
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে হল প্রশাসন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠনের কাজ চলছে। শুক্রবার দুপুরে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. গফুর গাজী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ সূত্রে হল কমিটির তথ্য জানা গেছে।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নম্বর কক্ষে অবস্থানরত মেধাবী শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর পুকুরে ডুবে মৃত্যুর বিষয়টি যথাযথ তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদানের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিন সদস্যের এই কমিটিতে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আবদুল গফুর গাজীকে আহ্বায়ক, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুল বারীকে সদস্য ও হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ.হ.ম. নুরুল ইসলামকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. গফুর গাজী বলেন, আমরা আগামীকাল (১৯ জুলাই) সকাল ১০টায় সভা ডেকেছি। যতদ্রুত সম্ভব আমরা রিপোর্ট প্রদান করবো।
এদিকে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মসজিদে সাজিদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় তার সহপাঠীরা লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যান আটকিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লিখিত মুচলেকা দিলে ভ্যান ছেড়ে দেওয়া হয়।
সাজিদের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়। তার বাবা একটি মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট আহসান হাবিবুল্লাহ দেলোয়ার। তিনি জিয়াউর রহমান হলের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। সাজিদের চার ভাইবোনের পরিবারে তিনি একমাত্র ভাই।
সাজিদের বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ এসেছিলেন কুষ্টিয়ায় ছেলের জানাজায়। তিনি বলেন, আমার ছেলের মৃত্যু রহস্যজনক। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।
সাজিদের মৃত্যুকে রহস্যজনক হিসেবে দেখছেন জানাজায় অংশ নেওয়া তার সহপাঠী ও ক্যাম্পাসের বড় ভাইরা। তারা জানান, সাজিদ সাঁতার জানতো। সাঁতার জানলে কেউ কীভাবে পুকুরে ডুবে মারা যায়? আমরা চাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সত্য ঘটনা উঠে আসুক।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও সাজিদের ঘনিষ্ঠ বড় ভাই ওয়াহেদ বিন আসাদ সাংবাদিকদের বলেন, পানিতে ডুবে মারা গেলে সাধারণত আমরা দেখি তার লাশ উপুড় হয়ে থাকে, কিন্তু সাজিদের মরদেহ ছিল চিত হয়ে। এছাড়া পানিতে ডুবে কেউ মারা গেলে তার পেটসহ শরীর ফুলে যায়। কিন্তু সাজিদের শরীরে আমরা তেমন কোনও লক্ষণ দেখিনি। এজন্য এই মৃত্যুকে আমরা রহস্যজনক মনে করছি।
সুরতহাল প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক হোসেন ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে তার শরীরে অপমৃত্যুর কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে ভিসেরা রিপোর্ট আসার পর আমরা নিশ্চিত বলতে পারবো।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সাজিদের পোস্টমর্টেম হয়ে গেছে। সবকিছুর প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর আমরা প্রকৃত ঘটনা জানতে পারবো।
প্রসঙ্গত, ইবির শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সাড়ে ৬টার দিকে ইবি থানা পুলিশের উপস্থিতিতে মরদেহ তোলা হয়। পরে রাত ৮টায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ড. সুতপা রায় মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে বিকাল সোয়া পাঁচটার দিকে সাজিদের মরদেহ পুকুরে ভাসতে দেখেন শিক্ষার্থীরা।
সানজানা