
ছবি: সংগৃহীত
বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্ন অনেক সময় ভিসা জটিলতা, উচ্চ ফি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার দেয়ালে আঘাত খায়। এসব সমস্যা দূর করতে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এখন এমন শিক্ষা কর্মসূচি চালু করছে যা প্রশাসনিক জটিলতা কমিয়ে দেয় এবং একাডেমিক মান বজায় রাখে। এসব প্রোগ্রাম আন্তর্জাতিক শিক্ষার চাহিদা মেটাতে বাস্তবসম্মত ও সহজ পন্থা প্রদান করছে। যাতে শিক্ষার্থীরা কম খরচে এবং সহজ প্রক্রিয়ায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায়।
ওয়াসেদা সামার সেশন ২০২৫ (জাপান): ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটি একটি গ্রীষ্মকালীন প্রোগ্রাম চালু করেছে, যা জাপানের সাধারণ জটিল ভিসা প্রক্রিয়া এড়িয়ে যায়। অংশগ্রহণকারীরা ট্যুরিস্ট ভিসা ব্যবহার করে এতে অংশ নিতে পারেন। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এবং সিজিপিএ ২.৫ (৪.০ স্কেলে) বা তার বেশি এমন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রোগ্রামটি উন্মুক্ত।
জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রোগ্রামটি চলবে এবং এতে আবাসনের ব্যবস্থা ও বিমানবন্দর পরিবহন সহ বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করা হবে। শিক্ষার্থীরা দুই বা তিনটি কোর্স বেছে নিতে পারবেন। এটি জাপানের প্রচলিত একাডেমিক এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের তুলনায় নতুন ধারার সূচনা।
ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরার সামার স্কুল (যুক্তরাজ্য): ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরা বিভিন্ন ধরণের সামার স্কুল পরিচালনা করে, যার মধ্যে প্রি-ইউনিভার্সিটি সামার স্কুল উল্লেখযোগ্য। এটি ১৬-১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য, যারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অভিজ্ঞতা নিতে আগ্রহী। দুই সপ্তাহের কোর্সগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের Holyrood ক্যাম্পাসে পরিচালিত হয় এবং পাঠদান করেন ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা। এতে শিক্ষার্থীরা সংক্ষিপ্ত মেয়াদে বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন।
সিডনি এক্সিকিউটিভ প্লাস (অস্ট্রেলিয়া): সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংক্ষিপ্ত কোর্স ও মাইক্রোক্রেডেনশিয়াল চালু করেছে, যা কর্মজীবী পেশাজীবীদের জন্য উপযোগী। এতে ভিসা, আবাসন ও ভ্রমণ খরচের প্রয়োজন হয় না।
এআই, ডেটা অ্যানালিটিক্স ও নেতৃত্ব বিষয়ে কোর্সগুলো ডিজাইন করা হয়েছে পেশাদার সময়সূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে। শিক্ষার্থীরা উচ্চ মানের আন্তর্জাতিক শিক্ষা পেতে পারেন ঘরে বসেই।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সামার প্রোগ্রাম (কানাডা): এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই ও আগস্টে দুটি চার সপ্তাহের সেশন অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞান, ব্যবসা, চিকিৎসা, স্থাপত্যসহ ৬০টির বেশি কোর্স রয়েছে।
কানাডার ট্যুরিস্ট ভিসা তুলনামূলক সহজ, তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এটি অত্যন্ত সুবিধাজনক। অন-ক্যাম্পাস আবাসনের গ্যারান্টিও দেওয়া হয়।
ওয়ার্ল্ড লার্নিং প্রোগ্রাম (বিভিন্ন দেশ): ওয়ার্ল্ড লার্নিং সংস্থা বিভিন্ন দেশে সরকারি অর্থায়নে প্রোগ্রাম পরিচালনা করে, যার মধ্যে ব্রাজিলে শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং আলজেরিয়া, ইরাক, সৌদি আরবে STEAM শিক্ষা কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য। অনলাইন প্রফেশনাল ইংলিশ নেটওয়ার্ক (OPEN) প্রোগ্রাম বিদেশি শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা দূর করে। এসব প্রোগ্রাম দেখায়, সরকারি সহায়তা কীভাবে বৈশ্বিক শিক্ষা সহজ করতে পারে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার ভবিষ্যৎ: এই কর্মসূচিগুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা করছে। সহজলভ্যতা ও নমনীয়তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাস্তব শিক্ষার অভিজ্ঞতা নিতে পারছে, যার জন্য আগে প্রচুর অর্থ ও প্রশাসনিক জটিলতার মুখোমুখি হতে হতো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন বুঝতে পারছে—আন্তর্জাতিক শিক্ষা হওয়া উচিত সবার জন্য উন্মুক্ত, শুধুমাত্র যাঁরা ব্যয় বহন করতে পারেন তাদের জন্য নয়।
শহীদ