ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

অর্থপাচার বিষয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন

অভিযুক্তদের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ হতে পারে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১০, ১৩ জুন ২০২৫

অভিযুক্তদের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ হতে পারে

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বিদেশে অবৈধভাবে অর্থ পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী ধনকুবেরদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতার পথে এগোতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে এমনটিই বলেছেন সরকারের সম্পদ পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক বিষয়ক দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে আহসান এইচ মনসুর বলেন, অপেক্ষাকৃত লঘু ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে আর্থিক সমঝোতা ‘একটি বিকল্প’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অর্থাৎ বিদেশে অর্থপাচারে অভিযুক্ত ধনকুবেরদের সঙ্গে আর্থিক ‘সমঝোতায়’ পৌঁছানোর ইঙ্গিত দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি বলেন, ‘যদি লঙ্ঘনের ধরন অপেক্ষাকৃত হালকা হয়... তাহলে আমরা দেওয়ানি মামলার পথে যাব এবং সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই একটি আর্থিক সমঝোতা হতে পারে।’ অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর মামলাগুলোর ক্ষেত্রে আর্থিক সমঝোতা ‘অন্যতম বিকল্প’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে তিনি কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেননি।
গভর্নর আরও জানান, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার করতে আন্তর্জাতিক আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রায় ১০ কোটি ডলার সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাধ্যমে এসব অর্থ পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতবছরের আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া এক গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতনের পর ক্ষমতায় আসেন তিনি।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার দাবি করেছে, আগের সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বাংলাদেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। এর মধ্যে  কিছু অভ্যন্তরীণ ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়েছে এবং শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় বিদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। 
এ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ পুনরুদ্ধারে ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক মামলা পরিচালনায় তিনি ১০ কোটি ডলার পর্যন্ত অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্য রাখছেন।
শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ১১টি পরিবারকে ঘিরে উচ্চ অগ্রাধিকার সম্পন্ন তদন্ত শুরু হয়েছে। দেশে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে এবং বিদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ে পাচারকৃত অর্থ শনাক্তের কাজ চলছে।
এই সপ্তাহে লন্ডন সফরকালে সম্পদ উদ্ধারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে ‘আরও আন্তরিক সহযোগিতা’ কামনা করেছেন। তিনি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘এটি চুরি করা টাকা’ এবং যুক্তরাজ্য সরকারের এই অর্থ শনাক্ত ও ফেরত পাঠাতে ‘আইনি ও নৈতিক দায়িত্ব’ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা আহসান মনসুর ও অন্য সরকারি কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মিত্ররা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ দখল করে ভুয়া ঋণ নিয়ে কিংবা সরকারি অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলো থেকে আত্মসাৎ করে দেশের বাইরে কোটি কোটি টাকা পাচার করেন।
এই অর্থ উদ্ধারের কৌশলের অংশ হিসেবে সরকার এখন লিটিগেশন ফান্ডিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনায় আছে, এমন প্রতিষ্ঠান যারা মামলা পরিচালনার ব্যয়ভার বহন করে, বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ বা নিষ্পত্তির একটি অংশ পায়।
এ প্রসঙ্গে মনসুর বলেন, ‘আমরা লিটিগেশন ফান্ডিংয়ের দিকে নজর দিচ্ছি এবং এ নিয়ে খুবই ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। আমরা চাই, যতটা সম্ভব অর্থ এ উৎস থেকে জোগাড় করা।’
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক লিটিগেশন ফান্ডার (মামলার অর্থ জোগানদাতা) অমনি ব্রিজওয়ে বলেছে, তাদের নির্বাহীরা এ বছরের প্রথমার্ধে ঢাকায় সফর এবং আহসান মনসুরসহ ১৬টির বেশি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে ‘কয়েক দফা আলোচনা’ করেছেন।
অমনি ব্রিজওয়ের এনফোর্সমেন্ট বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উইগার উইলিঙ্গা বলেন, ‘আমরা, বিশেষ করে বিদেশে অবৈধভাবে পাচার করা অর্থ সংশ্লিষ্ট খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যাংক খাতকে সহায়তা করতে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছি।’
সরকারের নির্দেশনায় তৈরি ও গত ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত একটি অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রে অনুমান করা হয়, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন (২৩ হাজার ৪০০ কোটি) ডলার পাচার হয়েছে।

×