ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

চর্বি ছাড়াও হার্টের জন্য বিপজ্জনক ৩টি খাবার

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৯ জুলাই ২০২৫

চর্বি ছাড়াও হার্টের জন্য বিপজ্জনক ৩টি খাবার

ছ‌বি: প্রতীকী

আমরা সাধারণত ভাবি, হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার মানেই চর্বিযুক্ত খাবার। যেমন: গরুর মাংস, ভাজাভুজি, ঘি বা মাখন। কিন্তু অনেক খাবার আছে যেগুলোতে চর্বি নেই বা খুব কম, অথচ সেগুলো নিয়মিত খেলে হার্টের ক্ষতি হতে পারে। হার্ট সুস্থ রাখতে হলে শুধু চর্বি নয়, অন্য অনেক উপাদান থেকেও সতর্ক থাকতে হয়। নিচে এমন তিনটি সাধারণ খাবার নিয়ে আলোচনা করা হলো, যেগুলোতে চর্বি না থাকলেও হার্টের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।

প্রথমেই আসি চিনিযুক্ত কোমল পানীয় বা সফট ড্রিংকস-এর কথায়। এগুলো দেখতে নিরীহ মনে হলেও আসলে শরীরের জন্য ভয়ংকর। এতে কোনো চর্বি থাকে না, তাই অনেকে ভাবেন এগুলো নিরাপদ। কিন্তু এই পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। যখন আমরা অতিরিক্ত চিনি খাই, তখন তা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। শরীর তখন ইনসুলিন হরমোন তৈরি করে এই চিনি সামলাতে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি ইনসুলিন প্রতিরোধ তৈরি করে, যাকে বলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। এই অবস্থা থেকে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হতে পারে, আর ডায়াবেটিস হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত চিনি রক্তনালীর ক্ষতি করে, রক্তচাপ বাড়ায় এবং শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে – যেগুলো সবই হার্টের ক্ষতির কারণ।

দ্বিতীয় বিপজ্জনক খাবার হচ্ছে প্রক্রিয়াজাত (Processed) খাবার। এই খাবারগুলো দেখতে আকর্ষণীয়, খেতেও ভালো লাগে, কিন্তু এগুলোর ভিতরে লুকিয়ে থাকে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান যা হার্টের জন্য ভয়ংকর। যেমন: প্যাকেটজাত স্যুপ, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, প্রক্রিয়াজাত মাংস (যেমন সসেজ, সালামি), প্যাকেট চিপস, কেক, বিস্কুট ইত্যাদি। এই খাবারগুলোতে সাধারণত উচ্চমাত্রার সোডিয়াম (লবণ) থাকে। অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি করে। অনেক ক্ষেত্রে এই খাবারগুলোতে 'ট্রান্স ফ্যাট' থাকে, যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বাড়িয়ে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কমিয়ে দেয়। এমনকি এই খাবারগুলোতে সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থও রক্তনালী ও হৃৎপিণ্ডে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।

তৃতীয় খাবার হলো রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট যেমন: সাদা ভাত, ময়দা, সাদা পাউরুটি, কেক-পেস্ট্রি ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে ফাইবার বা আঁশ একেবারেই থাকে না। ফলে খুব দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ঠিক যেমন চিনি করে। এই অতিরিক্ত গ্লুকোজ ইনসুলিন বাড়ায়, যা দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি করে। এছাড়া রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট খেলে দ্রুত ক্ষুধা লাগে, বেশি খাওয়া হয়, এবং ওজন বাড়ে। অতিরিক্ত ওজনও হার্টের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে যাদের পেটের চারপাশে মেদ জমে, তাদের হৃদরোগের আশঙ্কা বেশি।

এই তিনটি খাবার – কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট – আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু সচেতন না হলে এগুলো নিঃশব্দে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। তাই শুধু চর্বিযুক্ত খাবার নয়, অন্যান্য "সফট" খাবারও যে হার্টের জন্য কড়া বিপদ ডেকে আনতে পারে, তা মনে রাখা জরুরি। আমাদের উচিত হবে এসব খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা এবং তাজা শাকসবজি, ফলমূল, পূর্ণ শস্য, আঁশযুক্ত খাবার এবং পর্যাপ্ত পানি খাওয়া। পাশাপাশি নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম করাও হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

হার্টের যত্ন নিতে হলে শুধু ডাক্তার নয়, আমাদের প্রতিদিনের খাবার তালিকাই হতে পারে সবচেয়ে বড় ওষুধ – কিংবা সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ। এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোনটা বেছে নেব।

এম.কে.

×