
ছবি: সংগৃহীত
এই সপ্তাহের শুরুতে, মার্কিন গায়িকা কেটি পেরি যিনি মূলত ‘বাবলগাম পপ’-এর জন্য পরিচিত অনলাইন সমালোচনার ঝড়ের পর নিজেকে “একজন মানব পিনিয়াটা” মনে হওয়ার কথা বলেন।
বর্ণনাটি যেমন রঙিন, তেমনি এতে ছিল এক ধরনের গুরুত্বও। সুপার বোল-এর মূল পরিবেশক হওয়ার এক দশক পর, ব্লু অরিজিন স্পেসফ্লাইটে অংশ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে যেন মাটিতে আছড়ে পড়েছে তার তারকা খ্যাতি।
মহাকাশ থেকে ফিরে তিনি মাটিতে চুমু খেয়ে “ভালোবাসার সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত বোধ করছি” বলার পর তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে অনলাইনে শুরু হয় হাসিঠাট্টা। ফাস্ট ফুড চেইন ওয়েন্ডিস পর্যন্ত মজা করে পোস্ট করে: “আমরা কি ওকে আবার পাঠাতে পারি?”
এখন সেই ট্রোলিং পৌঁছে গেছে তার ওয়ার্ল্ড ট্যুর পর্যন্ত, যা শুরু হয়েছে ২৩ এপ্রিল মেক্সিকো থেকে। সেখানে তার নাচ ও পরিবেশনা নিয়েও শুরু হয়েছে কটাক্ষ।
যে তারকা একসময় গেয়েছিলেন প্রেমিকের মুড সুইং নিয়ে, এখন তাকেই ঠান্ডা অভ্যর্থনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পেরি দোষ দিয়েছেন “উন্মাদ এবং অনিরাময়কৃত” ইন্টারনেটকে—কিন্তু শুধুই কি বিষাক্ত সামাজিক মাধ্যমই এর পেছনে দায়ী?
‘রিচ ফর দ্য স্টারস’ বইয়ের লেখক ও সংগীত সমালোচক মাইকেল ক্র্যাগ মনে করেন, পেরির সমস্যা হলো তিনি পপ সংস্কৃতির মাঝে আটকে গেছেন এবং দিনে দিনে আরও বেশি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছেন।
“২০১০-এর দশকে তার পপ স্টার ইমেজ গড়ে ওঠে রঙিন, মজাদার আর কার্টুনধর্মী রূপে—যেখানে ছিল হুইপড ক্রিম ব্রা ও বিশাল দাঁতের ব্রেস সহ হাস্যকর ভিডিও,” বলেন তিনি। এই ফর্মুলাটি তখন কাজ করেছিল। তার দ্বিতীয় অ্যালবাম Teenage Dream, যা দুষ্টু-মিষ্টি প্রতিবেশী মেয়ের যৌন আবেদনময়ী ইমেজকে সামনে এনেছিল, বিলবোর্ড চার্টে একে একে পাঁচটি গানকে নম্বর ওয়ানে নিয়ে গিয়েছিল—যা মাইকেল জ্যাকসনের রেকর্ডের সমান। এর পরবর্তী অ্যালবাম Prism (২০১৩) দিয়েছিল ‘Roar’ এবং ‘Dark Horse’ এর মতো হিট—কিন্তু তারপর থেকে আর শীর্ষে ওঠেননি।
ক্র্যাগ বলেন, “পপের ভাষায় বললে, সেটা অনেক আগের কথা, আর এখন মনে হয় তিনি নিজেকে বদলাতে পারেননি।” গত বছরে তার ফিরে আসার গান Woman’s World, যা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে তৈরি বলেই প্রচার হয়েছিল, অনেকের কাছেই মনে হয়েছে তা কণ্ঠে জোর নেই, কথায় আরও কম।
এছাড়া গানটির প্রযোজক ছিলেন ড. লুক, যিনি গায়িকা কেশার কাছে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন (যদিও পরে মামলা নিষ্পত্তি হয় এবং তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন)। তবে পেরির সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা অনেক ভক্তদের বিরক্ত করেছে।
এই গানটি যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ৫০-এও উঠতে পারেনি এবং যুক্তরাজ্যে কেবল ৪৭ নম্বরে উঠেছে। “তার সেই 'ভালোবাসাই পথ দেখাক' ধরনের আধ্যাত্মিক বার্তাগুলো সোশাল মিডিয়ায় আসক্ত পপ শ্রোতাদের কাছে তেমন প্রভাব ফেলে না,” বলেন ক্র্যাগ।
“Woman’s World-এর সেই রিগ্রেসিভ 'গার্ল বস' ভাব, আর অ্যালবামটিও ভালো না হওয়ায় তার অবস্থান আরও দুর্বল হয়েছে,” তিনি যোগ করেন। অথচ ডোজা ক্যাটও ড. লুকের সঙ্গে কাজ করেছেন—তবে তিনি এতটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার শিকার হননি।
২০১৭ সালের Witness অ্যালবাম থেকেই এই ব্যর্থ পুনরাবিষ্কারের ধারাবাহিকতা শুরু। তখন তিনি ‘Purposeful Pop’ নামে সমাজসচেতন গানের একটি ধারা শুরু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই অ্যালবামের প্রধান গান Chained to the Rhythm যেখানে মূর্খ বিনোদন সংস্কৃতিকে আক্রমণ করে, ঠিক তার পরেই Bon Appetit প্রকাশ করেন—যেটি আবার খোলামেলাভাবে পেরিকে একপ্রকার ভোগ্য পণ্যে পরিণত করে।
নারীকেন্দ্রিক পপ তারকাদের ধারণা বদলেছে। গত বছরের সবচেয়ে আলোচিত নতুন মুখরা ছিলেন চ্যাপেল রোয়ান, সাবরিনা কার্পেন্টার ও চার্লি এক্সসিএক্স—যারা আত্মবিশ্বাস, ব্যক্তিত্ব ও বাস্তবতা দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেছেন।
অন্যদিকে, কেটি পেরি বরং তার নিজের গড়া চরিত্র থেকে দূরে সরে যেতে চেয়েছেন। ২০১৭ সালে মাইকেল ক্র্যাগের সঙ্গে The Guardian-এর এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি কেটি পেরি নামের একটা চরিত্র তৈরি করেছিলাম। আমি ক্যাথরিন হাডসন হতে চাইনি। সেটা ছিল খুব ভয়ের।”
শহীদ