ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রোজা ও ডায়াবেটিস

লে. কর্নেল ডা: নাসির উদ্দিন আহমদ

প্রকাশিত: ০০:২৭, ২১ মার্চ ২০২৩

রোজা ও ডায়াবেটিস

বিশ্বে ১৫০ মিলিয়নের বেশি মুসলিম নর-নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত

বিশ্বে ১৫০ মিলিয়নের বেশি মুসলিম নর-নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এদের মাঝে বিপুলসংখ্যক মানুষ রোজাব্রত পালন করে। রোজার সময় খাদ্য এবং ওষুধ গ্রহণে সময়সূচির তারতম্য ঘটে। নিদ্রা, শরীরচর্চা, দৈনন্দিন রুটিন বদলে যায়। ইনসুলিনসহ কিছু ওষুধের মাত্রা বদলে নিতে হয়।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত অনেকের রোজা রাখার ক্ষেত্রে তেমন ঝুঁকি না থাকলেও কারও কারও এমনকি জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। রোজা রাখলে যেসব ডায়াবেটিস রোগীদের জীবনের ঝুঁকি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাদের রোজা না রাখাই উত্তম। রোজার পূর্বেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 
যাদের রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ
ডায়াবেটিস রোগীদের নিচের যে কোনো একটি উপাদান বিদ্যমান থাকলে তারা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
* রোজা শুরুর তিন মাসের মাঝে যাদের তীব্র মাত্রার হাইপোগ্লাইসেমিয়া কিংবা ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিসের মতো জটিলতা তৈরি হয়েছে।
* যারা বারবার হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়
* হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে যারা তা বুঝতে পারে না
* যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ খুব নি¤œমানের
* যাদের তিন বা ততোধিকবার ইনসুলিন নিতে হয় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য
* গর্ভবতী মা
* কিডনি বিকল হওয়ার জন্য যাদের ডায়ালাইসিস নিতে হচ্ছে।
খাদ্য তালিকায় নজর দিন
রোজার সময় খাদ্য তালিকায় নজর দিতে হবে, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে। নিচের বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।
* ইফতারে পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ করতে হবে পানি শূন্যতা দূর করার জন্য।
* মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন জিলাপি, চিনির শরবত, মিষ্টান্ন এবং ভাজাপোড়া খাবার কাবাব, পাকুড়া, পরাটা এগুলো ইফতারের সময় পরিহার করতে হবে।
* অতিরিক্ত মিষ্টি ফল গ্রহণ করা যাবে না। 
* শসা, খিরা, পেয়ারা, ডাবের পানি, লেবুর পানি অন্যান্য টক জাতীয় ফল ইচ্ছেমতো খাওয়া যাবে।
* সেহরি অবশ্যই বাদ দেওয়া যাবে না।
* সেহরি ব্যতিরেকে রোজা রাখা অনুচিত।
* সেহরি যতটা দেরিতে সম্ভব গ্রহণ করতে হবে।
রোজা রেখে শরীরচর্চা
রোজা রেখে শরীরচর্চা করা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে পানিশূন্যতা এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া না হয়। রোজার সময় দৈনন্দিন স্বাভাবিক কর্মকা- অবশ্যই পরিচালনা করতে হবে। দিনের বেলায় বিশেষত শেষ বিকেলে অতিরিক্ত শরীর চর্চা না করাই উত্তম। ইফতারের দুই ঘণ্টা পর শরীরচর্চার জন্য উপযুক্ত সময়। তবে তারাবিহ নামাজ শরীর চর্চার অভাব পূরণ করতে পারে।
জানা থাকা দরকার
* রোজার আগেই ওষুধ ও ইনসুলিনের মাত্রা পরিবর্তন করে নিতে হবে।
* রোজা রেখে রক্তের পরীক্ষা করলে রোজার ক্ষতি হয় না। 
* সেহরির ২ ঘণ্টা পর, ইফতারের এক-দুই ঘণ্টা আগে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নির্ণয় করলে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার অস্তিত্ব বোঝা যাবে।
* ইফতার কিংবা ডিনারের দুই ঘণ্টা পর পরীক্ষা করলে ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণের মাত্রা বোঝা যাবে।
* দিনের যে কোনো সময় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৩.৩ এর নিচে নেমে গেলে কিংবা সেহরির প্রথম কয়েক ঘণ্টার মাঝে রক্তে গ্লকোজের মাত্রা ৩.৯ এর নিচে নেমে গেলে কিংবা গ্লুকোজের মাত্রা ১৬.৭-এর উপরে উঠে গেলে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে।

লেখক : মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট,
সিএমএইচ, ঢাকা।
 চেম্বার : আল-রাজী হাসপাতাল (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭৫৬১৭৩৭৬৫, ০১৭২৬০৫০৯১২

×