ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

সংকটেও সম্ভাবনা দেখছেন উদ্যোক্তারা

রহিম শেখ

প্রকাশিত: ২১:৪০, ২৩ জুন ২০২৪

সংকটেও সম্ভাবনা দেখছেন উদ্যোক্তারা

.

স্বর্ণের দাম হু হু করে বাড়ছে বিশ্ববাজারে। দেশের বাজারে গত আট মাস ধরে সোনার ভরি লাখ টাকার ওপরে। যদিও দামি এই ধাতু এখন আর লাখের ঘরে আটকে নেই, সোয়া লাখের দিকে ছুটছে। যেভাবে সোনার দাম বাড়ছে তাতে ক্রেতাদের একটি বড় অংশের কাছে সোনার অলঙ্কার বানানো দুঃস্বপ্নের পর্যায়ে চলে গেছে। আর জুয়েলার্স ব্যবসায়ীদের বড় অংশই ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জে আছেন। একাধিক ব্যবসায়ী বলছেন, সোনার দামের উচ্চ মূল্যের কারণে জুয়েলার্স শিল্প আগে থেকেই সংকটে ছিল। গত বছরের শেষের দিকে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়তে শুরু করলে সংকট আরও প্রকট হয়। সোনার অলঙ্কারের বড় ক্রেতাগোষ্ঠী হচ্ছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। অথচ তাদের একটা বড় অংশের সামর্থ্যরে বাইরে চলে গেছে সোনার দাম। এখন উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণি সোনার অলঙ্কারের মূল ক্রেতা। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জুয়েলারি ব্যবসা বন্ধ করে অন্যকিছু করছেন। আবার যারা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগর, তাদের অনেকে পেশা বদল করে সেখানে ভালো না করায় নিদারুণ কষ্টে জীবন যাপন করছেন। অনেকে পুনরায় জুয়েলারি শিল্পে ফিরছেন। তবে সংকটে পড়ে জুয়েলারি শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের অনেকে পথে বসলেও নতুন করে সাজানো এ শিল্পের ছোঁয়ায় অর্থনীতির চাকা চাঙ্গা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে জুয়েলারি শিল্পের বদান্যতায় বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা অনন্য নজির স্থাপন করবে। ঘুরে দাঁড়াবে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তা ও কারিগররা।
বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা মানে সোনার বাজারে সুদিন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় অর্থাৎ ২০২০ সালের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ২ হাজার ৭০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। তখন এই দাম ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ। তার আগে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ সোনার আউন্স ছিল ১ হাজার ৪৭৯ ডলার। গত চার বছরে সোনার দামে উত্থান-পতন থাকলেও দাম করোনার আগের অবস্থায় আর ফেরেনি।
আন্তর্জাতিক গোল্ড কাউন্সিলের হিসাবে, চলতি বছরের মে মাসে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক আউন্স স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৪১৪ ডলার ছাড়িয়ে যায়। স্বর্ণের দামের এ উত্থানকে ত্বরান্বিত করেছে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ব্যাপক ক্রয়। স্বর্ণের দামে বিশ্ববাজারে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের অলঙ্কারের সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে ওই মাসেই। দেশের বাজারে গত আট মাস ধরে সোনার ভরি লাখ টাকার ওপরে। যদিও দামি এই ধাতু এখন আর লাখের ঘরে আটকে নেই, সোয়া লাখের দিকে ছুটছে। দেশে এখন ভালো মান অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের সোনার ভরি ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৫৫ টাকা।

