ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রতিবেদনে তথ্য

লোকসান-ঋণে চলছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:২৪, ১৯ জুন ২০২৪

লোকসান-ঋণে চলছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা

সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিপুল অঙ্কের অর্থ আটকে পড়েছে

সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিপুল অঙ্কের অর্থ আটকে পড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের ৩০টি সরকারি সংস্থার কাছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিকÑ এই পাঁচ ব্যাংকের বকেয়া ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা। গত এক বছরে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ব্যাংকগুলোর ঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণের সাড়ে ৯৬ শতাংশই রয়েছে সাতটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। এরই মধ্যে ১৮৪ কোটি টাকার ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। এ সময় সর্বোচ্চ ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। এরপরই আছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এবং চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৪ পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 
সমীক্ষায় আরও জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে কয়েকটি বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরে অন্তত ১২টি প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের লোকসানে রয়েছে, এর পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না। উল্টো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিবছরই লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। ফলে বছরের পর বছর ব্যাংকের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। সময়মতো ঋণ শোধ করতে না পারায় গুনতে হচ্ছে বাড়তি সুদ। এমনকি কারও কারও নাম উঠছে খেলাপির খাতায়।

অন্যদিকে যথাসময়ে ঋণের টাকা ফেরত না আসায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ৩০ সংস্থার কাছে ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। এক বছর আগেও যা ছিল প্রায় ৫৯ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। আর দুই বছর আগে যা ছিল ৪৮ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। এর মানে প্রতি বছরই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে সরকারি সংস্থাগুলোর ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়ছে। 
কোন প্রতিষ্ঠানের কত ঋণ ॥ ব্যাংকগুলোর কাছে সবচেয়ে বেশি ঋণ রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি)। গত ফেব্রুয়ারি শেষে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭০৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এক বছর আগে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ ছিল ১৩ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। ফলে এক বছরের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে। গত বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা।

ফলে এক বছরের ব্যবধানে বিপিসির ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ ঋণ রয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) কাছে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকগুলোর ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ৮ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। এ সময় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) কাছে ঋণ রয়েছে ৮ হাজার ২৬ কোটি, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছে ৭ হাজার ৪৪৭ কোটি, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে ৬ হাজার ৭০২ কোটি, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের প্রতিষ্ঠান বিবিসির কাছে ৪ হাজার ৪৮২ কোটি ও বিআইটিডব্লিউসির কাছে ৩৩৩ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে।

অন্য সরকারি সংস্থার মধ্যে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) কাছে ৬৭২ কোটি, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিডব্লিউডিবি) কাছে ৫৬২ কোটি, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) কাছে ২২৬ কোটি, বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (বিওজিএমসি) কাছে ১২৮ কোটি, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) কাছে ১২১ কোটি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে (সিপিএ) ১১০ কোটি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) কাছে ২৫ কোটি, ঢাকা ওয়াসার কাছে ৮১ এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) কাছে ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে। 
খেলাপি হয়ে পড়েছে ১৮৪ কোটি টাকা ॥ সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ রয়েছে বিজেএমসির কাছে ১৩১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিটিএমসির কাছে ২৪ কোটি ৯০ লাখ, বিএডিসির কাছে ২১ কোটি ২৭ লাখ ও বিটিবির ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকার ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। এর বাইরে বিসিআইসি, বিএসএফআইসি, বিআরটিসি ও টিসিবির সামান্য ঋণখেলাপি হয়েছে। 
লোকসানে ১২ প্রতিষ্ঠান ॥ চলতি অর্থবছর অন্তত ১২টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান লোকসানে রয়েছে। অর্থবছরের এ পর্যন্ত তাদের লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ৮ প্রতিষ্ঠান লোকসানে ছিল। ওই সময় পর্যন্ত তাদের লোকসানের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। এ সময় সর্বোচ্চ ৬ হাজার ১১৮ কোটি টাকা লোকসানে রয়েছে বিপিডিবি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৩৩ কোটি টাকা লোকসানে টিসিবি।

তৃতীয় সর্বোচ্চ বিআরইবি লোকসান ৪ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। আর বিসিআইসির লোকসান ১ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিএসএফআইসি ৫৭২ কোটি, বিজেএমসি ২২৫ কোটি, বিআরটিসি ১১৭ কোটি, আরডিএ ৯৭ কোটি, বিআইডব্লিউটিএ ৭২ কোটি, বিআইডব্লিউটিসি ৬০ কোটি টাকা, বিএফডিসি ২১ কোটি এবং বিটিএমসির ১৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।

×