ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

যে কারণে বিশ্বজুড়ে নজিরবিহীনভাবে কমছে সন্তান জন্মদানের হার

প্রকাশিত: ১৭:৫৮, ১১ জুন ২০২৫

যে কারণে বিশ্বজুড়ে নজিরবিহীনভাবে কমছে সন্তান জন্মদানের হার

বিশ্বজুড়ে সন্তান জন্মদানের হার বিপজ্জনক হারে কমে যাচ্ছে। এ প্রবণতা মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক নাতালিয়া কানেম এক প্রতিবেদনে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ইউএনএফপিএর সাম্প্রতিক এক বৈশ্বিক জরিপে দেখা গেছে, সন্তান নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা অনেকটাই কমে গেছে। অর্থনৈতিক চাপে অনেক পরিবার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে—‘এক সন্তানই যথেষ্ট।’

ভারতের মুম্বাইয়ের বাসিন্দা নম্রতা নানগিয়া একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার স্বামী একটি টায়ার কোম্পানিতে কর্মরত। তাদের পাঁচ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও অর্থনৈতিক বাস্তবতা তাদের সেই সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রাখছে।

নম্রতা জানান, “একটি সন্তানের পিছনে বিদ্যালয়ের ফি, স্কুলবাসের ভাড়া, সাঁতার ও ছবি আঁকার ক্লাসসহ নানা খরচ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। আমাদের সময় এসব কিছু ছিল না। এখন সন্তানকে সব কিছুতেই দক্ষ করতে হয়।”

জাতিসংঘ জানিয়েছে, নম্রতার মতো পরিস্থিতি এখন বৈশ্বিক রূপ নিয়েছে।

ইউএনএফপিএর জরিপে বিশ্বের ১৪টি দেশের ১৪ হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। দেশগুলো হলো—থাইল্যান্ড, হাঙ্গেরি, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, জার্মানি, সুইডেন, ব্রাজিল, মেক্সিকো, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, নাইজেরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ এ দেশগুলোতে বাস করে। নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ—সব ধরনের আয়ের মানুষের মধ্যেই সন্তানের প্রতি আগ্রহ কমেছে। জরিপে দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজনে একজন মানুষ তাদের কাঙ্ক্ষিতসংখ্যক সন্তান নিতে পারেননি বা সন্তানের পরিকল্পনাই করেননি।

এই জরিপে তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক থেকে শুরু করে প্রজননক্ষম সময় পেরিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, জন্মহারের এই বিপর্যয়কর পতন শুধু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সংখ্যা কমাবে না, বিশ্ব অর্থনীতি, জনসংখ্যার ভারসাম্য ও সমাজ কাঠামোতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

এ অবস্থায় নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশে জাতিসংঘের বার্তা, শিশু লালনের ব্যয় কমানো, কর্মজীবী মায়েদের সহায়তা, পরিবারবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার ছাড়া সামনে সংকট আরও গভীর হবে।

মিমিয়া

×