বাংলাদেশ যে বছর স্বাধীন হয়, তার আগের বছর এক ভরি সোনার দাম ছিল ১৫৪ টাকা। অর্থাৎ গত ৫৪ বছরে দাম বেড়েছে ৭৭১গুণ। এত পেছনে না গিয়ে যদি সাম্প্রতিক সময়ের হিসাব করা হয় তবু দেখা যায়, গত এক দশকে দাম বেড়েছে পৌনে তিনগুণ। আর পাঁচ বছরের ব্যবধানে পৌনে দুইগুণ বেড়েছে। সোনার দাম অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ায় নতুন অলঙ্কার বেচাকেনাও ধারাবাহিকভাবে কমে গেছে। তার প্রভাবে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে স্বর্ণশিল্পীদের সংখ্যাও দিন দিন কমছে। গত দুই দশকের ব্যবধানে স্বর্ণশিল্পীদের সংখ্যা চার ভাগের এক ভাগে নেমেছে বলে দাবি করেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, করোনার পর জুয়েলারিশিল্প জোড়া ধাক্কা খেয়েছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সোনার দাম এক দফা বেড়েছে। তার পর যুদ্ধের কারণে সেটি নাগালের বাইরে চলে গেছে। গত তিন বছরে সোনার অলঙ্কার বিক্রিই ৪০-৪৫ শতাংশ কমেছে বলে জানালেন জুয়েলার্স সমিতির সহসভাপতি মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও মানুষ বিয়েশাদি কিংবা জন্মদিনের উপহার হিসেবে সোনার আংটি, কানের দুল কিংবা চেইন দিতেন। এখন সোনার বদলে নগদ অর্থ দেন অনেকে।
রাজধানীর গে-ারিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে জুয়েলারি ব্যবসা করে আসছেন সুমন গাজী। তার বাপ চাচারাও এই ব্যবসায় জড়িত। তার দোকানের নাম শিল্পী জুয়েলার্স। সুমন গাজী বলেন, ‘২০২০ সালে প্রথম ধাক্কা আসে এই শিল্পে। করোনার কারণে অন্তত ২০২২ সাল পর্যন্ত বেচাকেনা নেই বললেই চলে। ২০১৯ সালে প্রতি মাসে অন্তত বেচাকেনা হতো ২৫ লাখ টাকার মতো। ২০২০ সালে এসে তা ২-৩ লাখ টাকায় ঠেকে গেছে। করোনা শেষ হলেও স্বর্ণের বাড়তি দরের কারণে সেই বিক্রি এখন ৫ লাখ টাকায় উঠেছে।’ এ থেকে উত্তরণের উপায় জানতে চাইলে সুমন গাজী বলেন, ‘এ শিল্পের যেমন ধস দেখা যাচ্ছে, আবার এই শিল্পই ঘুরে দাঁড়ালে বিপ্লব ঘটে যেতে পারে। এর জন্য বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে অদূর ভবিষ্যতে ঘুরে দাঁড়াবে এই শিল্প। আগে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সিঙ্গাপুর ও দুবাই থেকে স্বর্ণালঙ্কার আমদানি করে বিক্রি করত, সেখানে এখন একটি বড় শিল্প গ্রুপ এই শিল্পের হাল ধরেছে। নেতৃত্ব দিচ্ছেন যেন এই শিল্পের হাত ধরেই দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই খাত হয়ে উঠতে পারে রেমিটেন্সের জন্য নতুন মাইলফলক।’ বিশ্ববাজারের তুলনায় বাংলাদেশের সোনার বাজার ছোট। 
গোল্ড রিফাইনারি যুগান্তকারী উদ্যোগ ॥ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বেসরকারিভাবে এই প্রথম সোনা পরিশোধনাগার স্থাপন হয়েছে। বিশ্ববাজারে আর কিছু দিন পর রপ্তানি হবে ‘ মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা সোনার বার ও অলঙ্কার। এক সময় দেশের চরম নিরাপত্তাহীন জুয়েলারি শিল্প এখন সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে। উদ্ভাবন আর প্রযুক্তির সমন্বয়ে এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় খাত হবে বলে আশা দ্বিতীয় প্রজন্মের জুয়েলারি উদ্যোক্তাদের।

