ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

জানিয়েছেন হল মালিকরা 

ঈদের কোন ছবিই টানতে পারছে না দর্শক, হল মালিকরা কাঁদছেন 

প্রকাশিত: ১৩:৫৩, ১৬ এপ্রিল ২০২৪; আপডেট: ১৩:৫৪, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

ঈদের কোন ছবিই টানতে পারছে না দর্শক, হল মালিকরা কাঁদছেন 

ঈদ অনুযায়ী ব্যবসা নেই, হল মালিকরা কাঁদছেন

ঈদ এলেই দেখা যায় ছবি মুক্তির হিড়িক। বরাবরের মতো এবারও ঈদে ১৩টি ছবি মুক্তির কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আহমেদ হুমায়ূনের ‘পটু’ এবং মোহাম্মদ ইকবালের ‘ডেডবডি’ পিছিয়ে যায়। 

১১টি ছবির মধ্যে শাকিব খান অভিনীত ‘রাজকুমার’ই মুক্তি পেয়েছে ১২৬ প্রেক্ষাগৃহে। শরিফুল রাজ অভিনীত ‘ওমর’ মুক্তি পেয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ প্রেক্ষাগৃহে। বাকি ছবিগুলো মাল্টিপ্লেক্সের বাইরে নামমাত্র কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে।

শুরু থেকে ‘রাজকুমার’, ‘কাজলরেখা’, ‘ওমর’, ‘দেয়ালের দেশ’ নিয়ে আলোচনা বেশি থাকলেও ‘লিপস্টিক’, ‘মোনা—জ্বিন ২’, ‘মায়া—দ্য লাভ’, ‘সোনার চর’, ‘গ্রীনকার্ড’, ‘মেঘনা কন্যা’, ‘আহারে জীবন’ ছবিগুলোও শামিল হয়েছে প্রতিযোগিতায়। প্রথম পাঁচ দিনে ছবিগুলো কেমন চলল? জানিয়েছেন ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কয়েকটি মাল্টিপ্লেক্স, সিঙ্গল হল কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশকরা।
 
এবিষয়ে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হলগুলোর মধ্যে অন্যতম মতিঝিলের মধুমিতা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ গণমাধ্যমকে জানান, ঈদ অনুযায়ী ব্যবসা নেই, হল মালিকরা কাঁদছেন

এবার মধুমিতা হলটিতে  ‘রাজকুমার’ মুক্তি পেয়েছে। তবে ছবির ব্যবসা নিয়ে খুশি নন ইফতেখার উদ্দিন। তিনি জানান, “গত বছর ঈদে ‘প্রিয়তমা’র পাশাপাশি ‘সুড়ঙ্গ’, ‘মোনা’ ব্যবসা করেছিল। এবার কোনো ছবিই দর্শক পাচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমার হলে ‘রাজকুমার’ দেখতে দর্শক আসছে, তবে ঈদ অনুযায়ী ছবিটি ব্যবসা করছে না। বলতে পারেন, হল বন্ধ থাকাকালীন যে পরিমাণ দর্শক ছবি দেখতে এসে ফিরে যায় তার চেয়ে কিছুটা বেশি দর্শক আসছে। ছবির কিছু সমস্যা দর্শকদের বলতে শুনেছি। তবে সেগুলো আমি না বললেই ভালো। পরিবেশক সমিতির মাধ্যমে জানতে পারলাম, ঢাকার বাইরের অবস্থা খুবই খারাপ।

জানা গেছে, ‘প্রিয়তমা’র চেয়ে ডাবল রেন্টালে ‘রাজকুমার’ নিয়েছিলেন অনেকে, এই ক্ষতি তাঁরা পোষাবেন কী করে!” এবিষয়ে চিন্তিত মালিকরা। 

স্টার সিনেপ্লেক্স এর জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ঈদের ‘প্রিয়তমা’-‘সুড়ঙ্গ’র মতো সাড়া পাচ্ছি না। তিনি জানান, ঈদের দিন থেকে ১১টি ছবির ৯টিই চলেছে স্টার সিনেপ্লেক্সের সব শাখায়।

তিনি জানান, “এখন পর্যন্ত সিনেপ্লেক্সের শাখাগুলোতে আমরা আশানুরূপ দর্শক পাচ্ছি না। গত বছর কোরবানির ঈদে ‘প্রিয়তমা’ ও ‘সুড়ঙ্গ’ দারুণভাবে গ্রহণ করেছিল দর্শক। আমরা বিদেশি ছবির শো কমিয়ে এই দুই ছবির শো বাড়িয়েছিলাম। এবার সেটা হচ্ছে না। উল্টো ‘আহারে জীবন’, ‘গ্রীনকার্ড’ ও ‘মেঘনা কন্যা’ ড্রপ করতে হয়েছে। 

