
ছবিঃ সংগৃহীত
“বইয়ের অর্ধেক এখনো বাকি, অথচ পরীক্ষা যেন দোরগোড়ায়। এমন চাপ নিয়ে কীভাবে সামলে উঠবো?” এমন প্রশ্ন করে চলেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এইচএসসি ২০২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। শুধু সময় নয়, তারা চাইছেন ন্যায্য মূল্যায়নের সুযোগ যাতে প্রস্তুতির ঘাটতি নয়, প্রতিভাই মূল্যায়িত হয়।
২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার্থীরা তাদের বাস্তব সংকটের প্রেক্ষিতে পরীক্ষার সময় পেছানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, চলমান পরিস্থিতিতে তাদের প্রস্তুতি যথাযথ হয়নি। একই সঙ্গে নতুন নিয়ম চাপিয়ে দেওয়ায় তারা মানসিকভাবে চাপে রয়েছেন। তাই ন্যায্য মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে তারা তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো:
১. পরীক্ষার সময় পিছিয়ে অন্তত ২ মাস বাড়ানো।
২. MCQ ও CQ মিলিয়ে যৌক্তিক পাস নম্বর নির্ধারণ করে মূল্যায়ন।
৩. অকৃতকার্যদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা সম্পূরক পরীক্ষা ও গ্রেস নম্বর প্রদানের সুযোগ।
শিক্ষার্থীদের মতে, এ দাবিগুলো কোনো অতিরিক্ত সুবিধা নয়, বরং বাস্তবতা বিবেচনায় শিক্ষাজীবনের প্রতি ন্যায্য আচরণের অনুরোধ।শুধু সিলেবাস শেষ না হওয়া নয়, শিক্ষার্থীরা বলছে মানসিক চাপও তীব্র। নতুন সিস্টেম, প্রস্তুতির অনিশ্চয়তা, কোচিং নির্ভরতা ও সোশ্যাল মিডিয়ার বিভ্রান্তি সব মিলিয়ে তারা অনেকটাই আতঙ্কে রয়েছে।
কয়েকজন কলেজ শিক্ষকও পরীক্ষার সময়সূচি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাজধানীর একটি কলেজের অধ্যাপক বলেন- “জুলাই-আগস্টের সময় প্রায় আড়াই মাস তারা ঠিকমত পড়াশুনা করতে পারেনি, তার উপর আবার ভারী সিলেবাস এবং কম সময় এই তিন মিলিয়ে ২৫ ব্যাচ সত্যিকার অর্থেই একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাচ। সময় না বাড়ালে অনেকেই ‘আধা-প্রস্তুত’ অবস্থায় পরীক্ষায় বসবে, যা ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।”
অনেক শিক্ষকও মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের দাবি আমলে নেওয়ার মতো। ঢাকার এক সরকারি কলেজের শিক্ষক বলেন- “২০২৫ ব্যাচ একটি ট্রানজিশন ব্যাচ। তারা জুলাই আগস্টের আন্দোলনে ভালো ভূমিকা রেখেছে। যার কারনে তারা অন্তত ৩ মাস ভালো মত পড়াশোনা করার সুযোগ পায় নি। এর ফলে তারা ভালো মত প্রস্তুতিও নিতে পারে নি। এমন অবস্থায় পরিক্ষা পিছিয়ে না দিয়ে সেটা এখনই চাপিয়ে দেওয়া হলে ফলাফল এবং মানসিক স্বাস্থ্য দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়ে অভিভাবকদের মধ্যেও দুশ্চিন্তা বাড়ছে। অভিভাবকেরা বলছেন ‘শিক্ষা যেন শাস্তি না হয়’। শুধু শিক্ষার্থী নয়, অভিভাবকরাও চাইছেন তাদের সন্তান যেন প্রস্তুতির সুযোগ পায় এবং মূল্যায়ন হয় বাস্তবতাকে ভিত্তি করে।
শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের যুক্তিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। তারা প্রত্যাশা করছেন, দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ মানবিক বিবেচনায় তাদের পাশে দাঁড়াবে।
এইচএসসি ২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা কোনো ফাঁকিবাজ সুবিধা চাচ্ছে না। বরং তারা ভালো প্রস্তুতি নিতে চাইছে, যাতে নিজেদের যথাযথভাবে প্রমাণ করতে পারে।তাদের দাবিগুলো যদি সময়োপযোগী, যৌক্তিক এবং বাস্তবতা নির্ভর হয় তবে সেটাকে ‘অযৌক্তিক আবদার’ বলে উড়িয়ে দেওয়া ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করার নামান্তর হতে পারে।
“আমরা সময় চাই, কারণ আমরা মূল্য দিতে চাই সঠিক প্রস্তুতিতে। আমরা চাপ চাই না, চাই ন্যায্য মূল্যায়ন।” এইচএসসি ২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এই কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি যেন পৌঁছে যায় নীতিনির্ধারকদের কর্ণকুহরে।
নোভা