ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১

বিবিএসের প্রতিবেদন

খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৩১, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২২:৩২, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪

খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ

.

বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দরে ওষ্ঠাগত সাধারণ মানুষের জীবন। এরই মধ্যে ফের মূল্যস্ফীতির সূচক বৃদ্ধির তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বৃহস্পতিবার সংস্থাটির হালনাগাদ তথ্যে সার্বিক মূল্যস্ফীতির সূচক ১১ দশমিক ৫৩ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ বলে জানানো হয়। যা গত চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এমনকি গত তিন মাসে বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যের শুল্ক কমানোর পরও মূল্যস্ফীতির এই ঊর্ধ্বগতিতে সম্প্রতি উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল।
বিবিএসের নভেম্বর মাসের ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) প্রতিবেদন অনুসারে, সদ্য শেষ হওয়া নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। শঙ্কার জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। তবে শহর এলাকায় এটি আরও বেশি, ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সিপিআই তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের গড় মূল্যস্ফীতি নভেম্বরে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে, যেটি আগের মাসেও ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে। সদ্য শেষ হওয়া মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশে ঠেকেছে, অক্টোবরেও এটি ছিল ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে। তবে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও কিছুটা বেড়ে ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশে ঠেকেছে। আগের মাস অক্টোবরে এ খাতের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
গ্রাম ও শহর এলাকার বিবেচনায় শহরের তুলনায় গ্রামে গড় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে বলে উঠে এসেছে সিপিআই তথ্যে। তবে অক্টোবরে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি থাকলেও নভেম্বরে এসে এ চিত্র পাল্টে শহর এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে।
নভেম্বরে গ্রাম এলাকার গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশে, শহর এলাকায় তা আছে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশে। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে গ্রাম এলাকায় ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশে, যেখানে শহর এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে। এদিকে মূল্যস্ফীতি আগামী জুন মাসের মধ্যে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি পরবর্তী অর্থবছরের মধ্যে তা ৫ শতাংশে নামবে। আমাদের মূল লক্ষ্য ৪-৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। আশা করি তা সম্ভব। বুধবার বিআইবিএমে এক সেমিনারে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মূল্যস্ফীতি ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশের অর্থ হলো- ২০২৩ সালের নভেম্বরে যে পণ্য ১০০ টাকায় কিনতে হয়েছিল, ২০২৪ সালের নভেম্বরে তা কিনতে হয়েছে ১১১ টাকা ৩৮ পয়সায়। একইভাবে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি সংজ্ঞায়িত হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। এরপরও চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার পরিকল্পনা করেছে সরকারের। এজন্য ইতোমধ্যেই কয়েকবার নীতি সুদহার বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমনকি বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলায় জেলায় টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না গড় মূল্যস্ফীতি। মূলত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থতাই মূল্যস্ফীতির এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, শীতের মৌসুম শুরু হয়েছে, বাজারে শাক-সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহও আছে। তবে বাজার তদারকিতে দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট।

×