
ছবিঃ সংগৃহীত
কোলোরেক্টাল ক্যানসার— যা কোলন বা রেকটামে (বৃহদান্ত্র বা মলাশয়) শুরু হয়— বিশ্বের অন্যতম সাধারণ এবং প্রাণঘাতী ক্যানসারের মধ্যে একটি। তবে সুখবর হচ্ছে, প্রাথমিক পর্যায়ে এটি ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, কোলোরেক্টাল ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো অনেক সময়ই হালকা বা অবহেলাযোগ্য মনে হয়, যেমন পাইলস বা হজমের সমস্যা বলে ধরে নেওয়া হয়। আর তাতেই ঘটে সর্বনাশ। তাই এই রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং শরীরের ক্ষীণ সংকেতগুলোকেও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
চলুন জেনে নিই এমন ৫টি লক্ষণ, যা কোলোরেক্টাল ক্যানসারের প্রাথমিক সতর্কবার্তা হতে পারে:
১. মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন
আপনার মলত্যাগের অভ্যাস হঠাৎ বদলে গেছে কি? যেমন—ঘন ঘন মলত্যাগ, দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য, পাতলা বা চিকন মল ইত্যাদি? সাধারণ খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণেও এমন হতে পারে, কিন্তু যদি কয়েকদিন ধরে একই সমস্যা চলে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় না ফেরে, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
২. মলে রক্ত বা রেকটাল রক্তক্ষরণ
টয়লেট পেপারে বা মলে রক্তের দাগ দেখা গেলে তা অবহেলা করা বিপজ্জনক হতে পারে। অনেক সময় পাইলস বা অ্যানাল ফিশার থেকেও এমন রক্তপাত হতে পারে, তবে যদি বারবার বা দীর্ঘদিন রক্তক্ষরণ হয়, তা কোলোরেক্টাল ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
একটি গবেষণা (British Journal of General Practice) বলছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রেকটাল ব্লিডিং ও মলের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়—বিশেষ করে যদি তা মলের সঙ্গে মিশে থাকে।
৩. অজানা ও অযাচিত ওজন হ্রাস
হঠাৎ করে যদি ডায়েট বা ব্যায়াম না করেও শরীরের ওজন কমতে থাকে, তাহলে সেটিও ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ক্ষেত্রে এই ওজন হ্রাস ঘটে শরীরের বিপাকক্রিয়া পরিবর্তনের কারণে, বা রোগ প্রতিরোধে শরীরের অতিরিক্ত শক্তি খরচ হওয়ার ফলে।
একটি গবেষণা (BMC Cancer) বলছে, অজানা ও অযাচিত ওজন হ্রাস কোলোরেক্টাল ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণ এবং এটি রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়।
৪. দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি বা দুর্বলতা
যথেষ্ট বিশ্রাম নিয়েও যদি সারাক্ষণ ক্লান্তি অনুভব করেন বা দৈনন্দিন কাজকর্মেও হাঁপিয়ে যান—তাহলে তা কোলোরেক্টাল ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। কারণ শরীরের ভেতরে ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ হতে থাকলে রক্তাল্পতা (আয়রন ঘাটতির অ্যানিমিয়া) তৈরি হয়, যা ক্লান্তির প্রধান কারণ।
২০০৮ সালের একটি গবেষণা (PubMed Central) অনুযায়ী, অনেক ক্যানসার রোগী চিকিৎসা শুরুর আগেই তীব্র ক্লান্তিতে ভোগেন।
৫. পেটব্যথা, অস্বস্তি বা গ্যাস-বেদনাজনিত সমস্যা
যদি নিয়মিত পেটব্যথা, ফুলে যাওয়া, চাপ বা গ্যাস-জাতীয় সমস্যা হতে থাকে—তবে সেটি কোলোরেক্টাল ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে টিউমার অন্ত্রে আংশিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, যার ফলে ব্যথা ও পেট ফুলে থাকে।
২০২৩ সালের একটি গবেষণায় (BMC Gastroenterology) দেখা গেছে, কোলোরেক্টাল ক্যানসার রোগীদের মধ্যে ৪৬.৯% এই ধরনের পেটব্যথার কথা জানিয়েছেন—যা মলত্যাগের পরিবর্তন এবং রক্তপাতের পরেই সর্বাধিক দেখা যায়।
শেষ কথা
প্রথমদিকে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের উপসর্গগুলো সাধারণ সমস্যা মনে হতে পারে, কিন্তু এগুলোকে অবহেলা করলে তা জীবনঘাতী হতে পারে। তাই শরীরের ভাষা শুনুন এবং কোনও অস্বাভাবিকতা টের পেলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। মনে রাখবেন—প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ক্যানসার জয় করা সম্ভব।
ইমরান