ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পাকস্থলী ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা

ডা. মো. সেতাবুর রহমান

প্রকাশিত: ০১:৩০, ৩ জানুয়ারি ২০২৩

পাকস্থলী ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা

পাকস্থলীর ক্যান্সার কিভাবে বুঝবেন

পাকস্থলীর ক্যান্সার কিভাবে বুঝবেন
পাকস্থলী বা স্টমাক ক্যান্সারের হার বেড়ে চলেছে। এর লক্ষণ প্রথমে প্রকাশ পায় না বা প্রকাশের ভঙ্গি অনেকটা গ্যাস্ট্রিক বা সাধারণ সমস্যার মতো হয়। এতে শনাক্ত হতে দেরি হয়ে যায়। এ বিষয়ে সচেতনতা দরকার। নভেম্বর মাস হচ্ছে লিভার বা পাকস্থলীর ক্যান্সার সচেতনতা তৈরি মাস। 
পাকস্থলী খাদ্য হজম করে। এরপর পাচনতন্ত্রের অন্যান্য অঙ্গ, যেমন ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রে পাঠায়। যখন পাকস্থলীর মধ্যকার বা দেয়ালের স্বাস্থ্যকর কোষগুলো নিজেদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে এবং ক্যান্সারে পরিণত হয়, তখন টিউমার তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত ধীরে ধীরে ঘটে।
পাকস্থলীর ক্যান্সার বহু বছর ধরে বাড়ে। সাধারণত ষাটোর্ধ্ব মানুষকে এ ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। নারীর তুলনায় পুরুষ পাকস্থলী ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না করা হলে পাকস্থলী বা রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে পাশের অঙ্গগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ছড়ায় যকৃতে ও পেটের অভ্যন্তরে।
ধরনগুলো 
পাকস্থলী ক্যান্সারের কয়েকটি ধরন রয়েছে। অ্যাডেনোকার্সিনোমা, লিম্ফোমা, কার্সিনয়েড টিউমার। পাকস্থলীতে ক্যান্সার কোষের বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, পাচনতন্ত্রের অন্যান্য অংশে টিউমার, পাকস্থলীর পলিপস, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জেনেটিক সিনড্রোম যেমন লিঞ্চ সিনড্রোম ও লি-ফ্রোমেনি সিনড্রোম। এ ছাড়া তামাক বা ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন, অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন, খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া এবং ফলমূল ও শাকসবজি না খাওয়া।
লক্ষণ
প্রাথমিক লক্ষণ হলো দীর্ঘদিন ধরে বদহজম ও পেটের অস্বস্তি হওয়া। খাওয়ার পর পেট ফুলে যাওয়ার অনুভূতি। হালকা বমি বমি ভাব, ক্ষুধামান্দ্য, পেটে জ্বালাপোড়া ভাব।
গুরুতর লক্ষণ হলো মলের সঙ্গে রক্তপাত ও রক্তবমি। কোনো কারণ ছাড়াই ওজন হ্রাস। পেটব্যথা। চোখ ও ত্বক হলুদ হওয়া। খাবার গিলতে সমস্যা হওয়া।
চিকিৎসা
অবস্থা বুঝে অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। টিউমার বৃদ্ধি ও আকারের ওপর নির্ভর করে পাকস্থলীর একটি অংশ বা পুরোটা সার্জারির মাধ্যমে সরিয়ে ফেলার দরকার হতে পারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন সাধারণত সার্জারির পাশাপাশি চলতে থাকে।
প্রতিরোধ
জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে পেটের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো যায়। নিজেকে ফিট রাখতে প্রতিদিন ব্যায়াম করা উচিত।
প্রতিদিনের খাবারে বেশি করে ফল ও শাকসবজি রাখা।
অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার ও ভাজাপোড়া না খাওয়া।
ধূমপান ও অ্যালকোহল বাদ দেওয়া।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ না খাওয়া।
খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও রান্না করে খাওয়া।
নিজে নিজে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। সুচনায় ধরলে পড়া ক্যান্সার রোগ যায় যে সারা। বাংলাদেশেই এখন ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। এ নিয়ে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারসহ বেশ কিছু আধুনিক হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। চিকিৎসাও আন্তর্জাতিক মানের। তবে সঠিক নিয়ম ও সময় মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভালো থাকা যায়। 

লেখক : অধ্যাপক সিনিয়র কন্সালট্যান্ট, সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার, ধানম-ি, ২৬, গ্রীন রোড, ধানম-ি, ঢাকা। হট লাইন : ০৯৬৬৬৭১০০০১,
১০৬৬৬

×