
ছবিঃ সংগৃহীত
শিশুকে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে মাটিতে খেলা অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধু কুসংস্কার নয়—এখনকার বৈজ্ঞানিক গবেষণাও বলছে, ছোটবেলায় প্রকৃতির জীবাণুর সংস্পর্শে আসা শিশুদের ভবিষ্যতে অ্যালার্জি, হাঁপানি বা অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
🧬 মাটিতে খেলার বিজ্ঞানসম্মত কারণ
লাইভ সায়েন্স-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশু যখন প্রকৃতির সঙ্গে সংযুক্ত হয়, তখন তার শরীর ভালো ও খারাপ জীবাণু পার্থক্য করতে শেখে। এর ফলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিকাশ হয়। এটি বুঝতে পারে কোন জীবাণু উপকারী, আর কোনটি ক্ষতিকর।
🦠 গাট মাইক্রোবায়োম গঠনে ভূমিকা রাখে
মানবদেহে থাকা গাট মাইক্রোবায়োম অর্থাৎ অন্ত্রের ক্ষুদ্র জীবাণুরা হজম প্রক্রিয়া, ভিটামিন উৎপাদন এবং রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিশুদের জীবনের প্রথম বছর এই গাট মাইক্রোবায়োম গঠনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে যদি শিশু বিভিন্ন প্রাকৃতিক জীবাণুর সংস্পর্শে আসে, তবে তার ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়।
👶 প্রাকৃতিক জন্ম ও বুকের দুধের গুরুত্ব
স্বাভাবিক ডেলিভারিতে জন্ম নেওয়া শিশুরা মায়ের দেহ থেকে প্রথম জীবাণু পায়, যা তাদের ইমিউন সিস্টেমকে গঠন করতে সহায়তা করে। এরপর বুকের দুধ এবং প্রকৃতির সংস্পর্শ (মাটি, গাছ, পশু ইত্যাদি) ইমিউন সিস্টেমকে প্রশিক্ষণ দেয়।
🐶 পোষা প্রাণী ও খামার পরিবেশে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু গ্রামীণ বা কৃষিনির্ভর এলাকায় বড় হয়, বা যাদের বাড়িতে পোষা প্রাণী রয়েছে, তাদের মধ্যে অ্যালার্জি বা হাঁপানির ঝুঁকি অনেক কম। কারণ, তারা ছোট থেকেই বিভিন্ন উপকারী জীবাণুর সংস্পর্শে থাকে।
🌱 ওল্ড ফ্রেন্ডস হাইপোথিসিস: ‘পুরনো বন্ধু’ জীবাণুদের সংস্পর্শ জরুরি
এই ধারণা অনুযায়ী, শিশুরা ছোটবেলায় যত বেশি উপকারী জীবাণুর সংস্পর্শে আসে, তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তত শক্তিশালী হয়। এসব জীবাণুকে বলা হয় “পুরনো বন্ধু”, যারা শরীরের ক্ষতি না করে বরং উপকার করে।
⚠️ অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতাও হতে পারে বিপদজনক
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, শিশুকে একেবারে জীবাণুমুক্ত পরিবেশে রাখলে তার ইমিউন সিস্টেম ঠিকমতো বিকশিত হয় না। ফলে ভবিষ্যতে সে অল্পতেই অসুস্থ হতে পারে। তাই সঠিক বয়সে মাটিতে খেলা, গাছে ছোঁয়া বা পশুদের সঙ্গে থাকা শিশুর জন্য উপকারী হতে পারে।
📝 শেষ কথা
শিশুর সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য তাকে প্রকৃতির সঙ্গে সংযুক্ত রাখা জরুরি। মাটি, গাছ, পশুপাখি—সবকিছুই তার শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে গড়ে তোলে। অতএব, শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার চিন্তা না করে, তাকে নিয়ন্ত্রিত ও নিরাপদভাবে প্রকৃতির সঙ্গে বড় হওয়ার সুযোগ দিন।
ইমরান