ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

ধানমন্ডির শিল্পালয়ে পাপা নুরুন নাহারের ‘আমি এক যাযাবর’

​​​​​​​সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৩২, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ধানমন্ডির শিল্পালয়ে পাপা নুরুন নাহারের ‘আমি এক যাযাবর’

ধানমন্ডির সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে আমি এক যাযাবর শীর্ষক প্রদর্শনীর ছবি দেখছেন এক দর্শনার্থী

বৈচিত্র্যের অনুসন্ধানী এক চিত্রকর পাপা নুরুন নাহার। সেই সুবাদে শিল্পকর্ম সৃজনে স্থির থাকে না তার বিষয়। একইভাবে মাধ্যমের প্রয়োগেও বিচিত্র পথে ধাবিত হয় তার ক্যানভাস। অন্যদিকে মূর্ত থেকে বিমূর্ত রীতিতে উদ্ভাসিত হয় চিত্রপট। সেই প্রেক্ষাপটে কখনো চারপাশের চেতনা জগৎ উঁকি দেয় এই চিত্রশিল্পীর চিত্রকর্মে। তেমনই  এক ছবিতে দিগন্ত বিস্তৃত ময়দানে খাদ্যের সন্ধানে সমবেত হয় একঝাঁক কাক। আরেকটি ক্যানভাসে বর্ণিল পেখম মেলে মনের সুখে ঘুরে বেড়ায় ময়ূর। দীঘল কেশের নারীকে দেওয়ালে হেলান দিয়ে সূচি কর্মে নিমগ্ন থাকার দৃশ্যের মাঝে উঠে এসেছে চিরচেনা গ্রামীণ জীবন।

ভিন্নধর্মী টেক্সচারের মাঝে বিড়ালের বিশ্রাম নেওয়ার দৃশ্যকল্প শিল্পরসিকের নয়নে ছড়িয়ে দেয় মুগ্ধতার বীজ। এর বাইরে বিমূর্ত রীতির কাজে উঠে এসেছে কিংবদন্তি বিপ্লবী চে গুয়েভারার প্রতিচ্ছবি। এই ছবিতে চমৎকারভাবে উপস্থাপিত হয়েছে অপটিক্যাল ইল্যুউশন। ছাড়া ক্যানভাসে উপরে চামড়ার প্রলেপ সেঁটে দিয়ে রং রেখার সম্মিলনে মূর্ত হয়েছে বিষয়। নিরীক্ষাধর্মী এসব ছবি নিয়ে ধানমন্ডির সফিউদ্দীন শিল্পালয়ে চলছেআমি এক যাযাবরশীর্ষক রেট্রোস্পেক্টিভ প্রদর্শনী। মার্কিন প্রবাসী এই শিল্পীর ৫০ বছরের কাজের সম্মিলনে  সেজেছে শিল্পায়োজন।

শুক্রবার বিকেলে এই শিল্পায়োজনের সূচনা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুন নবী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিশিষ্ট শিল্পী আবুল বারক্্ আলভী স্থপতি শামসুল ওয়ারেস। অনুভূতি প্রকাশ করেন পাপা নুরুন নাহার।

অনুভূতি প্রকাশে নিজ শিল্পকর্মের ব্যাখ্যা দিয়ে শিল্পী বলেন, ছবি আঁকার ক্ষেত্রে আমার বিষয় কখনো স্থির থাকে না। তাই পাঁচ মিশালী ধারায় কাজ করি। সেক্ষেত্রে বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী ভিক্টর ভাসারেলির অঙ্কন রীতি প্রভাবিত করে আমার কাজকে। সেই সূত্র ধরে কিছু কাজে সাদা-কালোর বিন্যাসের মাঝে বিষয়কে ফুটিয়ে তুলি। ছাড়া আমার শিক্ষক পথিকৃৎ শিল্পী আমিনুল ইসলামের কাজের ধরন প্রভাবিত করে আমার কাজকে। তার কাছ থেকে সাাদা-কালোর ডিজাইন বা নকশাকে উপজীব্য করে  ছবি আঁকা শিখেছি।    

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রফিকুন নবী বলেন, পাপা নুরুন নাহার একেক সময় একেক ট্রেন্ড নিয়ে কাজ করেন। ধারাবাহিকতার পরিবর্তে এক স্টাইল থেকে আরেকটি স্টাইলে কাজ করতে পছন্দ করেন। একেক সময় একেক ধরন নিয়ে কাজ করেন। তার জীবনেও এটা আছে। একটা ছটফটানি আছে। কারণে তার সৃষ্ট শিল্পে চঞ্চলতার সন্ধান মেলে। সেই চাঞ্চল্যই শিল্পী হিসেবে তাকে যেন যাযাবর করে তোলে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আবুল বারক্ আলভী বলেন, আমি যখন চারুকলা শিক্ষকতা শুরু করি তখন পাপা নুরুন নাহার ভর্তি হয়েছে। ওর প্রদর্শনীগুলো কিন্তু একেক সময় একেক ধরনের করেছে। প্রদর্শনীর কিছু ভালো লাগলেও সব ছবি গোছালো নয়।

স্থপতি শামসুল ওয়ারেস বলেন, যে কোনো শিল্পীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সময় কালকে ধরা। ছাড়া যুক্তির বাইরে শিল্পের ভেতর ইমোশন থাকতে হবে। নইলে সেই শিল্পকর্ম শিল্পরসিকের হৃদয়কে স্পর্শ করবে না। তাই যাদের ইমোশন বেশি তারাই প্রকৃত শিল্পী হন। যারা একটু যুক্তি নিয়ে চলেন তারা অন্য পেশায় চলে যান। পাপা নুরুন নাহার তিনি ঘোষণা দিয়েছেন তিনি এক যাযাবর। সে কারণেই হয়তো  তিনি কোনো বিষয়ে স্থির না হয়ে সব ধরনের ছবি এঁকেছেন। নানা ধারার কাজ করেছেন। কোনো বিশেষ ধারায় কাজ করেননি। এভাবেই শিল্পকর্ম সৃষ্টিতে শিল্পী নিজস্ব আঙ্গিক খোঁজার চেষ্টা করেছেন। যেহেতু এই শিল্পী কোনো নির্দিষ্ট  মাধ্যম বিষয়ে আটকে থাকেননি তাই তাকে যাযাবরই বলা যায়।

ছোট-বড় ৫৭টি চিত্রকর্মে সজ্জিত হয়েছে শিল্পীর এই নবমতম একক প্রদর্শনী। আগামী ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই শিল্পায়োজন।

×