ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে ভুয়া ও মনগড়া তথ্য ছড়াচ্ছে আ.লীগ : প্রেস উইং

প্রকাশিত: ০৮:০১, ১৭ জুলাই ২০২৫

গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে ভুয়া ও মনগড়া তথ্য ছড়াচ্ছে আ.লীগ : প্রেস উইং

আ.লীগপন্থিদের ছড়ানো ভুয়া তথ্য। ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেক।

গোপালগঞ্জের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে মাঠের বাস্তব ঘটনার বিপরীতে, আওয়ামী লীগপন্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর, প্রাসঙ্গিকতা-বর্জিত ও মনগড়া ছবি ছড়িয়ে টাইমলাইন ভরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। এক বিবৃবিতে বলা হয়েছে, একাধিক পুরনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ছবি পোস্ট করে এসব মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।

বুধবার (১৬ জুলাই) রাতে সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের উপর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকদের হামলার জেরে সৃষ্ট সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগপন্থি একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও পেজ। সকাল থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন এবং আগুন দেয়া হয়েছে পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িতে। সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় প্রশাসন গোপালগঞ্জে রাত ৮টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কঠোর কারফিউ জারি করেছে। অথচ সংঘর্ষের প্রকৃত কারণ ও প্রেক্ষাপট আড়াল করতে আওয়ামী লীগপন্থি সোশ্যাল মিডিয়া কর্মীরা সমন্বিত প্রচারণা শুরু করে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে আ’লীগপন্থিরা পুরোনো ও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন একাধিক ছবি শেয়ার করেছে। এসব ছবিকে সহিংসতার দৃশ্য বলে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এস এম জাকির হোসেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনসহ কয়েকজন ব্যক্তি এসব ছবি পোস্ট করেচেন। তারা ‘ইউনূস গ্যাং’ এবং বিরোধীদলীয় কর্মীরা সাধারণ মানুষকে হিংসাত্মকভাবে আক্রমণ করছে বলেও দাবি করেন।

একটি ছবিতে দেখা গেছে, একজন আহত কিশোরকে স্থানীয়রা বহন করছে এবং সেখানে আগুন জ্বলছে, রাস্তায় উত্তেজিত জনতা বিক্ষোভ করছে। ছবিটি গোপালগঞ্জে নৃশংসতার প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু রিভার্স ইমেজ সার্চে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এটি ২০২৪ সালের ১০ আগস্টের একটি পুরানো ঘটনার ছবি।

অন্য একটি বহুল প্রচারিত পোস্টে, জাকির হোসেন এবং আশরাফুল আলম খোকন একজন ডিবি (ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ) পুলিশ কর্মকর্তার ছবি শেয়ার করেছেন। ওই কর্মকর্তাকে বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি চালাতে দেখা গেছে। প্রকৃতপক্ষে ছবিটি ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপির একটি সমাবেশের সময়ের। ওই সময়ে ছবিতে থাকা ডিবি কর্মকর্তাকে জনতার দিকে গুলি চালাতে দেখা গিয়েছিল।

জাকির হোসেন আরেকটি ছবি পোস্ট করেছেন, যেখানে হাসপাতালে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গোপালগঞ্জে সংঘর্ষের ছবি বলে এটি প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এটিও ২০২৩ সালের ২০ মার্চের একটি ভিন্ন ঘটনার ছবি।

এছাড়া একটি শিশুর হাতে লাঠি নিয়ে দাঁড়ানোর ছবি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে। এটি ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে তোলা এবং এতে রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুদের জড়িত করা হচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে।। কিন্তু এই ছবিটি গোপালগঞ্জের নয়, বরং গাজীপুরের সফিপুর এলাকায় ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত একটি ভিডিওর স্ক্রিনশট এটি।

এইসব মিথ্যা প্রচারণা জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়। প্রেস উইংয়ের মতে, এসব ভুয়া প্রচারণা ও যাচাইকৃত সূত্রভিত্তিক তথ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।

আজকের সহিংসতা শুরু হয়, যখন গোপালগঞ্জ শহরে নির্ধারিত সমাবেশ শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের বহর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকরা আক্রমণ করে।

এই আক্রমণ দ্রুত বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয়, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মাঠের বাস্তব ঘটনার বিপরীতে, আওয়ামী লীগপন্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর, প্রাসঙ্গিকতা-বর্জিত ও মনগড়া ছবি ছড়িয়ে টাইমলাইন ভরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে।’
 

তাসমিম

×