ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ত্বকের পানিশূন্যতা  ও করণীয়

ডা. লুবনা খন্দকার

প্রকাশিত: ০০:৪৯, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

ত্বকের পানিশূন্যতা  ও করণীয়

ত্বকের পানিশূন্যতা  ও করণীয়

রমজানে রোজা রাখার কারণে অনেকের দেহেই পানির ঘাটতি দেখা  দেয়। আর পানি শূন্যতার কারণে ত্বকের ক্ষতি হয়। ত্বক  হয়ে পরে শুষ্ক। এর পাশাপাশি ত্বক উজ্জ্বলতা হারায়। একজন রোজাদারের শরীরে পানিশূন্যতার পরিমাণ নির্ভর করে প্রধানত একজন ব্যক্তি ইফতার থেকে শুরু করে সেহরি পর্যন্ত কতটুকু পানি পান করেছেন তার উপর। অর্থাৎ তিনি রোজা থাকা অবস্থায় কি পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম করেন এবং  তিনি যেখানে অবস্থান করছেন সেখানকার আবহাওয়ার উপর।

পানি এবং খাবারের স্বল্পতা, ও দৈনন্দিন রুটিনের পরিবর্তন এবং পর্যাপ্ত ঘুমের ঘাটতির কারনে রমজান মাসে আমাদের শারীরিক ও মানসিক এক ধরনের চাপ থাকে। ক্লান্তিহীনতা দেখা দেয়। এছাড়াও  চোখের চারপাশে  ডার্কসার্কেল অর্থাৎ কালো দাগ দেখা যায়। শরীর পানি শূন্য হওয়ার কারনে চোখের ক্লান্তি ফুটে ওঠে। 
পানিশূন্যতার লক্ষণ : রোজা থাকা অবস্থায় যদি শরীর পানিশূন্য হয়ে পরে তাহলে দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া, চোখ গর্তে চলে যাওয়া, প্রস্রাবে ইনফেকশন ও প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া, মাথাব্যথা ও ঝিমঝিম, কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া, দুর্বলতা, শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া, ত্বক শুকিয়ে যাওয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। পানির অভাব দেখা দিলে শরীরে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স হয়। অর্থাৎ শরীরে তরলরূপে থাকা বিভিন্ন লবণ যেমন, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম, ফসফেট, পটাসিয়ামের মতো বিভিন্ন উপাদানের অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। এই অসামঞ্জস্যতা বেড়ে গেলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
রোজায় যা খাবেন : পানিশূন্যতা থেকে বাঁচতে রমজানে শুধু পানি পরিমাণমতো খেলেই চলবে না। এ ক্ষেত্রে বেশি বেশি অন্যান্য তরল খাবার  খেতে হবে, যাতে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স না হয়। যেমনÑ ডাবের পানি, চিনির শরবত, গুড়ের শরবত, লাচ্ছি, দুধ, স্যুপ খাওয়া যেতে পারে। পানিশূন্যতা দেখা দিলে স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে। পানিশূন্যতা খাবার দিয়েও পূরণ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে খাবার হতে পারে মাছের ঝোল, ডাল, দুধ।

এতে কিছুটা পানির চাহিদা পূরণ হবে। ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্সে ঠিক রাখতে পানির চাহিদা পূরণের জন্য ফলের রস খেতে পারেন। এটি ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্সে সাহায্য করবে। এখন তরমুজ, বাঙি,  কমলা, বেলসহ নানা মৌসুমি ফল আছে বাজারে। এসব ফল দিয়ে শরবত বানিয়েও খেতে পারেন। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, ফলের জুস ইফতারের সময় সরাসরি খাওয়া যাবে না। পানি মিলিয়ে  খেতে হবে। সারা দিন রোজা রেখে খালি পেটে ফলের রস খেলে অ্যাসিডিটিসহ নানা সমস্যা হতে পারে।
ত্বক সতেজ রাখতে : একজন রোজাদার ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করবেন। ত্বকের ধরন বুঝে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। অতিরিক্ত শর্করা, লবণাক্ত খাবার, ফলমূলের কনসেনট্রেটেড জুস পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। বেশি বেশি শাক-সবজি, ফলমূল খাওয়া যেগুলোতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বেশি থাকে। আট ঘণ্টার মতো ঘুমানোর চেষ্টা করা।

দিনের বেলায় বাইরে বের হলে রোদ এড়িয়ে চলা প্রযোজনে ছাতা ব্যবহার করা। আই-কেয়ার ক্রিম ব্যবহার করা। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফেস-সিরাম এবং হায়ালুরনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ প্রসাধন ব্যবহার করা যেতে পারে। সব ধরনের মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকা। ইফতারের আধ ঘণ্টা পর অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট  হাঁটা বা শারীরিক ব্যায়াম করা।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, বাড়ি -৩ রোড-৪, ব্লক এ, মিরপুর-৬, ঢাকা। 
ফোন : ০৯৬৭৮৮২২৮২২

×