
এক সাম্প্রতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, ঘুমের অভাবে আমাদের হৃদয় কতটা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। মাত্র তিন রাত পর্যাপ্ত ঘুম না হলে—প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৪.২৫ ঘণ্টা ঘুম—রক্তে এক প্রকার ঝড়ের সৃষ্টি হয়। ৯০টিরও বেশি প্রদাহজনিত প্রোটিন বেড়ে যায়, যেগুলোর অনেকগুলোই হৃদযন্ত্র বিকল, করোনারি রোগ এবং বিপজ্জনক অ্যারিদমিয়ার সঙ্গে জড়িত। এমনকি তরুণ ও স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিরাও এর প্রভাব থেকে রেহাই পায়নি। আমাদের দেহ, যা এতটাই সূক্ষ্মভাবে সাজানো ও সহনশীল, তাৎক্ষণিকভাবে দুর্বলতার লক্ষণ দেখাতে শুরু করে।
ঘুম শুধুই এক বিরতি নয়—এটি এক ধরনের নীরব নিরাময়-সঙ্গীত। ঘুম হারালে কেবল হৃদয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, রক্তে শর্করার মাত্রা ছন্দ হারায়, এবং ক্ষুধা বোঝার ক্ষমতা ভুল করে ফেলে দেহ। ক্ষুধা বেড়ে যায়। বিপাকক্রিয়া ধীর হয়। রোগপ্রতিরোধী কোষ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। মন আবছা হয়ে যায় বিরক্তি ও ভুলে যাওয়ার ধোঁয়ায়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেহ ভুলে যেতে শুরু করে কীভাবে নিজেকে সুস্থ করে তুলতে হয়—শারীরিকভাবে, মানসিকভাবেও।
কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, ঘুম কেবল একটি প্রক্রিয়া নয়; এটি একটি জৈবিক বুদ্ধিমত্তা, যা প্রতিরাতেই আমাদের দেহকে ভারসাম্যে ফিরিয়ে আনে। অন্যরা বলেন, ঘুমের এই ছন্দ প্রাকৃতিক প্রাচীন চক্রের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত, এমন এক ছন্দ যা আমাদের চেয়ে বহু পুরনো।
তাই, যখন আমরা ঘুমকে অগ্রাহ্য করি, তখন আমরা সময় চুরি করছি না—বরং নিজেদের সহ্যশক্তি থেকে সময় ধার নিচ্ছি। হৃদয় শুধু স্পন্দন করে না, এটি শোনে। আর বিশ্রাম ছাড়া, সে নিজেরই ছন্দ শুনতে পারে না।
এক পৃথিবী যেখানে নিরন্তর গতি ও ব্যস্ততাকে গৌরবের চোখে দেখা হয়, ঘুম আমাদের এক গভীর জ্ঞান মনে করিয়ে দেয়—আরোগ্য আসে প্রয়াসে নয়, আসে আত্মসমর্পণে। জীবনের সবচেয়ে শক্তিশালী টিকে থাকার কৌশলগুলোর অনেকটাই ঘটে নিরবতায়, স্থিরতায়, চোখ বন্ধ করে।
Jahan