ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

নেপথ্যে স্থানীয় কাউন্সিলর

ইজারা ছাড়াই বালুর মাঠে হাট

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৮ আগস্ট ২০১৭

ইজারা ছাড়াই বালুর মাঠে হাট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজধানীর অস্থায়ী একটি পশুর হাট গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়নসংলগ্ন বালুর মাঠ। প্রতি কোরবানির ঈদের সময় এ মাঠে পশুর হাট বসে। হাট বসার কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগেই গরু-ছাগলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয় বালুর মাঠ। তবে এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। ঈদের আর বাকি মাত্র পাঁচ দিন। অথচ এখনও হাট বসার জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠেনি মাঠটি। স্থানীয় প্রভাবশালীদের দ্বন্দ্ব এবং হাট ইজারার টেন্ডারে কাক্সিক্ষত দাম না পাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। অবশ্য স্থানীয় কাউন্সিলর হাজী সুলতান মিয়ার নির্দেশে রবিবার সকাল থেকে ক্রীড়া সংগঠন ‘লিটল ফ্রেন্ডস’র তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছে বালুর মাঠে হাটের প্রস্তুতি। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন থেকে এখনও এ অস্থায়ী পশুর হাটটি কাউকে নির্দিষ্টভাবে ইজারা দেয়া হয়নি। হাটের প্রস্তুতি কার্যক্রমের তদারকিতে থাকা একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বালুর মাঠের হাটটি কার তত্ত্বাবধানে থাকবে তা নিয়ে একটু ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছিল। ব্রাদার্স ইউনিয়নসহ স্থানীয় প্রভাবশালী একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা হাটটি এককভাবে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করেন। এ পরিস্থিতিতে শনিবার রাতে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন স্থানীয় কাউন্সিলর হাজী সুলতান মিয়া। ওই বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় এবার হাটের কার্যক্রম সম্মিলিতভাবে চালানো হবে। তবে তত্ত্বাবধানে থাকবে ক্রীড়া সংগঠন ‘লিটল ফ্রেন্ডস’। এ বিষয়ে কাউন্সিলর হাজী সুলতান মিয়া বলেন, ‘এবার বালুর মাঠের হাটের তত্ত্বাবধান ব্রাদার্স ইউনিয়নের কাছে থাকছে না। এবার তত্ত্বাবধান করবে ‘লিটল ফ্রেন্ডস’। আর আমরা সবাই হাট যাতে সুষ্ঠুভাবে চলে তার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা করব। হাট নিয়ে এখন আর কোন সমস্যা নেই।’ শনিবার রাতের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শনিবার রাতে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বিষয়টি ঠিক তেমন নয়। আমরা বরাবরই সম্মিলিতভাবে হাট পরিচালনা করি। এবারও তাই করা হবে। কোন ঝমেলা হবে না।’ সিটি কর্পোরেশনের একটি সূত্রে জানা গেছে, গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়নসংলগ্ন বালুর মাঠের হাট ইজারার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হলে সৈয়দ মাসুম আলী সর্বোচ্চ দর দেন। প্রথমে তিনি হাটের জন্য দর দেন ৬২ লাখ টাকা। পরেরবার ২০ হাজার টাকা বাড়িয়ে দেন। কিন্তু হাটটির সরকারী মূল্য এক কোটি চার লাখ টাকার ওপরে। ফলে টেন্ডারে কাক্সিক্ষত দর না পাওয়ায় হাটটি ইজারা দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চাওয়া হলেও তা এখনও পাওয়া যায়নি। এদিকে রবিবার ব্রাদার্স ইউনিয়নসংলগ্ন বালুর মাঠ অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, অর্ধশত কর্মী বাঁশের খুঁটি পুঁতে মাঠটি পশুর হাটের জন্য প্রস্তুত করছেন। পাশেই একটি গলির মধ্যে পশু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে ইতোমধ্যে বেশকিছু গরু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। বালুর মাঠটিকে পশুর হাটে রূপান্তরে ব্যস্ত মোঃ আলম নামের এক কর্মী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব হাটের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে। আমাদের বলা হয়েছে কাল থেকে হাটে পশু উঠবে। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি, তবে কালকের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না।’ হাট প্রস্তুতির কার্যক্রম তত্ত্বাবধানে থাকা কাউন্সিলরের এক কর্মী জানান, সুলতান ভাইকে প্রধান করে হাটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুরোদমে হাট প্রস্তুত করার কাজ চলছে। কালকের মধ্যেই প্রস্তুত হয়ে যাবে এবং গরু উঠবে। চুয়াডাঙ্গা থেকে হাটটিতে গুরু নিয়ে এসেছেন মোঃ জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকটি গরু নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে সব থেকে বড় গরুটির দাম পাঁচ লাখ টাকা পাব বলে আশা করছি। এ গরুটি তিন বছর ধরে লালন-পালন করেছি। এখন এই গলির মধ্যে গরু রাখতে বলা হয়েছে। কাল থেকে মেইন হাটে গরু তোলা যাবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’ সিটি কর্পোরেশন থেকে বালুর মাঠ কাউকে ইজারা না দেয়া হলেও কিভাবে হাট বসছে- জানতে চাইলে কাউন্সিলর হাজী সুলতান মিয়া বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে এখনও কোন অনুমোদন পাওয়া যায়নি এটা ঠিক। তবে এখানে হাট বসাতে কোন সমস্যা হবে না। আমরা সিটি কর্পোরেশন থেকে অনুমোদন পেয়ে যাব।’
×