ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

ইউরিক অ্যাসিড কোনো পূর্ব লক্ষণ না দেখিয়েই শরীরে যেভাবে ক্ষতি করে: জানুন ৭টি ভয়াবহ প্রভাব

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ১০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২১:৩৪, ১০ জুলাই ২০২৫

ইউরিক অ্যাসিড কোনো পূর্ব লক্ষণ না দেখিয়েই শরীরে যেভাবে ক্ষতি করে: জানুন ৭টি ভয়াবহ প্রভাব

অনেকেই ভাবেন ইউরিক অ্যাসিড সমস্যা মানেই শুধু গাউট বা ব্যথাযুক্ত অস্থিসন্ধি। কিন্তু বাস্তবে এই রাসায়নিক উপাদানটি আপনার শরীরের ভেতরে নীরবে ছড়াতে পারে গুরুতর ক্ষতি। ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয় যখন শরীর বিশেষ কিছু খাবার ও পানীয়তে থাকা 'পিউরিন' নামক পদার্থ ভাঙে। সাধারণ অবস্থায় অল্প পরিমাণ ইউরিক অ্যাসিড রক্তে মিশে কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাব হয়ে বেরিয়ে যায়। তবে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড (হাইপারইউরিকেমিয়া) শরীরে জমা হতে থাকলে তা হয়ে উঠতে পারে নীরব ঘাতক।

গাউট, কিডনি স্টোন ছাড়াও ইউরিক অ্যাসিড দীর্ঘমেয়াদে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যে ক্ষতি করতে পারে, তা অনেক সময় লক্ষণ প্রকাশের আগেই শুরু হয়ে যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক, ইউরিক অ্যাসিড কীভাবে নীরবে আপনার শরীরের ক্ষতি করছে।

হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালির ক্ষতি
উচ্চ মাত্রার ইউরিক অ্যাসিড রক্তনালিতে প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করে। এর ফলে ধমনির প্রাচীর শক্ত ও কম নমনীয় হয়ে পড়ে। সময়ের সঙ্গে এই ক্ষতি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ এমনকি আকস্মিক হৃদ্‌যন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এসব সমস্যা অনেক সময় আগে থেকে কোনো লক্ষণ ছাড়াই দেখা দেয়।

কিডনির ক্ষতি
কিডনি স্বাভাবিকভাবে রক্ত থেকে ইউরিক অ্যাসিড ছেঁকে বের করে দেয়। কিন্তু যখন এর পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন তা ক্ষুদ্র ক্রিস্টালের (স্ফটিক) আকারে কিডনিতে জমা হতে থাকে। প্রথমদিকে এগুলো কোনো ব্যথা না দিলেও ধীরে ধীরে কিডনির টিস্যুতে ক্ষত সৃষ্টি করে। দীর্ঘমেয়াদে এটি কিডনি বিকল হওয়া পর্যন্ত গড়াতে পারে।

মেটাবলিক সিনড্রোমের কারণ
মেটাবলিক সিনড্রোম বলতে বোঝায় উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ রক্তে শর্করা, বড় কোমরের মাপ, উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড ও কম এইচডিএল কোলেস্টেরল এই পাঁচটির মধ্যে অন্তত তিনটি একসঙ্গে দেখা দিলে একে মেটাবলিক সিনড্রোম বলা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ইউরিক অ্যাসিড ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অর্থাৎ, আপনি হয়তো বুঝতেই পারছেন না, অথচ ইউরিক অ্যাসিড নীরবে আপনার বিপাকীয় স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে।

হাড় ও অস্থিসন্ধির ক্ষয়
গাউট না থাকলেও ইউরিক অ্যাসিড ধীরে ধীরে অস্থিসন্ধি ও আশেপাশের টিস্যুতে জমা হতে পারে। এই প্রক্রিয়া শুরুতেই কোনো ব্যথা না দিলেও হাড়ের তরুণাস্থি ও জয়েন্ট ধ্বংসের ঝুঁকি বাড়ায়। এতে করে সময়ের সঙ্গে আর্থ্রাইটিস, জয়েন্টে ফোলা বা বিকৃতি দেখা দিতে পারে।

কিডনির পাথর
উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড মানেই কিডনির পাথরের ঝুঁকি বেশি। ক্রিস্টাল জমে তৈরি হওয়া এই পাথর শুরুতে ছোট থাকলেও পরে বড় হয়ে প্রস্রাবের রাস্তা আটকে দিতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা না করলে এর ফলে কিডনিতে সংক্রমণ কিংবা স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

রক্তচাপ বৃদ্ধির ঝুঁকি
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ইউরিক অ্যাসিড রক্তনালিকে সংকুচিত ও শক্ত করে তোলে, যার ফলে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়। এতে উচ্চ রক্তচাপ বাড়ে, যদিও প্রাথমিকভাবে তা কোনো লক্ষণ না দেখিয়ে নীরবে শরীরে ক্ষতি করতে থাকে।

শরীরে নীরব প্রদাহ
যখন শরীরে ইউরিক অ্যাসিড জমা হতে থাকে, তখন তা প্রদাহজনিত রাসায়নিক হিসেবে কাজ করে। এই নিম্নমাত্রার প্রদাহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস এমনকি কিছু ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।


ইউরিক অ্যাসিড শুধু অস্থিসন্ধির ব্যথার কারণ নয়, বরং এটি শরীরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি করে যেতে পারে নীরবে, দীর্ঘ সময় ধরে। তাই রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা, সুষম খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত পানি পান করা এই তিনটি অভ্যাস মেনে চলাই হতে পারে ইউরিক অ্যাসিডের ভয়াবহতা এড়ানোর প্রথম পদক্ষেপ।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/2cw9jth5

আফরোজা

×