
চল্লিশ পেরোনোর পর থেকেই আমাদের মস্তিষ্কে ধীরেধীরে কিছু পরিবর্তন শুরু হয়। প্রতি বছরই প্রতিক্রিয়ার গতি সামান্য করে কমে যায়, আর শপিং লিস্টের জিনিস মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে এগুলো সবসময় কোনো রোগের লক্ষণ নয়।
'এটাই স্বাভাবিক' — বলছেন বিজ্ঞানী ম্যাট হুয়েন্টেলম্যান, অ্যারিজোনাভিত্তিক ট্রান্সলেশনাল জিনোমিক্স রিসার্চ ইনস্টিটিউট (TGen)-এর অধ্যাপক। তিনি “মাইন্ডক্রাউড” নামক এক অনলাইন কগনিটিভ টেস্টের সহ-পরিচালক, যা ইতিমধ্যে ৭ লাখের বেশি মানুষ দিয়েছেন।
সেই অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় হাজারখানেক মানুষের স্মৃতি ও তথ্য প্রক্রিয়াকরণের দক্ষতা এমন ছিল, যেন তারা বয়সে ৩০ বছর ছোট! এমন 'অসাধারণ পারফর্মার'-দের নিয়ে গবেষণায় উঠে এসেছে আকর্ষণীয় তথ্য।
জিনগত বিষয় নিশ্চয়ই ভূমিকা রাখে, কিন্তু গবেষকরা দেখেছেন—
ভালো ঘুম, হৃদযন্ত্রের সুস্থতা, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার এবং নিয়মিত ব্যায়াম—এই উপাদানগুলো মস্তিষ্ক সুস্থ রাখায় বড় ভূমিকা রাখে।
গত গ্রীষ্মে মায়ামিতে ম্যাকনাইট ব্রেইন রিসার্চ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে গবেষকরা জানালেন— মস্তিষ্কের বার্ধক্য ঠেকাতে এর ‘যান্ত্রিক’ কার্যপ্রণালী বুঝতে হবে।
ঘুমের গুণগত মানের গুরুত্ব
ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. ক্রিশ্চিয়ান আগুদেলো বলেন, “ঘুম নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতাই আমাকে সবচেয়ে বেশি শিক্ষা দিয়েছে—বিশেষ করে বাবা হওয়ার পর।”
তাঁর মতে, উন্নত ঘুম মানে শুধু দীর্ঘ সময় ঘুমানো নয়, বরং ঘুমের গভীরতা ও পর্যায়গুলো ঠিকমতো সম্পন্ন হওয়া। ঘুম ভালো হলে, পরদিন উঠে মনে হয়—ঘুমটা ‘বাস্তবেই কাজে লেগেছে’, শরীর ও মন ফুরফুরে থাকে।
সতেজ ঘুমের জন্য কিছু অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ:
-
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠা
-
সূর্যের ছন্দ অনুযায়ী দৈনন্দিন রুটিন গঠন
-
সামাজিক ও শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা
এসব অভ্যাস শরীরে 'স্লিপ প্রেসার' তৈরি করে—যার ফলে ঘুম আসে সহজে ও গভীরভাবে।
রক্তনালির স্বাস্থ্য মানেই মস্তিষ্কের তারুণ্য
অ্যালঝেইমার গবেষক ড. চার্লস ডেকারলি বলেন, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস—এই পরিচিত ঝুঁকি-কারকগুলো শুধু হার্ট অ্যাটাক নয়, মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যক্ষমতাও প্রভাবিত করে।
৬৫ বছর বয়সোর্ধ্ব হাজার হাজার মানুষের উপর গবেষণা বলছে, যাদের মধ্যে এই ঝুঁকি-কারকগুলো ছিল, তাদের মস্তিষ্ক ছিল আকারে ছোট, টিস্যুর গঠন দুর্বল এবং গঠনগতভাবে ‘বুড়ো’।
তবে সুসংবাদও আছে—
যদি এই অসুখগুলো সময়মতো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তবে মস্তিষ্কও থাকবে অনেকটা তরুণ।
ডেকারলি বলেন, “আমরা জানতে চাচ্ছি—রক্তনালির রোগগুলো ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে মস্তিষ্কও কি তরুণ থাকবে? প্রাথমিক ফলাফল বলছে—হ্যাঁ।”
তাই বয়স বাড়লেও স্মৃতি ও মস্তিষ্ককে তরুণ রাখার উপায় আছে:
-
উন্নত ঘুম
-
পরিমিত জীবনযাপন
-
সক্রিয় সামাজিকতা ও শরীরচর্চা
-
হৃদযন্ত্রের যত্ন
এই অভ্যাসগুলো নিয়মিত অনুসরণ করলে হয়তো আপনার মস্তিষ্কও পারবে আপনাকে ৩০ বছর কম বয়সি মানুষের মতো পরিষ্কারভাবে ভাবতে সাহায্য করতে।
Jahan