![চোরাই ‘নপ্লি’ বন্ধে উদ্যোগ চান হ্যাচারি মালিকরা চোরাই ‘নপ্লি’ বন্ধে উদ্যোগ চান হ্যাচারি মালিকরা](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2023January/art-2-2305271857.jpg)
দেশে চিংড়ি চাষের প্রসারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারত থেকে চোরাই পথে আসা ‘নপ্লি’
দেশে চিংড়ি চাষের প্রসারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারত থেকে চোরাই পথে আসা ‘নপ্লি’। দেশের সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন সময়ে ভারত থেকে চোরাই পথে ‘নপ্লি’ আসার প্রবণতা আরও বেড়ে গেছে। আর এই ভাইরাসযুক্ত নপ্লি আসা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ চায় রোগমুক্ত চিংড়ির পোনা (এসপিএফ) উৎপাদনকারী হ্যাচারির উদ্যোক্তারা। কার্যকর উদ্যোগ চেয়ে এরইমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে মৎস্য অধিদপ্তরে।
আর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চিংড়ি চাষে চোরাই নপ্লি (ছোট পোনা) বন্ধে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে নার্সিং পয়েন্টগুলোতে আরও বেশি হারে অভিযান পরিচালিত হবে। পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারির উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রচলিত মৎস্য ও হ্যাচারি আইনের সঠিক প্রয়োগ সম্ভব হলে দেশে চোরাই নপ্লি আসা যেমন বন্ধ হবে, তেমনি দেশে বাড়বে চিংড়ির উৎপাদন। আর রোগমুক্ত পোনার প্রসারেই ঘটবে চিংড়ি চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
সম্প্রতি চোরাই নপ্লি প্রতিরোধ ও রোগমুক্ত চিংড়ির পোনার প্রসারে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছে দেশের প্রথম এসপিএফ পোনা উৎপাদনকারী এমকেএ হ্যাচারি। মৎস্য অধিপ্তরের মহাপরিচালককে পাঠানো ওই চিঠিতে চোরাই নপ্লি আসা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে এমকেএ হ্যাচারির মালিক মঈন উদ্দিন আহমদ বলেন, ২০ মে হতে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের সমুদ্র থেকে মাছ ধরা নিষিদ্ধ।
অন্যবারের মতো এবারও এই নিষিদ্ধকালীন সময়ে চোরাইপথে অবৈধভাবে রোগযুক্ত নপ্লি আসছে। আর ওই রোগযুক্ত নপ্লি ব্যবহার করে বাংলাদেশে চিংড়ি চাষে রোগের বিস্তার ঘটছে। ভারতেও কিন্তু সমুদ্র থেকে মা চিংড়ি ধরা নিষিদ্ধ। অথচ অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার উদ্দেশ্যে নিষিদ্ধকালীন সময়ে রোগযুক্ত নপ্লি পাঠায় এবং পাঠাচ্ছে। যেহেতু সরকার চিংড়ি চাষে রোগমুক্ত চিংড়ির পোনার প্রসার চায় এবং সহায়তা করছে, তাই যে কোনো মূল্যে ভারত থেকে চোরাইপথে নপ্লি আসা বন্ধ করা উচিত।
এ বিষয়ে শ্রিম্প হ্যাচারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এসএইচএবি)’র মহাসচিব মো. নজীবুল ইসলাম বলেন, খুলনা-সাতক্ষীরায় নার্সিং পয়েন্ট আছে, তাদের হ্যাচিং নেই। তারা সাধারণত নপ্লি নেয় কক্সবাজার থেকে। তবে দেশে মাছ ধরার নিষিদ্ধকালীন সময়ে ভারত থেকে চোরাইপথে নপ্লি নিয়ে আসে। আমরা বিষয়টি মৎস্য অধিদপ্তরকে জানিয়ে আসছি। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করছি না। যে নপ্লিগুলো আসছে, তার সোর্স ঠিক নেই, কোন হ্যাচারি থেকে আসছে কারও জানা নেই। এতে চিংড়ি চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নিষিদ্ধকালীন সময়ে ভারত থেকে যে নপ্লিগুলো আসছে তাতে যদি কোনো ভাইরাস বা রোগবালাই থাকে, এবং ওই পোনা দিয়ে চিংড়ি চাষ হলে তাতে মড়ক দেখা দেবে এবং তা অন্য ঘেরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক বলেন, চোরাই নপ্লি আসা বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছে অধিদপ্তর। কোনোভাবেই এতে ছাড় দেওয়া হবে না। ভবিষ্যতে চিংড়ি চাষে রোগমুক্ত চিংড়ির পোনা (এফপিএফ) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগের উপ- পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অবৈধ পথে আসা চোরাই নপ্লি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে আমরা বিষয়টি তুলেছি। সমন্বয় করে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, এখনো নার্সিং পয়েন্টগুলোতে পুরোনো নপ্লি রয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে পুরোনো নপ্লি শেষ হলে আমরা নার্সিং পয়েন্টগুলোর সোর্স দেখবো, কোন হ্যাচারি থেকে আনা হয়েছে, ওই নপ্লির সোর্স কি সেই কাগজপত্র দেখা শুরু করবো। চোরাই নপ্লি প্রতিরোধে আমরা আমাদের ব্যবস্থা নেব।
এদিকে, দেশে চিংড়ির উৎপাদন বাড়াতে রোগমুক্ত চিংড়ির পোনার (এসপিএফ) প্রসারে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে মাত্র তিনটি হ্যাচারিতে রোগমুক্ত চিংড়ির পোনা উৎপাদন হলেও শীঘ্রই এ তালিকায় আরও নাম যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। দেশে নির্দিষ্ট রোগবালাইমুক্ত চিংড়ির পোনা বা স্পেসিফিক প্যাথোজেন ফ্রি (এসপিএফ) উৎপাদনে ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট’ এর অধীনে এসপিএফ হ্যাচারি ও নার্সারি তৈরির কার্যক্রম চলছে। প্রকল্পের অধীনে ৫টি সাধারণ হ্যাচারিকে এসপিএফ হ্যাচারিতে উন্নীত করা হচ্ছে। ৮টি সাধারণ নার্সারিকে এসপিএফ নার্সারিতে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় চলমান ওই প্রকল্পের অধীনে এসব হ্যাচারি ও নার্সারিকে সহয়তা দেওয়া হচ্ছে।