ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

লিভার ও কিডনির বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে প্রতিদিনের খাবারে রাখুন এই ৮টি ফল!

প্রকাশিত: ১০:১৬, ১৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ১০:১৭, ১৪ জুন ২০২৫

লিভার ও কিডনির বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে প্রতিদিনের খাবারে রাখুন এই ৮টি ফল!

দেহে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে নানা ডিটক্স পদ্ধতি নিয়ে শোরগোল থাকলেও প্রকৃতির নিজস্ব কিছু উপাদান যুগ যুগ ধরে এই কাজে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। লিভার ও কিডনি দেহের দুটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যাদের প্রধান কাজ হলো রক্ত ছেঁকে শরীর থেকে বর্জ্য ও ক্ষতিকর উপাদান বের করে দেওয়া। কিন্তু নিজেরাই অক্লান্ত পরিশ্রম করেও একসময় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। সেই সময় প্রাকৃতিক কিছু ফল হতে পারে এদের বড় সহায়।

গবেষণালব্ধ তথ্য অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট ফল রয়েছে যেগুলো নিয়মিত খেলে লিভার ও কিডনি আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারে। এগুলো শুধুই স্বাদের জন্য নয়, বরং ভেতর থেকে দেহ পরিষ্কার রাখার বাস্তব শক্তি রাখে। চলুন জেনে নিই এমন ৮টি ফলের কথা, যেগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিতভাবে ডিটক্সে সাহায্য করে।

১. ব্লুবেরি
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর ব্লুবেরিকে ‘সুপারফুড’ বলা হয়। এতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন নামের প্রাকৃতিক পিগমেন্ট লিভারকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও ফাইব্রোসিস থেকে রক্ষা করে। এছাড়া, কিডনির প্রদাহ কমাতেও এই ক্ষুদ্র ফল কার্যকর ভূমিকা রাখে। স্বাদে মিষ্টি, গুণে অসাধারণ।

২. পেঁপে
পেঁপে শুধু হজমে সাহায্য করে না, বরং এতে থাকা পাপেইন এনজাইম ও ফ্ল্যাভোনয়েড লিভার থেকে অ্যামোনিয়া ও ভারী ধাতু বের করতে সাহায্য করে। প্রচলিত প্রাকৃতিক চিকিৎসাতেও পেঁপের বীজ ব্যবহৃত হতো লিভার পরিষ্কারের জন্য। পাশাপাশি, এর জলীয় অংশ ও ডায়ুরেটিক বৈশিষ্ট্য কিডনি থেকে বর্জ্য বের করে দিতে সহায়ক।

৩. লাল আঙুর
আঙুর হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী বলেই আমরা জানি। তবে লাল আঙুরের খোসায় থাকা রেজভেরাট্রল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের প্রদাহ কমিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ পুনরুজ্জীবনে সাহায্য করে। এতে থাকা পটাশিয়াম কিডনিকে অতিরিক্ত সোডিয়াম বের করতে সাহায্য করে, ফলে কিডনি স্টোনের ঝুঁকিও কমে।

৪. ডালিম
ডালিম কেবল রক্ত সঞ্চালনে সহায়ক নয়, এর রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডায়ালাইসিস করা রোগীদের কিডনির ক্ষতি হ্রাসে সাহায্য করে। পাশাপাশি, ডালিমে থাকা পলিফেনল লিভারের প্রদাহ কমায় এবং ফ্যাটি লিভার কমাতে সহায়তা করে।

৫. অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডোতে শুধু স্বাস্থ্যকর চর্বি নয়, বরং গ্লুটাথায়ন নামের একটি যৌগ আছে যা লিভার থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাভোকাডো লিভারে ডিটক্স এনজাইমের উৎপাদন বাড়ায়। এছাড়া, এতে থাকা পটাশিয়াম কিডনির ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স রক্ষা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৬. লেবু
অনেকে সকালে লেবুপানি খেয়ে দিন শুরু করেন, এবং এর পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি। লেবুতে থাকা সিট্রিক অ্যাসিড লিভারে পিত্তরস উৎপাদনে সহায়তা করে, যা হজম ও টক্সিন ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি, কিডনিতে সাইট্রেট মাত্রা বাড়িয়ে এটি পাথর হওয়া প্রতিরোধ করে।

৭. তরমুজ
শুধু পানি ও চিনি নয়, তরমুজে আছে সিট্রুলিন নামের অ্যামিনো অ্যাসিড, যা লিভার থেকে অ্যামোনিয়া ছেঁকে বের করে দিতে সাহায্য করে। এটি কিডনির কাজ সহজ করে বেশি প্রস্রাব তৈরি করে, তবে কোনো অতিরিক্ত চাপ না ফেলে। তাই গরমকালে তরমুজ হতে পারে নিখুঁত ডিটক্স ফল।

৮. আপেল
‘প্রতিদিন একটি আপেল ডাক্তার দূরে রাখে’—এই প্রবাদ কিন্তু অমূলক নয়। আপেলে থাকা পেকটিন নামের দ্রবণীয় ফাইবার হজমতন্ত্রে জমে থাকা টক্সিন ও ভারী ধাতুকে বাঁধতে পারে, ফলে লিভারের চাপ কমে। এছাড়া, আপেল শরীরের অ্যাসিড-বেইস ব্যালান্স বজায় রাখে এবং পটাশিয়াম কম হওয়ায় কিডনি রোগীদের জন্যও নিরাপদ।


প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যদি আপনি এসব ফল রাখেন, তাহলে কৃত্রিম ডিটক্স ডায়েট বা ব্যয়বহুল ক্লিনজিং পদ্ধতির দিকে তাকাতে হবে না। প্রকৃতির এই ফলগুলো শুধু শরীর পরিষ্কার রাখেই না, বরং আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ জীবনধারার পথেও এগিয়ে রাখে। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস শুরু হোক একটি ফল দিয়ে প্রতিদিন।


সূত্র:https://tinyurl.com/t433jkae

আফরোজা

×