ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

রং-তুলিতে স্বপ্ন বুনন

রিয়াজ হোসাইন

প্রকাশিত: ২০:১৮, ২৪ মে ২০২৫

রং-তুলিতে স্বপ্ন বুনন

প্রণমী দাস

তরুণ নারী উদ্যোক্তা প্রণমী দাস। সবেমাত্র বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেছেন। বর্তমানে মাস্টার্স করছেন ফুড সেফটি বিভাগে। স্নাতক শেষ করে যখন তার বন্ধুরা ব্যস্ত সরকারি চাকরির খোঁজে, তখন ব্যতিক্রমী এই অদম্য নারী উদ্যোক্তা ব্যস্ত নিজের বুটিক শিল্পকে এগিয়ে নিতে। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে কাঠের ফ্রেমে রং-তুলির ছোঁয়া, নানান রঙের ফিতা এবং পুঁতির সংমিশ্রণে তৈরি করেন গহনা। এই গহনার দাম কম এবং নকশায় অভিনবত্ব থাকায় গ্রাহকদের কাছে বেশ পছন্দের। কেউ কেউ একবার কিনলে পরেরবার নতুন আইটেমের জন্য আগেভাগেই অর্ডার করে রাখেন। মাস শেষে মুনাফার পরিমাণও কম নয়। তবে নববর্ষ, দুর্গাপূজা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহার মতো উৎসব কেন্দ্র করে বিক্রি বহুগুণে বেড়ে যায়। গহনার পাশাপাশি তিনি পানজাবি এবং শাড়ির উপরও হাতের নকশার কাজ করেন। বর্তমানে তিনি ‘গার্গী নামক একটি ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে তার ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
নতুন একটি ডিজাইন তৈরি করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন। নিজে রং করেন, অন্যকে দেখান, মা-বাবাকে দিয়ে সেই গহনার মডেলিং করান। যা বেশ কৌতূহলের। কখনো কখনো নিজেরই নতুন একটি ডিজাইন পছন্দ হয় না। তখন আবার নতুন করে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন। তবে যখনই পড়াশোনার চাপ কম থাকে, তখনই নতুন গহনা বানানোর দিকে মনোনিবেশ করেন।
তার রং-তুলির এই স্বপ্নপথ মোটেও সহজ ছিল না। শুরুতেই শুনতে হয়েছে অনেক মানুষের কটাক্ষ। কেউ বলেছে, “ভাবি, আপনার মেয়ে পড়াশোনা করে না ব্যবসা করে?, “মেয়ে মানুষ আবার ব্যবসা?, “কোন ছেলে এটা সহ্য করবে!। কিন্তু তিনি হার মানেননি। নিজের টিফিনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাড়তি টাকা জমিয়ে শুরু করেন তার এই ব্যবসা। অনেকটা শখ থেকেই শুরু, পরে সেটিই হয়ে ওঠে ভালোবাসার পেশা। রং-তুলিতে ছবি আঁকা এবং নতুন ডিজাইন তৈরির প্রতি তার আকর্ষণ ছিল বরাবরই বেশি। যখনই সময় পেতেন, রং-তুলিতে আঁকতেন নিজের কল্পনার ছবি। সেগুলো অন্যদের দেখাতেন, আর প্রশংসাও পেতেন।
তার সাথে কথা বলে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগেতার মাথায় এই ব্যবসার ধারণা আসে। তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে হাতে তৈরি গহনার ভালো সাড়া ছিল।
মাঝেমধ্যে তিনি সেসব গ্রুপ থেকে নিজের পছন্দের নকশার গহনা কিনতেন। তবে সেগুলোর দাম ছিল তুলনামূলক বেশি এবং নকশায় তেমন অভিনবত্ব ছিল না। মনে হতো, “ওদের চেয়ে আমি তো তুলির স্পর্শে আরও ভালো নকশা করতেপারি! তাহলে লোকজন আমারটা কেন কিনবে না? এই বিশ্বাস থেকেই শুরু হয় তার ব্যবসায়িক যাত্রা। বড় বোনের এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীই তার প্রথম ক্রেতা। যার কাছে তিনি বিক্রি করেন বেশ কয়েক ধরনের পণ্য। সেখান থেকেই ভালো পরিমাণ লাভও হয়। এরপর থেকে যত টাকা লাভ হতো, সবই তিনি আবার ব্যবসায় বিনিয়োগ করতেন। তবে একজন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে সীমিত লাভ করার চেষ্টা করেন। ব্যবসা বিস্তারে সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব একটু বেশি। কারণ এই মাধ্যমেই মানুষ তার সৃজনশীলতা দেখেছে, বিশ্বাস করেছে, এবং তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে তাকে সমর্থন জানিয়েছে।


প্রণমী দাস জানান, যখন লোকজন তার বানানো গহনা পরে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়, তা দেখে তার খুব ভালো লাগে। সেটাই যেন বাস্তব স্বার্থকতা। এই কাজে তার পরিবার সবসময় পাশে থেকেছে। তার ফেসবুক পেজের মডেল হচ্ছেন তার মা, বাবা আর বোন। তারা এসব গহনা পরে ফেসবুকে পোস্ট দেন। বাবা লেখেন, “আমার মেয়ের ছোট্ট প্রয়াস। সবাই মেয়েকে উৎসাহ দিয়েন। বিয়ের আগেই যেহেতু এই ব্যবসা শুরু করেছেন, তাই ভবিষ্যতেও এটি চালিয়ে যেতে চান।
প্রণমী আরো জানান, করোনার সময় যখন থমকে গিয়ে ছিলো গোটা বিশ্ব তখন থমকে গিয়েছিল তার স্বপ্ন। তবে বড় বোনের অনুপ্রেরণায় নতুন উদ্যোমে আবার ব্যবসার কাজ শুরু করেন। দাম নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগের শেষ নেই। অনেকর কাছে নামমাত্র মূল্যেও হাজারো অভিযোগ। কাঠের জিনিস তার আবার এতো দাম! নতুন একটা নকশা করতে একজন শিল্পীর যে পরিমাণ শ্রম ও মেধা ব্যয় করতে হয়। তার কোন মূল্য তাদের কাছে নেই।

প্যানেল

×