
ইউরোপীয় কমিশন ২০৪০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৯০ শতাংশ হ্রাসের একটি বাধ্যতামূলক লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তাব করেছে।বুধবার প্রকাশিত এই প্রস্তাবিত সংশোধনীর মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু আইন আরও শক্তিশালী করা হয়েছে, যা ১৯৯০ সালের তুলনায় নিঃসরণ হ্রাসের ভিত্তিতে নির্ধারিত। এই লক্ষ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু নিরপেক্ষতা অর্জনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সামনে আনা হয়েছে।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পূর্বানুমানযোগ্যতা নিশ্চিত করা, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উদ্ভাবনে গতি আনা এবং ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তা আরও জোরদার করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন এক বিবৃতিতে বলেন, “আজ আমরা দেখাচ্ছি, ২০৫০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় অর্থনীতি ডিকার্বনাইজেশনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমরা অটল। আমাদের লক্ষ্য পরিষ্কার, পথটি বাস্তবভিত্তিক ও সুপরিকল্পিত।”
কমিশনের প্রস্তাবিত এই ২০৪০ সালের লক্ষ্যটি এর আগে নির্ধারিত ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রার (কমপক্ষে ৫৫ শতাংশ নিঃসরণ হ্রাস) ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এতে নতুন কিছু নমনীয়তা যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০৩৬ সালের পর সীমিত পরিসরে আন্তর্জাতিক কার্বন ক্রেডিট ব্যবহারের অনুমোদন, ইইউর ইমিশন ট্রেডিং সিস্টেমে কার্বন অপসারণ পদ্ধতির অন্তর্ভুক্তি এবং খাতভিত্তিক আরও বেশি নমনীয়তা।
এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে কমিশন ‘ক্লিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিল’ শিরোনামে একটি নতুন পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে। এর আওতায় রাজস্ব সহায়তার কাঠামো নতুনভাবে সাজানো, কর ছাড়ের প্রণোদনা এবং কার্বন সীমান্ত সামঞ্জস্য প্রক্রিয়া (CBAM)-এর নিয়ম সরলীকরণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা এবং কার্বন লিকেজ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপীয় কমিশনের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট তেরেসা রিবেরা ও জলবায়ু কমিশনার ভোপকে হোকস্ট্রা এই প্রস্তাবনা আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করেন। তাঁরা বলেন, জলবায়ু দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ভারসাম্য রক্ষা করাও জরুরি।
রিবেরা জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৮৫ শতাংশ নাগরিক জলবায়ু পরিবর্তনকে বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন। তাই এটি মোকাবিলায় আমাদের “পূর্ণ দায়িত্ব” গ্রহণ করতে হবে।
জলবায়ু কমিশনার হোকস্ট্রা বলেন, ২০৪০ সালের এই লক্ষ্যই ইউরোপের প্রতিযোগিতাশীলতা, নিরাপত্তা এবং পরিবেশগত লক্ষ্য অর্জনের পরবর্তী ধাপ। তাঁর ভাষায়, “আমরা এটি করছি প্রতিযোগিতার জন্য, পরিবেশ রক্ষার জন্য এবং নিজেদের স্বাধীনতার জন্য।”
তিনি আরও বলেন, সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হলে এই ডিকার্বনাইজেশন হবে একটি “শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন”, যা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাবে।
এই প্রস্তাবটি এখন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের সামনে সাধারণ আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার আওতায় বিতর্ক ও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত হবে। এটি ২০৩০ সালের পরবর্তী সময়ের ইইউর জলবায়ু ও জ্বালানি নীতির রূপরেখা নির্ধারণে মূল দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে এবং এ বছর ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য COP30 সম্মেলনে ইইউর অংশগ্রহণের ভিত্তিও তৈরি করবে।
সূত্র: https://tinyurl.com/47rnc73a
আফরোজা