ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিনারে বক্তাদের অভিমত

ব্যাংকের ওপর চাপ কমানোর তাগিদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৩২, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

ব্যাংকের ওপর চাপ কমানোর তাগিদ

ব্যাংকের ওপর চাপ কমানোর তাগিদ

দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। কারণ বেসরকারি খাত পুঁজিবাজার থেকে টাকা নেয় না। পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংক খাতের ওপর চাপ কমাতে হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান। মঙ্গলবার ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের প্রাক গোলটেবিল আলোচনা আযোজন করেছে।

রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের বেসরকারি খাত পুঁজিবাজার থেকে টাকা নেয়না কেন? বাজার নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। সব দায় ব্যাংক খাতের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক না। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের ওপর চাপ কমাতে হবে।

এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির চিফ অ্যাডভাইজর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এবং এফবিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য প্রদান করেন আইসিএমএবির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন আইসিএমএবির সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান কাউন্সিল সদস্য আরিফ খান।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, আগামী মে ও জুন মাসে সরকারের ব্যয় বাড়বে। এই ব্যয়ের চাপ পড়বে দেশের ব্যাংক খাতে। তবে ব্যাংকগুলোর জন্য এই চাপ নেওয়া খুব কঠিন হবে। ম্যাকরো ইকোনমিকসে তিনটি মূল সমস্যা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রথমত মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। এক্সচেঞ্জ মার্কেট স্থিতিশীল করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি বন্ড নিয়ে কাজ করা উচিত। তিনি বলেন, সুদের হার বৃদ্ধির কারণ সরকার সব খেয়ে ফেলেছে। টাকা ছাপানোর কারণেই মূল্যস্ফীতির বর্তমান এই অবস্থা। যার খেসারত আমরা এখন দিচ্ছি।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে আমরা সরকারকে ঋণ দেব না। আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তারল্য সুবিধা দিচ্ছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এতে কোনো কাজ হবে না, কারণ ব্যাংকগুলো সরকারকেই আবার ঋণ দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, টাকাকে আকর্ষণীয় করতে উচ্চ সুদহারের দিকে যেতে হবে। খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও এটি করা দরকার।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান বলেন, দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। কারণ বেসরকারি খাত পুঁজিবাজার থেকে টাকা নেয় না। পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংক খাতের ওপর চাপ কমাতে হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, বর্তমানে দেশে ৭৮ শতাংশ মানুষ বেকার। এ অবস্থায় সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি আত্মহত্যার শামিল। কারণ সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। যখন ৯ শতাংশ সুদহার ছিল তখনো মূল্যস্ফীতি ছিল। এটি সমাধানের জন্য মজুত ও সরবরাহ বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, রপ্তানি আয়ের ১২ ভাগ কেন বিদেশে থেকে যাচ্ছে, কেন বছরে ৭০০ কোটি ডলার পাচার হচ্ছে?  আমরা কেন ধরতে পারছি না। সরকার বাহাদুরকে বলব এটি নিয়ন্ত্রণ করুন।
সাবেক এ গভর্নর আরও বলেন, একক বিনিময় হার না হলে রিজার্ভ পতন থামবে না। মধ্যস্বত্বভোগীদের সুবিধার জন্য একাধিক বিনিময় হার রাখা হচ্ছে। একক বিনিময় হার হলে মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না সরাসরি রেমিটার বেনিফিট পাবে। এতে ডলার সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। তা ছাড়া বিদেশে থাকা রপ্তানি আয় সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের আশপাশে থাকতে পারে। কিন্তু এটি ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এটি সমাধান করতে হবে।

বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য বিদেশ থেকে ঋণ না নিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বিদেশী উৎস কিংবা ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতি পূরণ করলে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়। ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিলে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতিতে আঘাত হয় না। 
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ, গবেষক, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন পেশাজীবী চেম্বার সদস্যসহ বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা।

×