এরই মধ্যে দেশে স্বর্ণ খাতে বিনিয়োগ করার মতো শত শত উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিদেশী উদ্যোক্তারাও। সোনা রিফাইনারির জন্য কারখানা তৈরি হচ্ছে দেশে। অপরিশোধিত ও আংশিক পরিশোধিত সোনা আমদানির পর তা কারখানায় পরিশোধনের মাধ্যমে সোনার বার ও কয়েন উৎপাদন করা হবে। সেগুলো রপ্তানির পাশাপাশি দেশে অলঙ্কার তৈরিতে ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি অলঙ্কার রপ্তানির সুযোগও তৈরি হবে। জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আধুনিকমানের একটি স্বর্ণ রিফাইনারি কারখানা স্থাপন করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ দরকার। বাংলাদেশে দুটি কোম্পানি এই রিফাইনারি কারখানা করতে চায়। একটি বসুন্ধরা গ্রুপ, আরেকটি ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড। এ জন্য কোম্পানি দুটির আবেদনের পর প্রাথমিক অনুমোদনও মিলেছে।’ দিলীপ কুমার আগরওয়ালা আরও বলেন, ‘রিফাইনারি কারখানা হলে কঙ্গো, মালিসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে অপরিশোধিত সোনা আমদানি করা যাবে। তবে পরিশোধিত সোনায় কী রকম শুল্ক ও কর আরোপ করা হবে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। বিদেশ থেকে অপরিশোধিত সোনা দেশে এনে পরিশোধনের বিষয়টি আমাদের জন্য একেবারেই নতুন।’
দরকার গোল্ড এক্সচেঞ্জ ও ব্যাংক ॥ জুয়েলারি ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বর্ণ শিল্পকে বিকশিত করতে হলে দরকার দেশে একটি গোল্ড ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ। এখানে দুটি ধাপ থাকবে। একটি হচ্ছে যে কোনো ব্যাংকে গিয়ে একজন গ্রাহক তার কাছে থাকা গোল্ড জমা রাখতে পারবেন। জমাকৃত গোল্ডের বিপরীতে লোন নিতে পারবেন। আবার বিক্রিও করতে পারবেন। লোন পরিশোধ করে জমাকৃত টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। ব্যাংকগুলোতে এটি ছিল যা বর্তমানে নিয়মটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এতে কিছু জুয়েলারির মালিক গোল্ড নিয়ে উচ্চ সুদে লোন দিচ্ছেন। সেই উচ্চ সুদের টাকা পরিশোধ করে গোল্ড ফেরত নিচ্ছেন। আবার অনেকে টাকা পরিশোধ করতে না পেরে গোল্ডই বিক্রি করে দিচ্ছেন। অন্যদিকে গোল্ড এক্সচেঞ্জ হচ্ছে অবিকল শেয়ার বাজারের মতো। একজন গ্রাহক চাইলে শেয়ার বাজার থেকে গোল্ডের কয়েন কিনতে পারবেন। আবার যখন ইচ্ছা তখন বিক্রিও করতে পারবেন। ধরা যাক কেউ একজন এক ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের কয়েন এক লাখ টাকা দিয়ে কিনলেন। কিছুদিন পর ওই এক ভরি কয়েনের দাম এক লাখ ৫ হাজার টাকা হলো। এতে তার ৫ হাজার টাকা লাভ হলো। এভাবে অনেক গ্রাহক এ ব্যবসায় আসতে পারবেন। তখন কেউ ইচ্ছে করলে (নতুন ব্যবসায়ী) জুয়েলারি ব্যবসা না করে শেয়ার বাজারে গোল্ডের ব্যবসা করবেন। এতে স্বর্ণশিল্প ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
গার্মেন্টস শিল্পকে ছাড়িয়ে যাবে জুয়েলারি খাত ॥ স্বর্ণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিশ্বে অলংকার উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বেলজিয়ামসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং ভারত, চীন অন্যতম। ২০১৯ সালে বিশ্বে মেশিন ও হাতে তৈরি সোনার অলঙ্কারের বাজার ছিল ২২ হাজার ৯৩০ কোটি মার্কিন ডলারের। ২০২৫ সালে আকার বেড়ে ২৯ হাজার ১৭০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। সুনির্দিষ্ট হিসাব না থাকলেও দেশে বছরে প্রায় ২০-৪০ মেট্রিক টন সোনার চাহিদা রয়েছে। তার মাত্র ১০ শতাংশ চাহিদা পুরনো অলংকার দিয়ে মেটানো হয়। বাকিটা ব্যাগজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে আসে। অবৈধভাবেও বিপুল সোনা আসে। তাই সোনার বাজার ও জুয়েলারি ব্যবসায় স্বচ্ছতা ফেরাতে ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে সোনা আমদানির লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সোনা রিফাইনারি কারখানা, গোল্ড নীতিমালা, স্বর্ণ শিল্পের বাস্তবায়ন এবং গোল্ড ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ সম্পন্ন হলে একটা সময় গার্মেন্টস শিল্পকে ছাড়িয়ে যাবে জুয়েলারি খাত। এখন যে পরিমাণ বৈদিশিক মুদ্রা আসে এর চেয়েও বেশি পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
