ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরখাস্ত এমডি, বহাল তবিয়তে ডিএমডি

ফিনিক্স ফাইন্যান্সে ঋণ অনিয়ম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ৮ এপ্রিল ২০২৪

ফিনিক্স ফাইন্যান্সে ঋণ অনিয়ম

ফিনিক্স ফাইন্যান্সে ঋণ অনিয়ম

ঋণ অনিয়ম ও আমানতকারীদের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এসএম ইন্তেখাব আলমকে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর বরখাস্ত করার নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র ১ দিন আগে বরখাস্ত করা হয় ইন্তেখাব আলমকে।

নির্দেশনায় ইন্তেখাব আলমের স্থলাভিষিক্ত হন ডিএমডি মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে জানতে চাওয়া চিঠির প্রেক্ষিতে ডিএমডি এবং প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চের প্রধান শিরিণ আখতারকে শোকজ লেটার ইস্যু করে ফিনিক্স ফাইন্যান্স।
ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মাল্টি প্রোডাক্ট ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দেয় (স্মারক নং ডিএফআইএমসি/১০৫৪/৫৫২০২৪-২৮৯) ফিনিক্স ফাইন্যান্সকে।

চিঠিতে ঋণ গ্রহীতা এস এ অয়েল রিফাইনারি লি., আমান সিমেন্ট মিলস লিমিটেড ইউনিট-২, মনোস্পুল পেপার ম্যানোফ্যাকচারিং কোম্পানি লি., মাহিন এন্টারপ্রাইজ, ম্যাক স্টিল ইন্ড্রাস্ট্রিজ এবং গ্রাহক নাজমা পারভিন, ফারহান মোশাররফের ঋণ অনিয়মের সঙ্গে কারা জড়িত তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে তা প্রমাণসহ বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে বলা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চিঠির প্রেক্ষিতে ডিএমডি এবং প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চের প্রধান শিরিণ আখতারকে শোকজ করেছে ফিনিক্স ফাইন্যান্স। প্রতিষ্ঠান ওই চিঠি দিতে সময় নিয়েছে প্রায় ১ মাস। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক ২৩ জানুয়ারি ইস্যু করলেও ফনিক্স ফাইন্যান্স ডিএমডিকে শোকজ লেটার দিয়েছে ১৮ ফেব্রুয়ারি (স্মারক নং চঋওখ/ঐছ/ঐজউ/২০২৪/০৩৩৫)। এর আগে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট (এফআইসিএসডি) পরিদর্শনে ঋণ প্রদানে নানান অনিয়ম খুঁজে পায়।
ঋণ অনিয়ম ও ওই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শোকজ লেটার সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমডি এবং প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চের প্রধান শিরিণ আখতার বলেন, আমাদের এখানে যেসমস্ত ফাইল আছে সেখানে কোনো অনিয়ম সেভাবে নাই। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের পার্টিকুলারলি বলে নাই, তারা কী ফাইন্ডিংস পেয়েছে। আমাদের ইন্টার্নাল কম্পায়েন্সকে বলেছে, এখানে কী অনিয়ম দেখতে। কিছু কিছু অনিয়ম হয়তো কোনো চিঠিতে ডেট দেওয়া নাই এ রকম কিছু আছে।

আমার ব্রাঞ্চে যেগুলো ছিল, সেগুলোতে সে ধরনের কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি, যেটার জন্য আমাদের শোকজ করতে হবে। কিছু ডকুমেন্টারি ল্যাপ্সেস থাকতে পারে, এটা ডিফাইন্ড ইস্যু, কিন্তু অনিয়ম বলতে কিছু এখানে নেই। ঋণ অনিয়ম বলতে যা বোঝায় সে রকম আমাদের প্রতিষ্ঠানে হয় নাই। এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। এখানে কোনো আর্থিক অনিয়ম হয়নি।
শিরিণ আখতার আরও দাবি করেন, আমার ব্রাঞ্চে যে তিনজন ঋণগ্রহীতা আছে- সেখানে কোনো আর্থিক অনিয়ম হয়নি, ফিনিক্স ফাইন্যান্সেও আর্থিক অনিয়ম হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক যে আমাদের শোকজ করল, তারা অডিটে কী পেয়েছে আমরা কিন্তু এখনো জানি না, তারা এ বিষয়ে বলেনি। যখন আমি ঋণ দিয়েছি, তখন সে খুব ভালো গ্রুপ, বিভিন্ন ব্যাংকও দিয়েছে, আমরাও দিয়েছে, সেই গ্রুপ এখন খারাপ হয়ে গেছে।

বিশ্বব্যাপী মন্দা যাচ্ছে, অনেক ক্লায়েন্টই এখন খারাপ করছে, আমাদের ভেতরের কোনো অনিয়মের কারণে যে ঋণগুলো ক্লাসিফাইড হয়েছে সেরকম না। প্রতিষ্ঠান ভালো ছিল ঋণ দেওয়া হয়েছে, এটার জন্য আমি দায়ী না।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠিয়ে বলেন যে, সংস্থাটির একটি পরিদর্শন প্রতিবেদনে ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের দ্বারা করা ঋণ অনিয়ম প্রকাশ পেয়েছে।

×