ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

গণঅভ্যুত্থানের সাক্ষ্যবহ নাটক ‘৪০৪ : নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি’

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:২২, ১১ জুলাই ২০২৫

গণঅভ্যুত্থানের সাক্ষ্যবহ নাটক ‘৪০৪ : নাম  খুঁজে পাওয়া  যায়নি’

‘৪০৪ : নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি’ নাটকের দৃশ্য

চিরকালই জীবনের কথা উঠে এসেছে থিয়েটারে। উচ্চারিত হয়েছে সংকটের কথা। উন্মোচিত হয়েছে সমাজ বা রাষ্ট্রের অসংগতির দৃশ্যচিত্র। গল্পের গহীনে প্রকাশিত হয়েছে মানুষের অধিকারের কথা।  যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে ন্যায্যতার দাবিতেও সোচ্চার হয়েছে থিয়েটার। সেই  স্রোতধারায় ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানকেও আলিঙ্গন করেছে মঞ্চনাটক। গণঅভ্যুত্থানের খর স্রোতা সময়কে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে ১১টি নতুন নাটক। ‘রিমেম্বারিং মনসুন রেভ্যুলেশন’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় নাটকগুলো মঞ্চে এনেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা বিভাগ। পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শিল্পকলা একাডেমির নতুন নাট্য প্রযোজনা নির্মাণের অংশ শুক্রবার সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় ‘৪০৪ : নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি’। নাট্যদল ফোর্থ ওয়াল থিয়েটার প্রযোজিত প্রযোজনাটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয় একাডেমির  জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে। নাটকটির রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা নিয়েছেন মো. লাহল মিয়া।  ড্রামাতুর্গ ও পরিকল্পনায় ছিলেন আব্দুল মুনিম তরফদার।
ডিস্টোপিয়ান শৈলীতে নির্মিত নাটকটি একটি স্বৈরশাসিত রাষ্ট্রে ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় প্রপাগান্ডা, দমন-পীড়ন এবং নাগরিক প্রতিরোধের এক কাব্যিক ভাষ্য।  যেখানে স্বাধীনতা হয়ে ওঠে পণ্য, কবিতা হয় রাষ্ট্রদ্রোহ, আর শিশুদের রং হয় বিপ্লবের প্রতীক। নাটকের কাহিনীর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন এক শিক্ষক, এক শিশু এবং এক মায়ের আর্তি-যেখান থেকে জন্ম নেয় নতুন সম্ভাবনার আলো। ‘৪০৪: নাম খুঁজে পাওয়া যায় নি’ তাই শুধু একটি নাটক নয়-এটি রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্পর্ক পুনর্নির্মাণের এক মঞ্চভাষ্য।
প্রযোজনাটি সম্পর্কে নির্দেশক মো. লাহল মিয়া বলেন,  ৪০৪ : নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি নাটকটি  কেবল প্রযুক্তিগত বার্তা নয়, বরং একটি রাষ্ট্রিক বাস্তবতা ও মানবিক ট্র্যাজেডি। অন্যদিকে এটি একটি নিরীক্ষাধর্মী নাটক। আমরা চেষ্টা করেছি সময়ের ভাষা খুঁজে পেতে। আর সময়ের সে ভাষায় ব্যঙ্গ, থ্রিল,  শোক, প্যাথস ও র‌্যাপ পাশাপাশি দাঁড়ায়। ভাষার পাশাপাশি চতুর্থ প্রাচীর ভাঙা হয়েছে,  যেন দর্শক নিজেই নাটকের শরিক হয়ে ওঠে। 
প্রযোজনাটি সম্পর্কে ড্রামাতুর্গ আব্দুল মুনিম তরফদার বলেন,  আমরা এই প্রযোজনায় ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই’-এই বার্তার মধ্য দিয়ে সমকালীন বিশৃঙ্খলা ও ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে চেয়েছি। ব্রেখটের এলিয়েনেশন ইফেক্ট বা বিচ্ছিন্নকরণ কৌশলের অনুশীলন দর্শকের আবেগ নয়, যুক্তি ও দায়বদ্ধতাকে আহ্বান জানায়। একইসঙ্গে পিটার হ্যান্ডকের অফেন্ডিং দ্য অডিয়েন্স নাটকের সংলাপের অংশবিশেষের সংযোজন নাটকের কাঠামোয়  যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। সেই নবযাত্রায় দর্শক নিজেই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে পড়ে-সে এই যাত্রার দর্শক, না অংশগ্রহণকারী?
এই নাট্য প্রযোজনায় বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আব্দুল মুনিম তরফদার, এঞ্জেলিনা পিয়ানা  রোজারিও, এ এইচ এম সাহেদুল আলম, ফারিহা তাসনীম হৃদি, হাদী আকাশ,  শেখ সায়েম  হোসেন, রাইসুল ইসলাম রোমান, তাসনোভা সানজিদা, ইসরাত মীম,  মো. মাহাবুব আলম হৃদয় এবং জান্নাতুল ফেরদৌস  তোয়া।
প্রযোজনাটির সহকারী নির্দেশকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সংগীত পরিকল্পনা করেছেন  মো. মনিরুজ্জামান।  প্রপসে কাজ করেছেন মোহাইমিন দ্বীপু। মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন  সৈয়দ  মো. যুবায়ের। আলোক প্রক্ষেপণে ছিলেন সৈয়দ মো. যুবায়ের ও তারিক ইব্রাহীম সজীব।  

প্যানেল

×