ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বুদ্ধিজীবী দিবসে ভিসি বিরোধী বক্তব্য কুবি ছাত্রলীগ সভাপতির

কুবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ১৪ ডিসেম্বর ২০২২

বুদ্ধিজীবী দিবসে ভিসি বিরোধী বক্তব্য কুবি ছাত্রলীগ সভাপতির

পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২২ এ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমন্ত্রণ না দেওয়ার অভিযোগ করে নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া সময়সূচি অনুযায়ী প্রশাসন তাদের কার্যক্রম শেষ করলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ এসে নানারকম স্লোগান দেয় এবং শহীদ মিনার ও বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা 'কুবির প্রশাসন ধিক্কার, ধিক্কার', 'জামাতের প্রশাসন ধিক্কার, ধিক্কার',  'বিএনপি'র প্রশাসন ধিক্কার, ধিক্কার', 'ষড়যন্ত্র করিস নারে, পিটের চাড়মা থাকবে নারে' স্লোগান দেন।

এরপর নেতাকর্মীদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যে ফুল দেন। ফুল দেয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ ওরফে ইলিয়াস মিয়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া সংগঠন। ছাত্রলীগকে কেউ আঘাত করলে সে আঘাত আমার বুকে লাগে। কিন্তু দুঃখের বিষয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে তথাকথিত বঙ্গবন্ধুর নামধারী কিছু প্রশাসনের দালাল আজকে ছাত্রলীগকে ধ্বংসের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আজকের এই রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম থেকে ছাত্রলীগকে বঞ্চিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। উনার (উপাচার্য) লালিত কয়েকজন শিক্ষকদের দিয়ে আবাসিক হলগুলোতে বলেছে, ছাত্রলীগ বলে কোনো সংগঠন থাকবে না। ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন, শেখ হাসিনা হাতে গড়া সংগঠন, এই সংগঠন যে ভাঙার জন্য ষড়যন্ত্র করে সে লোক কখনো আওয়ামী লীগ হতে পারে না, সে লোক বিএনপি জামাতের এজেন্ট। এই উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ বলে কোনো সংগঠন রাখবে না।

তিনি বলেন, আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থেকে যাদের পছন্দ হয় না তাদের উপর যেভাবে স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছেন, যেভাবে লাঞ্ছিত করে যাচ্ছেন, সেটা যদি ছাত্রলীগের উপর করার জন্য বসে আছেন বলে ভাবেন তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বসবাস করতেছেন। আপনি শিক্ষক হয়ে কিভাবে মিথ্যাচার করেন! আপনার অডিও রেকর্ড আছে, আপনি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে কীভাবে মিথ্যাচার করেছেন। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব জায়গায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চাচ্ছেন। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আগামীতে কোনো ষড়যন্ত্র করে তাহলে আমরা প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী কাছে আপনার ছাত্রলীগ বিরুধী কর্মকান্ড স্মারকলিপি মাধ্যমে জানাতে বাধ্য হবো।

কুবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস বক্তব্য শেষ করলে উপস্থিত সাংবাদিকরা বিগত বছর ছাত্রলীগ কিভাবে আমন্ত্রণ পেতেন জানতে চাইলে  ইলিয়াস বলেন, বিগত ১৫ বছর আমাদেরকে রেজিস্ট্রার, প্রক্টর বা হল প্রভোস্টদের মাধ্যমে জানানো হত এবং একসঙ্গে প্রোগ্রাম গুলোতে কাজ করতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকবল সংকট থাকায় প্রশাসন থেকে কয়েকজন মিলে করলে এটা সম্পন্ন কার্যকর হয় না। গতকালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির উদাহরণ টেনে কর্মসূচিটির সফলতা কতখানি তা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন।

এ ব্যাপারে এবারের ১৪ ডিসেম্বর পালন করার জন্য গঠিত উপ কমিটির আহ্বায়ক অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম আকন্দ বলেন, আমি এর আগে ২০১৮ সালে ১৪ ডিসেম্বর পালনের লক্ষে গঠিত উপ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে ছিলাম। সেবারও কাউকে আলাদা করে দাওয়াত দেয়া হয়নি। শুধু একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল। এবারও তাই করা হয়েছে। ২০১৮ সালে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেখে ছাত্রলীগ এসেছিল। কিন্তু এবার কি হয়েছে বুঝতে পারছি না।

