
ছবি: সংগৃহীত
বাজারে মুরগির ডিম দুই ধরনের দেখা যায় – একটির খোলস সাদা, অন্যটির লালচে বা বাদামি। অনেকেরই প্রশ্ন: এই দুই ধরনের ডিমের মধ্যে কোনটি বেশি পুষ্টিকর? দাম বেশি হওয়ায় অনেকে মনে করেন লাল ডিমে পুষ্টি বেশি। আবার কারও মতে, সাদা ডিম খেতে বেশি ভালো। তবে প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞান ও পুষ্টিবিদরা কী বলছেন?
কেন হয় খোলসের রঙের ভিন্নতা?
মুরগির ডিমের রঙ নির্ভর করে তার জাত ও জিনগত বৈশিষ্ট্যের ওপর। সাধারণত সাদা পালকের মুরগি সাদা ডিম পাড়ে, আর গাঢ় রঙের পালকযুক্ত মুরগির ডিম হয় লালচে বা বাদামি। উদাহরণস্বরূপ, সাদা লেগহর্ন জাতের মুরগি সবসময় সাদা ডিম দেয়। অন্যদিকে, প্লাইমাউথ রকস বা রোড আইল্যান্ড রেড জাতের মুরগি বাদামি ডিম দেয়।
আসলে, সব ডিমের খোলসই তৈরি হয় সাদাভাবেই। মুরগির জরায়ুর শেষ ধাপে ‘শেল গ্ল্যান্ড’ থেকে এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ খোলসে মিশে গিয়ে রঙ তৈরি করে। সাদা ডিমে এই রঞ্জক যুক্ত হয় না বলেই খোলসটি সাদা থাকে।
লাল ডিমের দাম বেশি কেন?
লাল ডিম দেওয়া মুরগি সাধারণত আকারে বড় ও বেশি খাদ্যপ্রবণ। এসব মুরগির খাদ্য খরচ বেশি হওয়ায় তাদের ডিম উৎপাদন খরচও বেশি পড়ে। তাই লাল ডিমের দামও তুলনামূলক বেশি। সাদা পালকের মুরগির খাদ্যপ্রয়োজন ও রক্ষণাবেক্ষণ কম হওয়ায় তাদের ডিমের দাম কম হয়।
ডিমের রঙে কি পুষ্টি বদলায়?
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ডিমের খোলসের রঙের সঙ্গে পুষ্টিগুণের কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ, সাদা হোক বা লাল – ডিমের পুষ্টিমূল্য প্রায় একই।
নিউ ইয়র্কের এক গবেষণা দল জানিয়েছে, লাল ডিমে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সামান্য বেশি থাকলেও সেটা এতটাই অল্প যে তা বাস্তবে তেমন কোনও প্রভাব ফেলে না।
ডিমের পুষ্টিগুণ নির্ধারক কী?
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, একটি ৫০ গ্রাম ওজনের ডিমে থাকে প্রায় ৭২ ক্যালোরি এবং ৪.৭৫ গ্রাম ফ্যাট – যা সাদা ও লাল উভয় রঙের ডিমেই প্রায় সমান।
তবে মুরগির খাবার ও পরিবেশই ডিমের প্রকৃত পুষ্টিগুণ নির্ধারণ করে। যেমন:
ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ ফিড খাওয়ানো হলে ডিমে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বাড়ে।
ভিটামিন এ ও ই যুক্ত খাবার খাওয়ালে ডিমে এই ভিটামিন বেশি থাকে।
প্রাকৃতিকভাবে মুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা মুরগির ডিমে সাধারণত ভিটামিন, খনিজ ও ভালো ফ্যাট বেশি থাকে।
খামার পালিত মুরগির ডিমে ফ্যাট তুলনামূলক কম হলেও প্রোটিন বেশি থাকে।
পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞদের মতে, গৃহস্থালি মুরগি বেশি রোদে থাকে বলে তাদের ডিমে ভিটামিন-ডি বেশি থাকে। তবে ভালো মানের খামারে উচ্চমানের ফিড খাওয়ানো হলে সেই ডিমেও পুষ্টিগুণ উচ্চ হতে পারে।
ডিমের কুসুম ও পুষ্টি
ডিমের কুসুমের রঙ গাঢ় হলে সেটির পুষ্টিগুণ সাধারণত বেশি হয়। এতে ভিটামিন এ, ক্যারোটিন ও খনিজ উপাদান বেশি থাকে এবং স্বাদও ভালো হয়। কুসুমের রঙ নির্ভর করে মুরগির খাদ্যাভ্যাসের ওপর। অনেকে ক্যারোটিনয়েড ইনজেকশন বা লাল ক্যাপসিকাম দিয়ে কুসুমের রং গাঢ় করেন।
সাদা ডিম আর লাল ডিম – পুষ্টিগুণে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। আসল পার্থক্য নির্ভর করে মুরগির খাবার ও জীবনযাপনের ধরনে। তাই রঙ দেখে নয়, ডিমের উৎপত্তি ও মান দেখে পুষ্টি বিবেচনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
সুতরাং, সাদা হোক বা লাল – পাতে পড়া ডিমে মন দিন, রঙ নয়!
এসএফ