এই তিন ছবির শো পেয়েছে ইংরেজি ছবি ‘গডজিলা ভার্সেস কং’। কয়েকটি শো বেড়েছে ‘মোনা—জ্বিন ২’-এর। তবে ‘রাজকুমার’ ও ‘ওমর’ নিয়ে আমরা এখনো আশাবাদী। হয়তো দর্শক ছবি দুটি খুব শিগগির দেখতে শুরু করবে।  দর্শক বিচারে সিনেপ্লেক্সে এগিয়ে আছে ‘রাজকুমার’, ‘ওমর’ ও ‘মোনা—জ্বিন ২’। আমরা সর্বোচ্চ শো দিয়েছিলাম ‘দেয়ালের দেশ’কে। এখন সেই শো সংখ্যা কমেছে।”

যশোরের ‘মণিহার’-এর বুকিং এজেন্ট ও হল তদারক আলী আকবর সোহাগ গণমাধ্যমকে জানান অনেক হল বন্ধ হয়ে যাবে। এর আগে গত ঈদে হলটিতে টানা ৫৭ দিন চলেছিল ‘প্রিয়তমা’। এবারও একই পরিচালকের ‘রাজকুমার’ তুলেছে তারা। তাঁর আরেক হল গাইবান্ধার জুমারবাড়ির ‘রোমা’তে তুলেছেন ‘রাজকুমার’। কিন্তু এবার ছবির ব্যবসা তাঁকে হতাশ করেছে। সোহাগ বলেন, “আমরা দুই ঈদের দিকে তাকিয়ে থাকি। ‘প্রিয়তমা’ আশার আলো দেখিয়েছিল, সেই আশায় এবার ‘রাজকুমার’ নিয়েছিলাম। কিন্তু দর্শক ছবিটি দেখছে না। সন্দেহ হচ্ছে দুই সপ্তাহ ছবিটি চালাতে পারব কি না! ‘রোমা’ হলের ফলাফল আরো খারাপ। রাতের শো বন্ধ রেখেছি।”

দেশের নামি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হার্টবিটের এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার হিসেবে দুই দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন সোহাগ। শাকিব খান অভিনীত ‘মনে প্রাণে আছো তুমি’, ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’, ‘লাভ ম্যারেজ’, ‘সুপারহিরো’ ছবিগুলোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।

‘রাজকুমার’ প্রসঙ্গে নিজস্ব ব্যাখ্যা দিয়ে সোহাগ বলেন, “ছবির গল্প দর্শকদের কানেক্ট করতে পারেনি। কোথায় যেন সমস্যা রয়ে গেছে। তার ফল পাচ্ছি আমরা। গত ঈদের পর নতুন করে বেশ কিছু হল চালু হয়েছিল, এ ঈদের পর অন্তত ৫০টি হল বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু ‘রাজকুমার’ নয়, অন্য ছবিগুলোও চলছে না। এটা চলচ্চিত্রের জন্য অশনিসংকেত।”

এদিকে এবার কোনো ছবিই সুপারহিট তকমা পাবে না বলে জানিয়েছেন লায়ন সিনেমাস অপারেশন ম্যানেজার আসিবুর রহমান। তিনি জানান, ঈদের সব ছবিই চলছে লায়ন সিনেমাসে। তবে কোনোটিই আশানুরূপ ব্যবসা করছে না।  তিনি বলেন, “এভারেজ ব্যবসা করছে বলতে পারেন। এবার কোনো ছবিই সুপারহিট তকমা পাবে না। আমরা ‘রাজকুমার’-এর পাশাপাশি ‘ওমর’ ও ‘কাজলরেখা’ নিয়ে আশাবাদী ছিলাম। অথচ ‘মোনা—জ্বিন ২’ ভালো চলছে। আমরা শো শেষে দর্শকের প্রতিক্রিয়া জানতে চেষ্টা করি সব সময়। গত বছর ‘প্রিয়তমা’ বা অন্য ছবি দেখে দর্শক যেভাবে উত্ফুল্ল হয়ে বের হয়েছিল এবার তেমনটি দেখছি না। হয়তো ছবিগুলো তাদের মন জয় করতে পারেনি।”

এবি 

×