ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাস

২১ হাজার কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:০৫, ২৬ মার্চ ২০২৩

২১ হাজার কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ

কৃষিঋণ বিতরণ

চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জন করেছে ১২টি ব্যাংক। অপরদিকে ১৪টি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশও বিতরণ করতে পারেনি। লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ অর্জন করা ব্যাংকগুলো হলো- ব্যাংক আল-ফালাহ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলন, হাবিব ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এনএ, এইচএসবিসি এবং উরি ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ব্যাংক খাতে ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ব্যাংকগুলো ২১ হাজার ৬৬ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে রাষ্ট্র মালিকানার ব্যাংকগুলো ৮ হাজার ৬২৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা বা লক্ষ্যমাত্রার ৭৩ দশমিক ৪২ শতাংশ বিতরণ করেছে।

আর বিদেশী ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো ১২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা বা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬৪ দশমিক ৯২ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। দেশে প্রতিবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি কৃষিঋণ বিতরণ করে কিছু ব্যাংক। আবার কিছু ব্যাংক আছে, যারা প্রতিবছরই ব্যর্থ হয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে। তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কৃষিঋণ বিতরণের স্থিতি ৫১ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ২০ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ কৃষিঋণ আদায়ের হার প্রায় ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ ব্যাংকও সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। ব্যাংকগুলোকে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তা প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা আছে, সেসব অঞ্চলে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াতে প্রচার চালানো হয়েছে।
সম্প্রতি কৃষিখাতে ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে তা অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণের জন্য অ্যাগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট কমন ফান্ড (বিবিএডিসিএফ) গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই নীতিমালা অনুযায়ী, কৃষি ও পল্লী ঋণ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিতরণ করতে না পারলে অবশিষ্ট অর্থ এই ফান্ডে জমা রাখতে হবে। কৃষি খাতে অধিক ঋণ দিতে সক্ষম ব্যাংকগুলোকে এই তহবিল থেকে অর্থ দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, আট মাসে শস্য খাতে বিতরণ হয়েছে ১০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। সেচ সরঞ্জাম কিনতে দেওয়া হয়েছে ১৭৯ কোটি, কৃষি সরঞ্জাম কিনতে ১৪৯ কোটি, গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগির খামারে ৪ হাজার ৪৩৯ কোটি, মৎস্য খাতে ২ হাজার ৫৭৭ কোটি, শস্য গুদামজাত এবং বিপণনে ১০৪ কোটি, দারিদ্র্য দূরীকরণ খাতে ১ হাজার ২৪৭ কোটি এবং অন্যান্য খাতে ২ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। সে সময়ে ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ১০২ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছিল। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম আট মাসে লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ দশমিক ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণ করা এসব ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১১ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা।

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ১৮ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা এবং বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৭৭১ কোটি টাকা। এ ছাড়াও গত ২১ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর জারি করা ‘দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল গঠন ও পরিচালনার নীতিমালা’ শীর্ষক সার্কুলারে ‘গরু মোটাতাজাকরণ’ খাত অন্তর্ভুক্ত করে নতুন সার্কুলার জারি করা হয়। 
আগের সার্কুলারে বলা হয়েছিল, ধান চাষ, মাছ চাষ, শাকসবজি, ফল ও ফুল চাষ, প্রাণিসম্পদ খাতের আওতায় পোল্ট্রি ও দুগ্ধ উৎপাদন খাতে এই তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ করা যাবে। গত মঙ্গলবার জারি করা নতুন সার্কুলারে গরু মোটাতাজাকরণ খাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১৭ নভেম্বর জারি করা সার্কুলারে এই তহবিলের নীতিমালায় বলা হয়েছিল, দেশের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন কৃষকরা। তহবিলটির নাম ‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি খাতের জন্য পুনঃ অর্থায়ন স্কিম’। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে গঠিত ৫ হাজার কোটি টাকার এই তহবিলের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রয়োজনে তহবিলের অর্থের পরিমাণ ও মেয়াদ বাড়ানো হবে।

×