ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মহিলা সমিতিতে ‘অন্তরে বাহিরে চিত্রাঙ্গদা’ মঞ্চস্থ

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৩১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

মহিলা সমিতিতে ‘অন্তরে বাহিরে চিত্রাঙ্গদা’ মঞ্চস্থ

মহিলা সমিতিতে মঞ্চস্থ ‘অন্তরে বাহিরে চিত্রাঙ্গদা’ নাটকের দৃশ্য

মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত চিত্রাঙ্গদা ও অর্জুনের প্রেমের উপাখ্যান অবলম্বনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেন প্রথম পূর্ণাঙ্গ নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’। গল্পটা অনেকেরই জানা। রাজার পুত্র হওয়ার কথা। কিন্তু কন্যা হলো। কন্যা হলেও পুত্রের মতো করেই মানুষ হলেন চিত্রাঙ্গদা। এক সময় শিকারে গিয়ে স্বপ্নের নায়ক অর্জুনের সঙ্গে দেখা।

কিন্তু ছেলের মতো মানুষ হওয়া চিত্রাঙ্গদাকে দেখে ছেলেই ভাবলেন অর্জুন এবং স্বাভাবিকভাবেই আকৃষ্ট হলেন না। এরপরই চিত্রাঙ্গদার মধ্যে একটা নারীসত্তা জেগে ওঠে। নারী হওয়া স্বত্ত্বেও বাবার ইচ্ছায় চিত্রাঙ্গদার বেড়ে ওঠা ছিল একজন পুরুষ যোদ্ধা রূপে। ফলে অর্জুনের প্রেমে পড়ার পর চিত্রাঙ্গদা তার বাহ্যিক রূপ ও অন্তরের চাওয়া পাওয়ার সঙ্গে এক অদ্ভুত দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। নিজের দ্বৈত সত্তার সকল দ্বন্দ্ব ও দ্বিধাকে জয় করে অর্জুনকে পাওয়ার অনন্য প্রণয় কথার এক আখ্যান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্রাঙ্গদা’।

রবীন্দ্রনাথের কাব্যনাট্য ও নৃত্যনাট্যের রসায়নে সেই আখ্যানেরই এক নব রূপায়ন ‘অন্তরে বাহিরে চিত্রাঙ্গদা’ মঞ্চস্থ হয় রাজধানীর নাটক সরণী বেইলি রোডের ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। এদিন ছিল নাটকটির ১১তম মঞ্চায়ন। দলের এই ৪৭তম প্রযোজনাটির পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন সারা যাকের। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় একই মঞ্চে নাটকটির ১২তম মঞ্চায়ন হবে।
আগেও নানা সময়ে ঢাকার মঞ্চে নৃত্যনাট্য কিংবা কাব্যনাট্য হিসেবে মঞ্চায়িত হয়েছে ‘চিত্রাঙ্গদা’। তারপরও ‘অন্তরে বাহিরে চিত্রাঙ্গদা’ নাটকটির মঞ্চায়ন ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম। প্রযোজনাটিতে কাব্য অংশ যেমন প্রাধান্য পেয়েছে, একইভাবে প্রাধান্য পেয়েছে গানও। নির্দেশক সারা যাকেরের ভাষায়, নৃত্যনাট্যের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ কাব্যনাট্যের মাধ্যমেও চিত্রাঙ্গদা নতুন রূপে নির্মাণ করেছেন।

কিন্তু কাব্যনাট্যে তিনি চিত্রাঙ্গদার দ্বন্দ্ব ও চরিত্রের নির্মাণ এবং অর্জুনের আবির্ভাব যেভাবে বর্ণনা করেছেন, নৃত্যনাট্যে তা অনুপস্থিত। খুব স্বাভাবিকভাবেই সংগীত ও বিভিন্ন মুদ্রার মাধ্যমে আঙ্গিক প্রকাশটাই নৃত্যনাট্যে প্রাধান্য পেয়ে থাকে। চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু ‘চিত্রাঙ্গদা’ কাব্যনাট্যে সংলাপের কথামালায় চিত্রাঙ্গদা ও অর্জুন চরিত্র দুটোকে বহুমাত্রিকতায় বিশ্লেষণ করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

চরিত্র দুটির ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব আবেগ-অনুভূতি, প্রেম-ভালোবাসা, মিলন, মান-অভিমান, সম্পর্কের দূরত্ব ও শুভ পরিণয় কাব্যিক ভাষায় মেলে ধরেছেন। দর্শকের উদ্দেশে তিনি বলেন, কিছু শব্দ ও সংলাপ শুনতে হয়ত অপরিচিত বা কঠিন মনে হবে। কিন্তু তার সঙ্গে যখনই অভিনয়, সংগীত ও নৃত্যের নান্দনিক সম্মিলন ঘটে, তখন তা হৃদয়গ্রাহী ও বোধগম্য হয়ে উঠবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
নাটকে চিত্রাঙ্গদা রূপে দেখা গেল র‌্যাচেল প্রিয়াংকা প্যারিস ও ফারজানা মুক্তোকে। এ চরিত্রের গানগুলো গেয়েছেন ফারহিন খান জয়িতা। নাটকের অর্জুন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাহফুজ রিজভী, তার গানগুলো গেয়েছেন রোকন ইমন। মদন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবু নাসের ইউসুফ, তার গানগুলো গেয়েছেন সন্দীপন দাস। এছাড়া আর যারা অভিনয় করেছেন তারা হলেন জোবায়দুর রহমান, ওয়াহিদুজ্জামান মিথুন, আনিসুর রহমান রিমন, লাবনী বন্যা, ঐশ্বরিয়া মিত্র প্রমুখ।

×