ইলিয়াস তার বক্তব্যে আরও বলেন, আমরা সব সময় ন‍্যায‍্য দাবি করি। উনি (উপাচার্য অধ্যাপক মঈন)  নিজেই অবৈধ। ভিসি তার বাঙলোতে এবং ঢাকার গেস্ট হাউজে  মাস্টার রোলে নিয়োগ দিয়েছেন যা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। সরকারি চাকরি কী ৪২ বছর বয়সে দেওয়ার নিয়ম আছে? অথচ তিনি তার পার্সোনাল ড্রাইভারকে ৪২ বছর বয়সে নিয়োগ দিয়েছেন। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখার জন্য ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি জায়ান্ট স্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভিসি তা লাগানোর জন্য সম্মতি দেয়নি। তিনি রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরকে অনুমতি না দেওয়ার জন্য নিষেধ করে দিয়েছেন। প্রত্যেক বছর ইউজিসি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় খেলাধুলার জন্য। ব্যাটমিন্টন খেলার জন্য বিগত বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক বিভাগ থেকে ব্যাট কিনে দেওয়া হতো কিন্তু বর্তমান ভিসি আমাদের কারণে ব্যাট বল কিনে দিচ্ছে না বলেন দাবি করেন তারা। ভিসিকে কী সরকার এখানে তার আত্মীয়স্বজন এবং পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ, পছন্দমত দুর্নীতি করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে? যদি এমন হয়, তাহলে আমাদের আর কোনো বক্তব্য নেই।

ইলিয়াস বলেন,  ভিসি স্যারের রুমে আমাদের ছাত্রলীগের নাম নিলে তিনি রুম আসতে মানা করেন। উনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আওয়ামী লীগের পরিচয় দিয়ে উপাচার্য পদ এনেছেন অথচ ছাত্রলীগের নাম নিলে তিনি রুমে না আসতে বলেন। উনি মিনিমাম ২০ জন শিক্ষককে এই কথা বলেছেন। ওনার টোটালি ছাত্রলীগ বিরোধী মনভাব কিন্তু ঢাকায় গিয়ে বলে বেরান উনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করে আসছেন।

ছাত্রলীগ কর্মীদের বঞ্চিত করার কারনে অনেকে রাজনীতি ছেড়ে বিদেশে শ্রমিক ভিসায় চলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। এর দায়ভার উপাচার্যকে নিতে হবে বলেও জানান। 

'এই দায় উপাচার্যের কিভাবে?' সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ইলিয়াস বলেন, কেউ যদি দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এসাইনমেন্ট হচ্ছে ছাত্রলীগকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া তখন ছাত্রলীগের নেতৃত্বস্থানীয় নেতা বা শিক্ষার্থী আছে যারা চিন্তা করবে ছাত্রলীগ করে ভবিষ্যৎ কী? উপাচার্যের রোষানলে পরে ভবিষ্যৎও যাবে এবং এক সময় আবাসিক হলে থাকাও দুষ্কর হয়ে যাবে তখন নিজের ভবিষ্যৎ এমন অন্ধকার দেখে এবং উপাচার্যের ছাত্রলীগ বিরুদ্ধি সর্বোচ্চ কঠিন  মনোভাবের কারণের কেবি সাবিক বিদেশে চলে গেছে বলে দাবি তাদের।

বড় পর্দায় খেলা দেখতে না দেয়ার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন হট্টগোল না লাগে সে জন্য এই ব্যবস্থা নিয়েছি। কিছুদিন আগের  ঘটনায় ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ ছিল। আমি চাই না ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ থাকুক। তাই আমি বলেছি যে হলে হলে খেলা দেখার জন্য। বড় পর্দায় খেলা দেখলে বহিরাগতরাও আসবে। যেটা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও তো বড় পর্দায় খেলা দেখা বন্ধ রেখেছে।

নিয়োগের ব্যাপারে ইলিয়াসের দাবি করা বিষয়ে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নিয়োগ বোর্ড আছে। সেখানে সর্বোসম্মতিক্রমেই নিয়োগ দেয়া হয়। সেখানে আমার কোনো প্রভাব থাকে না।

বিএনপি-জামাতের এজেন্ট বিষয়ে উপাচার্য কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান। এছাড়া সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য, শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়নের জন্য আমার যে ভিশন সেটা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি বন্ধে আমার যে ভিশন সেটাও অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত ৩১ মার্চ চাকরি ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের ঠিকাদারির দাবিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস তার নেতাকর্মীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের গাড়ি আটকে রাখেন।  এরপর গত ৩০ নভেম্বর জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন অতিথির সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক চলাকালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্যের কার্যালয়ে সদলবলে ঢুকে উপাচার্যকে শাসিয়েছেন ইলিয়াস হোসেন সবুজ। এছাড়া গত ২২ আগস্ট টেন্ডারের কাজ পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানকে নিজ রুমে হেনস্তা করেন। 
 

 

এসএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:

×