বোমার কারণে হয়েছে বলে সন্দেহ করছে ইসরাইলি বাহিনী। উল্লেখযোগ্যভাবে, গাজার উপকূলীয় অঞ্চলে নতুন করে অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এটি দ্বিতীয় ইসরাইলি সেনার মৃত্যু।
এছাড়াও, সোমবারই গাজায় নিহত হন আইডিএফ-এর আরেক সদস্য স্টাফ সার্জেন্ট আমি কোহেন (১৯)। তিনি গোলানি ব্রিগেডের ১৩তম ব্যাটালিয়নের সদস্য ছিলেন। আইডিএফ জানিয়েছে, খান ইউনিসে একটি ভবনের ভেতর গোলাবারুদের বিস্ফোরণে তিনি প্রাণ হারান। এই বিস্ফোরণে আরও দুই সেনা আহত হন।
গাজায় ইসরাইলি সেনা মৃত্যুর এই ধারাবাহিকতা এখন নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পাল্টা হামলায় একের পর এক সেনা নিহত হচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৪৫৬ জন ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৬ হাজারেরও বেশি। এতে বোঝা যাচ্ছে, হামাস এবং অন্যান্য প্রতিরোধ গোষ্ঠী তাদের সামরিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই কাতারে চলছে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরাইল-হামাস আলোচনা। আলোচনায় প্রস্তাব রয়েছে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি, বন্দী মুক্তি, সেনা প্রত্যাহারের রূপরেখা, ত্রাণ প্রবেশ এবং যুদ্ধ শেষের নিশ্চয়তা। কিন্তু ইসরাইল এসব শর্তে এখনও সম্মত হয়নি।
এ প্রসঙ্গে হামাসের সামরিক শাখা আল কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “সব বন্দির মুক্তির বিনিময়েও ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়নি। তাই কোনো স্থায়ী চুক্তি না হলে আমরা দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।” তিনি আরও জানান, ইসরাইল যদি চলমান পরোক্ষ আলোচনা থেকেও পিছু হটে, তবে ভবিষ্যতে কোনো আংশিক চুক্তির সম্ভাবনাও থাকবে না।
গাজা যেন এখন পরিণত হয়েছে ইসরাইলি সেনাদের জন্য মৃত্যুকূপে। হামাস বারবার বলে আসছে, যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা ছাড়া ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধ হবে না। আর সেই প্রতিজ্ঞার বাস্তব রূপই এখন দেখা যাচ্ছে প্রতিদিনের সংঘর্ষে।
শেখ ফরিদ