ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৫ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি

দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এলো এপ্রিলে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ৪ মে ২০২৫

দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এলো এপ্রিলে

সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এলো এপ্রিলে

সদ্যসমাপ্ত এপ্রিলে প্রবাসীরা ২৭৫ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার এসেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি। গতবছরের এপ্রিলে আয় এসেছিল ২০৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে আয় এসেছে ২ হাজার ৪৫৩ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরে জুলাই-এপ্রিল সময়ে আয় এসেছিল ১ হাজার ৯১১ কোটি ডলার।
রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত মার্চ মাসে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। মার্চ মাসে প্রবাসীরা ৩২৯ কোটি ডলার পাঠান, যা একক মাস হিসেবে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। গত বছরের মার্চে এসেছিল ১৯৯ কোটি ডলার। আগের বছরের মার্চের তুলনায় এবার একই মাসে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ৬৪ শতাংশ। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫২ কোটি ডলার।
ফলে মার্চ মাসে প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। ব্যাংকাররা বলছেন, মূলত অর্থ পাচার কমে আসায় প্রবাসীরা এখন তাদের আয় পাঠাতে বৈধ পথকেই বেছে নিচ্ছেন। 
প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোয় ডলারের যে সংকট চলছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে বলে জানান কর্মকর্তারা। তারা বলেন, ডলারের দাম নিয়ে যে অস্থিরতা ছিল, তা-ও কিছুটা কমে এসেছে। ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেধে দেওয়া সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যেই প্রবাসী আয় কিনছে। এদিকে খোলাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২৪ টাকা ৩০ পয়সার মধ্যে।

দেশে গতবছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর টানা ৭ মাস ধরে প্রতিমাসে ২০০ কোটি ডলারের বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ফেব্রুয়ারিতে তারা পাঠান ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এর আগে জানুয়ারিতে গতবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় ৩ শতাংশ বেশি আসে। প্রবাসী আয় হলো দেশে মার্কিন ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস।

কারণ, এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশী মুদ্রা খরচ করতে হয় না বা কোনো দায় পরিশোধ করার দরকার পড়ে না। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ের বিপরীতে দেশে ডলার এলেও তার জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে আবার বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয়। আবার বিদেশি ঋণ পরিশোধেও ডলারের প্রয়োজন হয়। সার্বিকভাবে প্রবাসী আয় বাড়লে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের রিজার্ভ বা মজুদ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
ড. আহসান এইচ মনসুর গভর্নরের দায়িত্ব নিয়েই রিজার্ভ পুনরুদ্ধারে কঠোর অবস্থান নেন। হুন্ডি দমনে মোবাইল কোর্টের মতো ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রবাসী আয় দেশে আনতে বাড়ানো হয় প্রণোদনা। বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমদানি ব্যয়ের অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয় নজরদারিমূলক ব্যবস্থা। পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় আস্থা ফেরাতে চালু করা হয় নিরীক্ষা কার্যক্রম।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জনকন্ঠকে বলেন, ‘রফতানি ও রেমিটেন্স বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এতে ডলারের বাজারে চাপ কমেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের সুশৃঙ্খল ডলার ব্যবস্থাপনাও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।’
বাইরের অর্থ পরিশোধও বেড়েছে: ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়নে পৌঁছালেও এ সময়ে বৈদেশিক ঋণ ও সুদের অর্থ পরিশোধ কমেনি, বরং বেড়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিদেশি ঋণ পরিশোধ হয়েছে ২ দশমিক ৬৩৬ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে মূল ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ১ দশমিক ৯৬২ বিলিয়ন ডলার (৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি) এবং সুদ বাবদ ৯৪৪ মিলিয়ন ডলার (১৭ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি)। একই সময়ে উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ ও অনুদান মিলিয়ে ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ কম। অর্থাৎ, রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে ঋণ পরিশোধ কমার ভূমিকা নেই, বরং চাপ আরও বেড়েছে।

তবে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশ সরকার বেশ কয়েকটি চীনা এবং বহুপাক্ষিক ঋণের কিস্তি পুনঃসমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়, যার ফলে তাৎক্ষণিক বৈদেশিক অর্থপ্রবাহের চাপ কমে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, সুদ ও ঋণ পরিশোধের একটি অংশ দ্বিতীয় প্রান্তিকে সরিয়ে আনার ফলে রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

×