ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইএফআরএস মানলে ব্যাংকের সম্পদ ৪০ শতাংশ কমে যাবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:১০, ২১ মার্চ ২০২৩

আইএফআরএস মানলে ব্যাংকের সম্পদ ৪০ শতাংশ কমে যাবে

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক হিসাব মান বা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস)

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক হিসাব মান বা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) মানলে ব্যাংকের সম্পদ ৪০ শতাংশ অবলোপন করতে হবে বা কমে যাবে বলে জানিয়েছেন ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মো. হামিদ উল্লাহ ভুঁইয়া।
তিনি বলেছেন, এ মুহূর্তে আইএফআরএস-এর ৯ ধারা বাস্তবায়ন করা হলে ব্যাংকের সম্পদ ৪০ শতাংশ রিটার্ন অব (অবলোপন) করতে হবে। আমরা চাই এটি বাস্তবায়ন করা হোক, তাহলে ব্যাংকের প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক মেনে নিচ্ছে না। 
সোমবার ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর পল্টনে সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক আবু আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফোরামের সভাপতি জিয়াউর রহমান।
এফআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা চাই সব প্রতিষ্ঠান পূর্ণ আইএফআরএস ফলো করুক। বাংলাদেশে যদি এ মুহূর্তে আইএফআরএস-৯ বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে ব্যাংকের ৪০ শতাংশ সম্পদ রিটার্ন অব করে দিতে হবে। দ্যাট উইল রিফ্লেক্ট দ্য কারেক্ট ফিগার অব দ্য ব্যাংক।
তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ বছরের পর বছর টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ টাকা কী কখনো পাওয়া যাবে? যদি আদায় করতে সক্ষম হয় তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে আমরা যেটা দেখি খেলাপি ঋণ আদায় করা যায় না। বরং দুই শতাংশ জমা দিয়ে এগুলোকে আবার নিয়মিত ঋণে কনভার্ট করা হয়। ‘এ দুই শতাংশ দিয়ে তো ইন্টারেস্ট (সুদ আয়) আসে না।

ইন্টারেস্ট তার থেকে অনেক বেশি। সুতরাং ইন্টারেস্ট পাচ্ছেন না, টাকাও পাচ্ছেন না, কিন্তু রি-সিডিউল করে রেগুলার করছেন। সে তখন আবার আর এক ব্যাংকে গিয়ে লোন নিচ্ছে’ বলেন হামিদ উল্লাহ ভুঁইয়া।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আইএফআরএস-৯ বাস্তবায়ন করে দেওয়া হোক। ব্যাংকের সব ফিগার রিটার্ন অব করে ব্যাংক একটি সেটেল পজিশনে আসুক। কিন্তু সম্ভব না। এটা বাংলাদেশ ব্যাংক কখনোই মেনে নিচ্ছে না। আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি। আগামী ৩০ মে’র মধ্যে অডিটরদের এফআরসিতে নিবন্ধিত হতে হবে। যদি কোনো অডিটর নিবন্ধিত না হয়, তাহলে তিনি তালিকাভুক্ত কোম্পানিসহ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান অডিট করতে পারবেন না।
এফআরসি চেয়ারম্যান বলেন, কোনো কোম্পানির রাজস্ব ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি হলে, সেই কোম্পানি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আছে ৩ হাজার ৪০০-এর মতো। এর বাইরে আড়াই হাজারের মতো ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া প্রতিষ্ঠান আছে। এগুলোও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে। সব মিলিয়ে সাড়ে ৫ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট হিসেবে বিবেচিত হবে। কোনো অডিটর এফআরসিতে তালিকাভুক্ত না হলে এসব প্রতিষ্ঠান অডিট করতে পারবে না।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি তদারকিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। আর্থিক বিধিমালা চূড়ান্ত হলে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে জালিয়াতি অনেকটাই কমে আসবে। কেউ অনিয়মের আশ্রয় নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হামিদ উল্লাহ ভুঁইয়া বলেন, জীবন বিমা কোম্পানিগুলো কখনো প্রফিট অ্যান্ড লস অ্যাকাউন্ট করে না। তারা একটা অ্যাকাউন্ট করে, সেটি হলো রেভিনিউ অ্যাকাউন্ট। কিন্তু আইএএস-১ এ স্পষ্ট বলা আছে, প্রফিট অ্যান্ড লস অ্যাকাউন্ট করতে হবে। আপনার কোম্পানির নেচার যাই হোক না কেন। কিন্তু এরা এটা করে না। এমনকি আমরা চিঠি দেই, তার রেসপন্সও করে না। অন্যান্য রেগুলেটর কিছুটা হলেও রেসপন্স করে। এ একটা সেক্টর, যেটা থেকে আমরা আজ পর্যন্ত কোনো রেসপন্স পাইনি। তিনি বলেন, প্রাইভেট কোম্পানিগুলো ব্যাংক থেকে সহজেই ঋণ পায়।

কিন্তু ক্যাপিটাল মার্কেটের হাজারো রেগুলেশন্স এবং ডকুমেন্টেশনের কারণে কোম্পানিগুলো সেখান থেকে অর্থ সংগ্রহে আগ্রহী নয়। এ সমস্যাগুলো এখনো আমাদের রয়ে গেছে। প্রাইভেট সেক্টরের বড় বড় কোম্পানিগুলোকে ক্যাপিটাল মার্কেটে আনা আমাদের জন্য অনেক জরুরি। তাহলে আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটের উন্নতি হবে। তিনি আরও বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটে আসার পরিপ্রেক্ষিতটাও চিন্তা করতে হবে। যখন একটি বড় কোম্পানি ক্যাপিটাল মার্কেটে আসবে, তখন তাদের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ ওনারশিপ থাকা দরকার। ‘ইটস এ ডিস্টরশন অব ক্যাপিটাল মার্কেট।’

×