আছে কিছু প্রতিবন্ধকতা ॥ বাংলাদেশে সোনার বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৪০ টন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নীতিমালা জারির পর ২০১৯-এর শুরু থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে সোনা আমদানি হয়েছে মাত্র ১৪৮ কেজির মতো। অর্থাৎ বাকি স্বর্ণ আসছে অবৈধভাবে। এই পরিমাণ বৈধভাবে সোনার চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্রে বড় বাধা কাঁচামালের উচ্চমূল্য, অতিরিক্ত উৎপাদন ব্যয়, শিল্প সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির উচ্চ আমদানি শুল্ক। বর্তমানে জুয়েলারি শিল্পের প্রায় সব ধরনের পণ্য ও যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ, যা স্থানীয় অন্যান্য শিল্পে আরোপিত শুল্কের চেয়ে অনেক বেশি। পাশাপাশি ৫ শতাংশ হারে উচ্চ ভ্যাট হার ও অতিরিক্ত উৎপাদন খরচের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দামের পার্থক্য হচ্ছে। এতে ক্রেতা হারাচ্ছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট ছোট জুয়েলারি ব্যবসায়ী। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বেশি হওয়ায় এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে চোরাচালান চক্র। তাই ক্রেতা সাধারণের একটা বিরাট অংশ পার্শ্ববর্তী দেশ ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে স্বর্ণ কিনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এদিকে স্বর্ণ নীতিমালাটি এত কঠিন করা হয়েছে যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে সাধারণ ব্যবসায়ীদের পক্ষে সোনা আমদানির অনুমতি নেওয়া খুবই কঠিন বিষয়। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যবসায়ী এলসি না খুলে ব্যাগেজ রুলে (লাগেজ পার্টি) সোনার বার আনান। এ ছাড়া স্বর্ণ নীতিমালা এবং  রফতানি নীতি আদেশ ২০২১-২৪-এর মধ্যেও কিছু বৈষম্য রয়েছে। একদিকে স্বর্ণ নীতিমালায় নীতি সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, অপরদিকে রপ্তানি নীতি আদেশে জুয়েলারি শিল্প সরকারের অগ্রাধিকার বিবেচনার ১৪ খাতের তালিকায় স্থান পায়নি। এটি স্থান পেয়েছে ১৮ শিল্প খাতের (বিশেষ উন্নয়নমূলক খাত) একটি হিসেবে। জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, অপরিশোধিত আকরিক সোনা আমদানির ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হলে স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ হবে। সরকার অধিক রাজস্ব আহরণ করতে পারবে।
উল্লেখ্য, প্রতিদিন সারা দেশের জল, স্থল ও আকাশ পথে কমপক্ষে প্রায় ২০০ কোটি টাকার অবৈধ সোনার অলঙ্কার ও বার চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে, যা এক বছর শেষে দাঁড়ায় প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বলছে, অবৈধ স্বর্ণের অলংকার ও বার দেশের জুয়েলারি শিল্পের জন্য বড় বাধা। শুল্ক কমিয়ে লাইসেন্সধারী ডিলারদের জন্য আমদানির সুযোগ আরও সহজ করে দেওয়ার দাবি সংগঠনটির। জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা এই খাতের চুরি-ডাকাতিকেও প্রতিবন্ধকতা হিসেবে মনে করেন। তারা বলছেন,  রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জুয়েলারি দোকানে চুরি ও প্রকাশ্যে ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে।

×