ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

হাইকোর্টের রায় অমান্য বুটেক্স উপাচার্যের, বছরের পর বছর ছাত্রী হয়রানি

সোহেল রানা

প্রকাশিত: ১৪:৩১, ১২ জুন ২০২৪; আপডেট: ১৪:২৩, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

হাইকোর্টের রায় অমান্য বুটেক্স উপাচার্যের, বছরের পর বছর ছাত্রী হয়রানি

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শাহ আলিমুজ্জামান বেলাল। ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনিক ও একাডেমিক অনিয়মে জর্জরিত বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)। ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশে দুর্নীতি, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে পরীক্ষার্থীদের অকৃতকার্য করানো ,বিদেশি লেখকের গবেষণাপত্র চুরি করে নিজের নামে বই ছাপানো সহ-একাধিক অভিযোগের পর এবার আদালত অবমাননা করেছেন বুটেক্সের উপাচার্য শাহ আলিমুজ্জামান বেলাল। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে মেধা তালিকায় তৃতীয় শিক্ষার্থী ইওরমা শায়ের জাহানকে (৪৩ ব্যাচ) শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সংঘবদ্ধ  চক্রের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পরীক্ষায় অকৃতকার্য করে ফল স্থগিত রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ ও শেষ বর্ষে আসা সত্ত্বেও ইন্টার্নশিপ না করতে দিয়ে চার বছরের বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে দীর্ঘ প্রায় আট বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)এ ব্যাপারে মহামান্য হাইকোর্টে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রিটপিটিশন করলে ইন্টার্নশিপ ও অন্যান্য কার্যক্রম চলমান রাখার নির্দেশনা দেন আদালত। বারবার বুটেক্সের উপাচার্য নিজে পরীক্ষার হলে উপস্থিত থেকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে তিন ঘণ্টার পরীক্ষা দেড় ঘণ্টা করে নিয়ে শিক্ষার অধিকার বঞ্চিত করা থেকে শুরু করে ইন্টার্নশিপ ও অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। 

আরও পড়ুনঃ  ‘হাইকোর্টের রায় অমান্য বুটেক্স উপাচার্যের, বছরের পর বছর ছাত্রী হয়রানি’ শীর্ষক সংবাদের বিষয়ে বুটেক্সের ব্যাখ্যা

শুধু তাই নয়, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ইতিমধ্যে চতুর্থ ও শেষ বর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় সকল শিক্ষার্থীর ফল প্রকাশ করলেও তার ফল অপ্রকাশিত রেখে উপাচার্যের নির্দেশনায় জোরপূর্বক তৃতীয় বর্ষে ভর্তি করানো হয়। আদালতে ইন্টার্নশিপের নির্দেশনা থাকার পরও তা অমান্য করে উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতা ও  আট বছরের দীর্ঘসূত্রতায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছিল।

হয়রানির শিকার হওয়া শিক্ষার্থী ইওরমা শায়ের জাহান বলেন, নিরুপায় হয়ে মহামান্য হাইকোর্টে রিট করি। রিটের রায় আমার পক্ষে আসে। হাইকোর্টের নির্দেশে আমার পরীক্ষা নেয়। কিন্তু পরীক্ষার রেজাল্ট আটকিয়ে রাখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে আবারো রিট করি। সর্বশেষ রিটের অর্ডারে আমার ইন্টার্ন ও চলতি ৪৫ ব্যাচের সঙ্গে বহাল থাকার নির্দেশনা লিখা রায়ে।হাইকোটের্র রিটের রায়ের কপি।আমি এখন সর্বশেষ সেমিস্টারে আছি। আমকে ইন্টার্নশিপ করতে দিচ্ছে না। হাইকোর্ট ইন্টার্নশিপ করার পক্ষে রায় দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় সেটি মানছে না। আদালত অবমাননা করছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা না মেনে আমাকে দীর্ঘ সাড়ে ৭ বছর ধরে ফেইল করাচ্ছে। আমার ব্যাচ ২০২২ সালে পাশ করে ফেলেছে। এখন ২০২৪। বুটেক্স আমাকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে ঠেলে দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত হুমকি ও মানসিক নিযার্তনে পড়াশোনা হচ্ছে না। আমার চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে। 

এরপর ভার্সিটি হাইকোর্টের কাছে এপ্লিকেশন দেয় modification চেয়ে - যে তারা এই মুহুর্তে ২টা পরীক্ষা শুধু নিতে পারবে না। বাকি সমস্ত কার্যক্রম- অর্থাৎ ইন্টার্নশিপ আর বাদ বাকি পরীক্ষাগুলো নিতে কোনো অসুবিধা নাই। ২৯ এপ্রিলের রায়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে মডিফিকেশন চেয়েছে তার ভিত্তিতে Apparel washing and printing পরীক্ষাটা লেভেল-৩ টার্ম -২ এর সঙ্গে নিয়ে নিতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ আমার আগের অর্ডারে ইন্টার্নশিপ করতে যে আদেশ ছিল সেটাই বলবৎ আছে এবং হাইকোর্ট এর ২৩/১১/২০২৩ ও ২৯/০৪/২০২৪ এর কোথাও ইন্টার্নশিপ করতে দিবে না এমন কোনো আদেশ দেয়নি। হাইকোর্ট থেকে এরকম কোনো অর্ডারই আসে নি। অথচ আমাকে ব্যক্তিগতভাবে একটি নোটিসের মাধ্যমে তৃতীয় বর্ষে জোর করে ভর্তি করানো হয়েছে। চতুর্থ (শেষ বর্ষে) বর্ষের ১ম সেমিস্টারে ভর্তি ও ফাইনাল পরীক্ষার রসিদহাইকোর্টের অর্ডারে কোথাও লিখা নাই যে আমাকে থার্ড ইয়ার থেকে আবার পড়াশোনা করতে হবে। যেখানে আমি ফোর্থ ইয়ারে (ফাইনাল ইয়ার)  ভর্তি হয়ে পরীক্ষা দিয়েছি আর সেগুলোর সব টাকা জমা দেওয়ার রশিদসহ সব কিছুর প্রমাণ আছে, সেখানে কীভাবে আমাকে আবার থার্ড ইয়ারে ভর্তি হতে বলে নোটিশ দিল!

টেলিফোনে উপাচার্য শাহ আলিমুজ্জামান বেলাল জনকণ্ঠকে বলেন, আমি হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন করেছি। সে তো (ইওরমা) তৃতীয় বর্ষে পড়ে। তাকে আমি কীভাবে ইন্টার্নির সুযোগ দিব। 

ভিসির বক্তব্য সম্পর্কে ইওরমা বলেন, ইতিমধ্যে চতুর্থ (শেষ বর্ষ) বর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছি। এবং ফল প্রকাশের আগেই চতুর্থ বর্ষের শেষ সেমিস্টারে  ইন্টার্নের জন্য ব্যাচের অন্যান্য শিক্ষার্থীর তালিকা করে বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে পাঠানো হলেও সেই তালিকা থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আমার কাছে সব প্রকার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও স্যার (ভিসি) কীভাবে বলেন, আমি তৃতীয় বর্ষে পড়ি! তিনি মিথ্যাচার করেছেন।


 

 

 

 

 এসআর

×