ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ন্যাশনাল স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম জরুরি

আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ক্যান্সার রোগী

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ৭ ডিসেম্বর ২০২২

আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ক্যান্সার রোগী

ক্যান্সার

দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে অসংক্রামক রোগীর সংখ্যা। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। শুধু জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট (এনসিআরআই) ও হাসপাতালেই গত তিন বছরে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ৮৩ হাজার ৭৯৫ জন রোগী। যাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৭৩৩ জন রোগীর শরীরে, যা শতাংশের হিসাবে ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ।

হাসপাতালটির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত রোগীদের মধ্যে ১৯ হাজার ৫৪৬ জন (৫৫ শতাংশ) পুরুষ ও  ১৬ হাজার ১৮৭ জন (৪৫ শতাংশ) নারী। পুরুষদের মধ্যে শীর্ষ ক্যান্সার ফুসফুস, যা মোট রোগীর প্রায় ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আর নারী রোগীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী। যা শতাংশের হিসাবে ২ দশমিক ৯ শতাংশ।
বুধবার সকালে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কর্তৃক প্রকাশিত ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের ক্যান্সার রেজিস্ট্রি রিপোর্টে এসব তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শীর্ষ দশ ক্যান্সারের মধ্যে আছে যথাক্রমে ফুসফুস ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ, স্তন ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ, জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত ১০ দশমিক ৯ শতাংশ, খাদ্যনালি ক্যান্সারে আক্রান্ত ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত ৪ দশমিক ৩ শতাংশ, লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, লসিকা গ্রন্থির ক্যান্সারে আক্রান্ত ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

শুধু তাই নয়, মলাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত রয়েছেন ৩ দশমিক ১ শতাংশ রোগী। এ ছাড়া গালের ক্যান্সার রয়েছে ৩ শতাংশের ও পিত্তথলীর ক্যান্সার রয়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ রোগীর। জিহ্বার ক্যান্সার রয়েছে ২ দশমিক ১ শতাংশের ও মূত্রাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত ২ দশমিক ১ জন। প্রতিষ্ঠানটির মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রিপোর্টের তথ্য তুলে ধরেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জহিরুল ইসলাম। এসময় তিনি বলেন, এই তিন বছর যেসব রোগী এসেছেন তাদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী সবচেয়ে বেশি।

এরপর আছে স্তন, জরায়ুমুখ, অন্ত্র, পাকস্থলী, লিভার, লিম্ফ নোড, মলদ্বার, মুখগহ্বর এবং পিত্তথলির ক্যান্সার। এর মধ্যে পুরুষরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ফুসফফুসের ক্যান্সারে, আর নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন স্তন ক্যান্সারে। বিভাগওয়ারি ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ থেকে রোগী বেশি আসে বলেও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে ক্যান্সার এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, আমরা আজ অনলাইন ভার্সন প্রকাশ করছি। পুরো রিপোর্টটি খুব শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে। ন্যাশনাল ক্যান্সার রেজিস্ট্রিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে যুক্ত করতে হবে। তার চেয়ে বেশি জরুরি ন্যাশনাল ক্যান্সার স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম।
এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, অসংক্রামক রোগে যদি ৬৭ শতাংশ মানুষ মারা যায় তা হলে তার ১০ শতাংশ ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে।

সমস্যা হচ্ছে আমাদের প্রকৃত ক্যান্সার রোগী কতজন সেই সংখ্যা আমরা জানি না। আমাদের কাছে তথ্য আছে, কিন্তু ছড়িয়ে ছিটিয়ে। সামগ্রিক যে তথ্য দরকার একটি দেশের জন্য সেটা কিন্তু আমরা জানি না। ধরে নেওয়া হচ্ছে, প্রতিবছর দুই লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে এবং তার ৬০ শতাংশের বেশি মারা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে ক্যান্সার কন্ট্রোল স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা ছিল ২০১৫ সাল পর্যন্ত। কিন্তু সেখানে স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি করণীয়টা ছিল না। না থাকার কারণে ক্যানসার রেজিস্ট্রি একটু পিছিয়ে পড়েছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে যারা আসছেন তাদের একটি চিত্র তুলে ধরছে এই রিপোর্ট। ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে গেলে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে শিল্পায়ন, আধুনিকায়ন, কীটনাশকের ব্যবহার, যেকোনো দূষণের একটা প্রভাব আছে। আমাদের লাইফস্টাইলের জায়গা প্রতিরোধ করার একটা বড় সুযোগ আছে।

কিন্তু একটা স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম করে আমরা কিন্তু শুরুতেই শেষ করতে পারি। ক্যান্সারের কারণে একটা মানুষের জীবনে যে কষ্ট হচ্ছে সেটি লাঘব করতে পারি। আমাদের অনেকগুলো জায়গা আছে যেখানে কাজ করার সুযোগ আছে। এই ডেটাগুলো নিয়ে কাজ করলে আমরা জানতে পারি ক্যান্সার ট্রেন্ড কোন দিকে যাচ্ছে।

×