ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ আরও আকর্ষণীয় করা হচ্ছে

এম শাহজাহান

প্রকাশিত: ২১:২৮, ৮ মে ২০২৫

সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ আরও আকর্ষণীয় করা হচ্ছে

সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ আরও আকর্ষণীয়

সাধারণ মানুষকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ আরও আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রয়োজনে সঞ্চয়পত্র না ভেঙে যাতে এখান থেকেই গ্রাহকরা চাহিদামতো ঋণ পেতে পারেন সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এজন্য সঞ্চয়পত্র বন্ধক রেখে ঋণ পাওয়া যাবে।

এছাড়া রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকায় সঞ্চয়পত্র থেকে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন একেবারে সাধারণ মানুষ। তাদের জন্য সুখবর হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সঞ্চয়পত্র কেনার সীমা পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়া হতে পারে। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে আগামী বাজেটে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বা সুদহার কিছুটা বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ অর্থবছরে ৭৮৮ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যেখানে পরিশোধ করা হয়েছে ৯৯৯ দশমিক ৭২ বিলিয়ন টাকা। ফলে, নিট বিক্রি ২১১ দশমিক ২৪ বিলিয়ন টাকা কমেছে। অর্থবছরের শেষে সঞ্চয়পত্রের মোট স্থিতি ছিল ৩ দশমিক ৩৯ ট্রিলিয়ন টাকা। এছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনায় নানা রকম কাগজপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকা এবং বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ে মুনাফা কম দেওয়ায় অনেকেই নিরাপদ এই বিনিয়োগ থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

এ অবস্থায় সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকে আরও আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে এ খাতে বিনিয়োগকৃত টাকা থেকে একজন গ্রাহক যদি ঋণ পেতে পারেন তাহলে মানুষ সঞ্চয় করতে আগ্রহী হবেন। এটি একটি ভালো উদ্যোগ হতে পারে। বর্তমানে এফডিআরের বিপরীতে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেয় ব্যাংক।

একইভাবে সঞ্চয়পত্র ইস্যুকারী ব্যাংক থেকেই মিলবে ঋণ। সেক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্র জামানত হিসেবে বিবেচ্য হবে। ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করবে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে ঋণ ব্যবস্থা চালু করতে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সঞ্চয় স্কিমগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করতে এবং বাজারে বেশি সংখ্যক সঞ্চয় উপকরণ যুক্ত করার অংশ হিসেবে সঞ্চয়পত্রগুলো লেনদেনযোগ্য করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ঋণ বাজার উন্নয়নে একটি ভালো পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ বিষয়ে অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছে অর্থবিভাগে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রেডেবল উপকরণের অভাব দেশের ঋণ বাজার উন্নয়নের একটি বড় বাধা। এক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রকে ট্রেডেবল করা ঋণ বাজারে উপকরণের বৈচিত্র্য আনতে সাহায্য করবে। যদি সঞ্চয়পত্র ঋণের জন্য জামানত হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তবে এর আকর্ষণ বাড়বে।

যদি সঞ্চয়পত্রে অর্থ বিনিয়োগ করা হয়, তবে সেই অর্থ আটকে থাকবে না। বরং, মানুষ ভাঙানো ছাড়াই এই উপকরণের বিপরীতে ঋণ নিতে পারবে। তিনি আরও বলেন, ‘এটি জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য উপকরণগুলোকে জামানত হিসেবে ব্যবহারের একটি সুযোগ তৈরি করবে।  শুধু তাই ঋণ বাজার উন্নয়নের জন্য এই উদ্যোগটি একটি ভালো পদক্ষেপ-কারণ সঞ্চয়পত্র ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ হওয়ায় মানুষের ওপর আস্থা রয়েছে।

এদিকে, বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্রের জন্য তিনটি পৃথক হারে মুনাফা বা সুদ দেওয়া হয়। এরমধ্যে রয়েছে, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্র। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পঞ্চম বছর শেষে অর্থাৎ মেয়াদপূর্তিতে মুনাফা মিলছে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার হবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এছাড়া সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদহার হবে ১২ দশমিক চার শতাংশ। সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে সুদের হার হবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। 
বর্তমানে একজন সঞ্চয়কারী মেয়াদপূর্তির পর ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, ১৫ লাখ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ ও ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ দশমিক তিন শতাংশ সুদ পান। তিন মাসের মুনাফা বহনকারী সঞ্চয়পত্রের সুদহার হচ্ছে ১২ দশমিক তিন শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ।

বর্তমানে সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য চার শতাংশ থেকে নয় শতাংশ। পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের  ক্ষেত্রে সুদহার সাড়ে ১২ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এছাড়াও বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড, ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড নামে চার ধরনের বন্ডও রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, সব সময়ই সঞ্চয়পত্র একটি নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম। এখানে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই।

এ কারণে এ খাতটি আরও আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই একদফা মুনাফা বা সুদহার বাড়ানো হয়েছে। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বা সুদহার কিছুটা বৃদ্ধি করা হতে পারে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিষয়টি  আলাপ আলোচনার মধ্যে থাকলেও একটি বিষয় নিশ্চিত যে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ আকর্ষণীয় করা হবে।

জানা গেছে, সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। বর্তমানে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে আগের বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র (পিএসআর) জমা দিতে হতো। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সীমিত ও মধ্যম আয়ের মানুষ।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র কেনায় পিএসআর দেখানোর বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হতে পারে কিংবা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সঞ্চয়পত্র কেনার সীমা পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়া হতে পারে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় এই ঘোষণা দিতে পারেন। ফলে আগের মতোই শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সনদ দেখালেই হবে।

×